Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

নেতাজীকে নিয়ে শঙ্করীপ্রসাদ বসুর লেখা

Share on Facebook

অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু অসংখ্য লেখা লিখেছেন। শুধু নেতাজীর উপর তাঁর লেখাও যদি ধরা হয়, তবে তাও নেহাত কম হবে না। নেতাজীকে নিয়ে লেখা তাঁর বইগুলো ছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সেই ষাটের দশক থেকে বা হয়তো তারও আগে থেকে তিনি যে সব প্রবন্ধাদি লিখে গেছেন—তার সবগুলো কেন, অর্ধেকও যে পড়েছি তেমন দাবী করতে পারিনা। খুব দুঃখের কথা যে সেসব লেখাগুলো আজ আর সহজলভ্য নয়।

তাঁর প্রথম দিকের ক্রিকেট সংক্রান্ত লেখাগুলো বাদ দিলে, বাংলা সাহিত্যের উপর তাঁর কিছু লেখা বা তাঁর অমানুষিক পরিশ্রমের ফসলস্বরূপ শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-ভগিনী নিবেদিতার উপর লিখিত অজস্র ও সুবিশাল গ্রন্থরাজি সবই তথ্যনিষ্ঠ, ক্ষুরধার পাণ্ডিত্যের পরিচয়বাহী, সুগভীর ও বিশুদ্ধ গবেষণাধর্মী লেখা, যার প্রতিটা perfection এর চূড়ান্ত। তাঁর দেওয়া তথ্যে কেউ সহজে কোন ভুল ধরতে পারবেন না। এত পরিশ্রম, এত কাজ, এত আত্মনিবেদন আর এত আত্মবলিদান! ভাবতেও অবাক লাগে যে এত সব গভীর গবেষণাভিত্তিক লেখার পরও তাঁর হৃদয়ে, তাঁর অন্তরে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুও সদাজাগ্রত ছিলেন এবং নেতাজীর প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ তিনি নেতাজীর উপরও কয়েকটা গ্রন্থ লিখে গেছেন – যার প্রতিটা অবশ্যই একই রকম গভীর গবেষণামূলক। সেই মহামূল্যবান গ্রন্থগুলো নেতাজী-অনুরাগীদের জন্য আকরগ্রন্থ হয়ে আছে এবং থাকবে, যেগুলো অধ্যয়ন করে আমরা যুগ যুগ ধরে নেতাজী সম্বন্ধে আমাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে যেতে পারবো।

নেতাজীর উপর অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুর প্রথম বই ‘সুভাষচন্দ্র ও ন্যাশন্যাল প্লানিং’ ১৯৭০ সালে জয়শ্রী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই বইয়ের মুখবন্ধ থেকেই জানতে পারা যায় যে সেই প্রকাশনার মাসিক ‘জয়শ্রী’ পত্রিকাতে ১৯৬৭-র জানুয়ারিতে, অর্থাৎ ‘নেতাজী-সংখ্যায়’, এ বিষয়ে অধ্যাপক বসুর একটা দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেই প্রবন্ধ পাঠের সৌভাগ্য না হলেও এ সম্বন্ধে অধ্যাপক বসুর একটা রচনা ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে “জয়শ্রী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু জন্মশতবার্ষিকী গ্রন্থের” ১২৫ থেকে ১৩৯ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। যদিও সেই রচনাটার শীর্ষকও “সুভাষচন্দ্র ও ন্যাশন্যাল প্লানিং” এবং প্রবন্ধের শেষে লেখা রয়েছে “এই প্রবন্ধটি লেখকের ‘সুভাষচন্দ্র ও ন্যাশন্যাল প্লানিং’ গ্রন্থের অংশবিশেষ”, কিন্তু কিছু কিছু মিল থাকলেও দু’টো আলাদা রচনা। এটা কি সেই ১৯৬৭ জানুয়ারির জয়শ্রী পত্রিকায় প্রকাশিত সেই প্রবন্ধ? তা জানতে পারা গেল না।

