মানি লন্ডারিং মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত হওয়ার পর পুরান ঢাকার আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে। এই ঘটনা শুধু দেশের মানুষ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ খেয়াল করছে।
আজ রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘পক্ষে লিখুন, বিপক্ষে লিখুন, কোনো অসুবিধা নেই। আজকের ঘটনাটি ইতিহাসের অংশ।’
এই ঘটনার জন্য জন্য আমরা কি গর্ব বোধ করব, নাকি অপরাধ বোধ করব—সে প্রশ্ন তোলেন গ্রামীণব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এ রকম একটা সন্তানকে আমরা জন্ম দিলাম কী করে? অথবা এমন একটা সন্তানকে এমন অপরাধী কেন করলাম? এগুলোর জবাব থেকে আমাদের কোনো মুক্তি নেই।’
বর্তমানে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানি লন্ডারিং মামলায় দুপুরে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটা এখানে সীমাবদ্ধ নয়। দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সারা দুনিয়ার মানুষ লক্ষ করছেন এই বিচারে কী হয়? আমরা যা যা করছি, তারা সবিস্তার তা দেখছেন।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রতি এই দৃশ্যের ছবি তুলে রাখার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন, বটতলা…এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এই ঘটনা পত্রপত্রিকায় আসবে। কিন্তু এই ঘটনা যুগ যুগ ধরেই নানা বইতে প্রকাশিত হবে।’
এটা ঐতিহাসিক ঘটনা কেন, তার ব্যাখ্যায় ড. ইউনূস বলেন, ‘একজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। কেবল আমি একা নই, আমার সঙ্গে আরও সাতজনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছে।’
গরিব মানুষের জন্য সারা জীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন দাবি করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মামলায় অভিযুক্ত নিজের সহকর্মীদের নিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ এখানে চাকরি করতে আসেননি। তাঁদের জীবন দানের জন্য এখানে এসেছেন। তাঁরাও অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি এবং মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত।’
আইন মানুষের শুভকামনা করে রচনা করা হয় উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আইন মানুষের মনে স্বস্তি আনে, শান্তি আনে। আবার আইন মানুষের মধ্যে আশঙ্কা আনে। শঙ্কা জাগায়…ভয়ংকর শঙ্কা জাগায়। আইনকে আমরা কোন দিকে নিয়ে যাব?’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়বে। নোবেল পুরস্কারের কথা ভুলতে পারবে না। ওনাকে অর্থ আত্মসাতের দায়ে, মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে, ওনাকে জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা কনফিউজড (বিভ্রান্ত) হয়ে যাবে। এটা কি মুখোশ, নাকি আসল মানুষ? উনি একা না তাঁর আবার সাঙ্গপাঙ্গ আছে?’
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। এ ছাড়া শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ১ জানুয়ারি ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন শ্রম আদালত। সেই সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিল ২৮ জানুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।
আজ বেলা ১১টার দিকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় কাকরাইলে অবস্থিত শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন নেন ড. ইউনূস। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি পুরান ঢাকায় অবস্থিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসেন।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: মার্চ ০৩ ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,