যাইহোক, সুভাষচন্দ্রের উপর লেখা এই প্রথম বইতেই কিন্তু অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু স্পষ্ট করে দিয়েছেন দেশনায়ক সম্পর্কে তাঁর মনোভাব। তিনি লিখেছেন, “এই গ্রন্থে আমি দেখাতে চেয়েছি সুভাষচন্দ্রের জীবনের নেতাজী-পর্ব যত বড়ই হোক – হয়তো সর্বোচ্চ শিখর – তার পূর্বেই তিনি যে চিন্তা ও কর্মশক্তি দেখিয়েছিলেন, তার দ্বারাই ভারত-ইতিহাসে তাঁর স্থান সুনির্ধারিত। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ১৯৪০ পর্যন্ত সময়ে সকল কংগ্রেস-নেতার মধ্যে সুভাষচন্দ্রই সর্বাধিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন; সেই সঙ্গে অনুরূপ কর্মপ্রতিভাসসম্পন্ন পুরুষ। …নিজস্বতার জন্য গান্ধীবাদী ও মার্ক্সবাদী কারো কাছেই তিনি প্রিয় হননি কারণ সুভাষচন্দ্র কোন কিছুর দাসত্ব করবার জন্য জন্মগ্রহণ করেননি।”

আর সেই জয়শ্রী জন্মশতবার্ষিকী গ্রন্থের প্রবন্ধটা তিনি শেষ করেছেন এভাবে যাতে আমরা অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুর সাথে ১০০ শতাংশ একমত। অধ্যাপক বসু লিখেছেন, “পণ্ডিতজী, (অর্থাৎ জওহরলাল নেহেরু), প্লানিং কমিশনের উদ্দেশ্য ও কার্যকলাপ সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন তাঁর ‘ডিসকভারি অব্ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে। কিন্তু ঐ অংশে সুভাষচন্দ্রের নামোল্লেখ নেই।”

তিনি আরও লিখেছেন, “পণ্ডিতজী যখন স্বাধীন ভারতের নায়ক, তখনও পরিকল্পনা-বিষয়ক নানা পুস্তিকা বেরিয়েছে। তাতেও সুভাষচন্দ্র অনুল্লিখিত।

“ইতিহাসের বিচিত্র বিধান। প্লানিং কমিটির ব্যাপারে যাঁকে প্রচুরতম ক্ষতি স্বীকার করতে হল, প্লানিং কমিটির ইতিবৃত্ত তাঁকেই ভুলে গেল। সুভাষচন্দ্র এতে কিছু মনে করেন না, কারণ তিনি তাঁর একটি আদর্শের মধ্যে সান্ত্বনার অফুরন্ত উৎস আবিষ্কার করেছেন—‘ব্যক্তিকে মরতে হবে, যাতে করে জাতি বাঁচে, আজ আমাকে মরতে হবে, যাতে ভারত বাঁচতে পারে, স্বাধীন হতে পারে, অর্জন করতে পারে মহা গৌরব।”

অধ্যাপক বসু তারপর লিখছেন, “আমরা যারা সুভাষচন্দ্র নই, সুভাষচন্দ্র থেকে বহুদূরে আছি – সেই আমরা ঐ মহাবাক্যে সান্ত্বনা পাই না। শুনেছি ইতিহাস সত্য কথা বলে, তবে সে সত্যকে দেখে যাবার সৌভাগ্য অধিকাংশ মানুষের ঘটে না।”

কি সুন্দর পরিমার্জিত ভাষায় তিনি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি ঈর্ষাকাতর তথাকথিত বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মীর মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন এই লেখায়, তা আমাদের তাঁর বলিষ্ঠ লেখনীর ভক্ত করে ফেলে নিমেষে।

১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে অধ্যাপক বসু ধারাবাহিকভাবে সাপ্তাহিক বসুমতীতে ‘রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষচন্দ্র’ নামে একটা লেখা শুরু করেছিলেন যার উদ্দেশ্য ছিল কবিগুরু আর কনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা সুভাষচন্দ্রের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে পাঠকদের অবহিত করা যা অবশ্যই তৎকালীন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পটভূমির উপর ভিত্তি করে লেখা হচ্ছিল। অধ্যাপক বসুই আমাদের জানিয়েছেন যে ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারিতে ৫০টির মত সংখ্যায় প্রকাশিত হবার পর লেখাটা উল্লিখিত নাম ও বিষয় ছাপিয়ে যায় তখনকার অন্যান্য রাজনৈতিক চরিত্র কাহিনীতে ঢুকে পড়ার জন্য। তাছাড়া কবি ও রাজনৈতিক—এই আপাত বিষম চরিত্রের সম্পর্কের উপর বড় ধরণের লেখা সম্ভব ছিল না বলে সেই লেখাটার নামকরণ পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেসময় অধ্যাপক বসুকে কথাসাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় পরামর্শ দিয়েছিলেন নামটা ‘সুভাষচন্দ্র ও সমকালীন ভারতবর্ষ’ করে দিতে। এটা অধ্যাপক বসুর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ায় তিনি সেই নাম পরিবর্তন করে সাপ্তাহিক বসুমতীতে আরও ৮০ সংখ্যায় ১৯৭০-এর অক্টোবর পর্যন্ত লেখাটা চালিয়ে যান। কিন্তু তারপর সাপ্তাহিক বসুমতী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লেখাটারও সেখানে ইতি হয়।

স্বভাবতই লেখাটা পাঠকমহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। বিশেষত এরই মধ্যে নিবেদিতা-বিবেকানন্দ-সুভাষচন্দ্র ও ন্যাশন্যাল প্লানিংয়ের উপর তাঁর বই ছাপা হয়ে গেছে। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত শুভাকাঙ্ক্ষীদের তাগিদ ও দাবীর কাছে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হল যখন সুভাষচন্দ্রের জন্মশতবার্ষিকী কাছে এসে পড়ল। অধ্যাপক বসু তাঁর বইয়ের ভূমিকায় স্বীকার করে গেছেন যে সুভাষচন্দ্রের ভারতীয় জীবনকথা না লিখলে তাঁর পরিকল্পনার বৃত্তও সম্পূর্ণ হোত না। আর তিনি এও লিখে গেছেন যে, “একালের প্রফেট স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের রাজনৈতিক জীবনে বিশেষভাবে যে দুই বজ্রধর বাহুতে প্রসারিত ছিলেন, তাঁদের একজন নিবেদিতা, অন্যজন সুভাষচন্দ্র।” তিনি এও আমাদের জানিয়েছেন যে এই দুজনার বহির্জীবন ও অন্তৰ্জীবনের কথা লেখার কল্পনা তাঁর অনেকদিনের ছিল। ইতিমধ্যে ১৯৯৬-এর আগেই তিনি ভগিনী নিবেদিতার কথা লিখে ফেলেছেন চার খণ্ডে। কিন্তু এদিকে সুভাষচন্দ্রের প্রসঙ্গে লিখেছেন শুধু একটা বই।

যাইহোক, যখন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে লিখতে বসলেন, তখন দেখলেন যে সাপ্তাহিক বসুমতীর লেখাগুলো পুরো ঢেলে সাজাতে হবে এবং বহুলাংশে একদম নতুন করে লিখতে হবে। আগে তিনি কবিগুরু আর সুভাষচন্দ্রকে কেন্দ্র করে লিখেছিলেন। এর মধ্যে সুভাষচন্দ্রের জীবনের দু’জন প্রভাব বিস্তারকারী পুরুষ—যারা তাঁর মনোগঠনে ভিত্তিস্বরূপ কাজ করেছিলেন—অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দ ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস – তাঁদের দুই চরিত্রকে লেখায় সমীচীন জায়গা দিতে হবে। কাজেই রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে বেশ কিছু অংশ সামঞ্জস্য রক্ষার খাতিরে বাদ দিতে হল। তারপর হল নাম নিয়ে বিভ্রান্তি। এই বই প্রকাশের দশ বছর আগেই ১৯৮৭-সালে তাঁর সেই সুবিশাল এবং সুবিখ্যাত স্বামী বিবেকানন্দের উপর গবেষণাগ্রন্থ “বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ” গ্রন্থরাশির শেষ খণ্ড বেরিয়ে গেছে। তিনি লিখেছেন ‘সুভাষচন্দ্র ও সমকালীন ভারতবর্ষ’ নাম দিলে দুই বইয়ের আকার ও প্রকার নিয়ে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে। এই আশঙ্কায় অল্প বদল করে নাম দিলেন “সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র”। সেই প্রথম খণ্ড বইটা সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম থেকে প্রায় ১৯২৮ বা কলকাতা কংগ্রেসের সময় পর্যন্ত একটা মহাকোষ, একটা আকর গ্রন্থ হয়ে থেকে গেল। এই বইটাই সুভাষচন্দ্র বসুর উপর আমার ঐকান্তিকভাবে পঠিত বইগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম পুস্তক। আজও এটা আমার কাছে অতি প্রয়োজনীয় এবং প্রিয় বই।

ছোটবেলা অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ক্রিকেটের বই পড়েছি, তখন লেখকের নাম মনে রাখতে পারিনি। প্রবাসে থাকলেও পরে চাকুরি কালে ভগিনী নিবেদিতা আর স্বামী বিবেকানন্দের বইগুলোর সুখ্যাতি শুনে সেগুলোর লেখকের নাম জানা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি আমার শিক্ষক, আমার দ্রোণাচার্য হয়ে গেলেন নিমেষে যেদিন ‘সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র’ বইটা প্রথম হাতে পেলাম ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে। তারপর বইটার দ্বিতীয় খণ্ডের জন্য পুরো কলেজ-স্ট্রীটে অনেক খুঁজেছি নিজে, অনেক আত্মীয়-বন্ধুকে উত্যক্ত করেছি কয়েক বছর। শেষ পর্যন্ত বইটা আমি পাই ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮তে।

সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র গ্রন্থের দ্বিতীয় বা শেষ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে। অধ্যাপক বসু সেই বইয়ের ভূমিকায় আমাদের জানিয়েছেন যে ‘সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র’ গ্রন্থে তিনি সুভাষচন্দ্রকে তিন দিক থেকে দেখবার প্রয়াস করেছেন; যেমন রাজনৈতিক সুভাষচন্দ্র, মনীষী সুভাষচন্দ্র এবং আধ্যাত্মিক সুভাষচন্দ্র। তিনি প্রথম খণ্ডের মত এই দ্বিতীয় খণ্ডেও দেখিয়েছেন যে সুভাষচন্দ্র তাঁর সহযোগী রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে কি পরিমাণ বাধা এবং আঘাত পেয়েছিলেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনে। এর প্রধান কারণ তিনি অনুগত গান্ধীবাদী ছিলেন না, সে সময় যেটা ছিল ঘোরতর অপরাধ। তিনি শুধু চরকা আর অহিংসায় বাঁধা থাকেননি; গোপনে যোগাযোগ রেখেছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে এবং কিছু বৈদেশিক শক্তির সঙ্গেও। তাছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি কৃষক-শ্রমিক-ও-যুবকদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছেন এবং বার বার পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী তুলেছেন। স্বভাবতই এসবের পরিণাম কল্পনা করে সুবিধাবাদী, লোক দেখান ঠিকা-রাজনীতি করা এবং গান্ধীবাদের পূজারীরা সন্ত্রস্ত হয়েছেন। তাদের তো বাধা দেবারই কথা যখন তারা কংগ্রেসের একনায়ক ও স্বৈরশাসকের কাছ থেকে এজন্য নীরব সমর্থন লাভ করেন।

আবার এই বইতে সুভাষচন্দ্রের মননশীলতা, তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, তাঁর প্রগতিশীলতা, তাঁর সমস্যা অনুধাবনের ক্ষমতা, আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান, ইত্যাদিও বিস্তারিত দেখিয়েছেন অধ্যাপক বসু। সুভাষচন্দ্রের ব্যাপক পড়াশুনার কথা আমাদের বুঝিয়েছেন। সুভাষচন্দ্রের সাথে বিশ্বমনীষীদের যোগাযোগের এবং তাঁর চিন্তাধারার ক্রমপ্রসারণ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আর সেই সংগে এই মহাযোদ্ধার মধ্যে থাকা অন্তরের রক্তমাংসের মানুষটির সাথেও আমাদের বারবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

এছাড়া সুভাষচন্দ্রের ভেতরের আধ্যাত্মিক রূপটাও সুচারুরূপে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু। দেখিয়েছেন স্বাধীনতা অর্জন কিভাবে সুভাষচন্দ্রের ধর্মসাধনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিভাবে স্বামীজীর সেই বিখ্যাত আহবান ‘আগামী ৫০-বছর এই পরমজননী জন্মভূমিই তোমাদের একমাত্র আরাধ্যা দেবী হউন’ সেটা সুভাষচন্দ্র কিভাবে ছোটবেলা থেকেই অনুধাবন করেছিলেন। প্রথমে আত্মনির্মানের সাধনায় কিভাবে কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, জ্ঞানযোগ, রাজযোগে ব্যাপ্ত ছিলেন। আভাস দিয়েছেন যে যোগমার্গের ফলিত রূপের ক্ষেত্রে সুভাষচন্দ্র ছিলেন তন্ত্রপন্থী। কিভাবে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের প্রেরণায় সারাজীবন তিনি একলব্য সাধনা করে গেছেন। লেখক উপস্থিত করেছেন সুভাষচন্দ্রের চিঠিপত্র যার মধ্যে একথাগুলোর আলোকচ্ছটা বিচ্ছুরিত হয়েছে বারংবার। তিনি সুভাষচন্দ্র নামের এক বিরাট পুরুষকে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন—যিনি কর্মে-ধর্মে, ত্যাগে-প্রেমে, জ্ঞানে-ধ্যানে মহীয়ান ছিলেন।

অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুর এই “সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র দ্বিতীয় খণ্ডটা” সম্বন্ধে একটা কথা উল্লেখনীয়। এই বইটা প্রচলিত পদ্ধতিতে লেখা হয়নি। এটা অনেকটা নেতাজী-প্রেমী বিদগ্ধ পাঠকদের জন্য লেখা। ক্রমানুসারে বা ধারাবাহিকভাবে না লিখে এখানে তিনি সুভাষচন্দ্রের বিশাল কর্মময় জীবনের নানা বিষয় ধরে ধরে লিখেছেন। যেমন ১৯২৮ সালের কলকাতা কংগ্রেসের সময় স্বেচ্ছাসেবকদলের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসাবে তাঁর ভূমিকা, বসু-প্যাটেল বিবৃতি, বিভিন্ন অক্ষশক্তি-দেশের সাথে তাঁর রাজনৈতিক সম্পর্ক, তাঁর ‘ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’ বই সম্বন্ধে বিবিধ খবর, সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক চিন্তাধারা, হরিপুরা কংগ্রেস, ভারতে মুসলিম রাজনীতি, তাছাড়া সুভাষচন্দ্রের সাথে রবীন্দ্রনাথ, শ্রীঅরবিন্দ, গান্ধী, রোমা রোলাঁ, কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল, জিন্না প্রভৃতির পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি এই বইতে বহুকৌণিক দৃষ্টি থেকে আলোচিত হয়েছে । এক কথায় এই দ্বিতীয় খণ্ড অভিনব। এই বই দুটোয় তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য অনেক গবেষণার রসদ রেখে গেছেন।

এর সাথে সাথে অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ৮০-পৃষ্ঠার একটা পকেট-সাইজের সামান্য বড়, যাকে বোধহয় ডিওডেসিমো (duodecimo) সাইজ বলা হয়, বই বের হয়েছিলো দে’জ পাবলিশিং থেকে যার নাম ছিল “বিবেকানন্দে উদ্ভাসিত সুভাষচন্দ্র”। এই সুন্দর ছোট বইটায় তিনি সেই প্রসঙ্গগুলো আলোচনা করেছেন যাতে সুভাষচন্দ্রের জীবনদর্শন বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। অধ্যাপক বসু দেখিয়েছেন যে অনিবার্যভাবে সেখানে নিয়ন্ত্রী শক্তি সেই শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ আর স্বামী বিবেকানন্দ। এই প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য যে “বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষের” ৬ষ্ঠ ও ৭ম (বা শেষতম) খণ্ডে সুভাষচন্দ্র বসুর প্রসঙ্গ এসেছে বারবার। তাছাড়া সুভাষচন্দ্রের জীবনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও “বিবেকানন্দে উদ্ভাসিত সুভাষচন্দ্র” নামের এই ছোট বইটা একজন প্রকৃত বিবেকানন্দ ও নেতাজী বিশেষজ্ঞ এবং মহাগবেষকের কাছ থেকে আমাদের উপরি-পাওনা। তবে এই বইটা সম্বন্ধে আমার একটা অনুযোগ রয়েছে। এটা আক্ষেপও বলা যেতে পারে। এই বইটাই অধ্যাপক বসুর সুভাষ-বিষয়ক একমাত্র বই যাতে পাদটীকা বা অন্তটীকা নেই। সে বিষয়ে পরে বলছি।

এবার আসছি নেতাজী-বিষয়ক অধ্যাপক বসুর সর্বশেষ বইতে যা ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল। বইটার প্রধান চরিত্র সুভাষচন্দ্র নন। বইটার নাম, “Economic and Political Ideas—Vivekananda, Gandhi, Subhas Bose”। এটা দিল্লির স্টারলিং পাবলিশার্স থেকে ২০০০ সালে বের হয়েছিল। বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় না। এই বইটা ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে দিল্লিতে ভীলওয়ারা মেমোরিয়াল লেকচারের উপর আধারিত এবং তার পরিবর্ধিত রূপ। জাপান থেকে ভ্যাঙ্কুভার হয়ে শিকাগো যাবার পথে জাহাজে স্বামীজীর সাথে শিল্পপতি জামশেদজী টাটার যে কথোপকথন হয়েছিল তা তিনি জানিয়েছেন এই বইতে। স্বামীজী জামশেদজী টাটার ভারতে ইস্পাতশিল্প প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টাকে আশীর্বচন জানিয়েছিলেন। এছাড়া স্বামীজী জামশেদজীকে ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার জন্য পরামর্শ দেন। তারই ফলশ্রুতি স্বরূপ পরে জামশেদপুরে টাটা স্টীল প্ল্যান্ট এবং ব্যাঙ্গালোরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এই বইতে স্বামী বিবেকানন্দের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক আদর্শ ও মতবাদ পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার ভিত্তিতে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উত্থাপন করেছেন অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু। এ ছাড়া এই বইতে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের উন্নয়ন-ভাবনা, ‘গ্লোবেলাইজেশন’ বা বিশ্বায়ন ভাবনা, সামাজিক ন্যায়নীতির ধারণা, সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা, মানবিকতা, বহুত্ববাদ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করেছেন। সাথে সাথে লোকমান্য তিলক, মোহনদাস গান্ধী প্রভৃতির স্বামী বিবেকানন্দের মতবাদের সঙ্গে মিল ও অমিল দেখিয়েছেন তাঁর বলিষ্ঠ লেখনীতে। শেষ অধ্যায়ে স্বামীজীর আদর্শে বলীয়ান সুভাষচন্দ্র বসু কিভাবে কংগ্রেসের শিল্পনীতির পরিবর্তন সাধনে চেষ্টা করেছিলেন তা বলেছেন। এতে সুভাষচন্দ্র স্যার বিশ্বেশ্বরাইয়া, ডঃ মেঘনাদ সাহা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অন্যান্যদের কাছ থেকে যে সাহায্য পেয়েছিলেন সেকথাও আছে। আর এজন্যে গান্ধীজীর এবং তাঁর অনুগত সহচরদের কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র যে বাধা পেয়েছিলেন তাও সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন লেখক। গান্ধীজী চরকা আর খাদি শিল্পের গোঁড়া সমর্থক ছিলেন। তিনি মনে করতেন চরকা ও খাদি ছাড়া স্বরাজ অসম্ভব। ১৯২০ সালে সেপ্টেম্বরে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে এবং ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে নাগপুর কংগ্রেস থেকে তিনি তো এক বছরের মধ্যে স্বরাজ এনে দেবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন দেশবাসীকে। যাইহোক, এসবের পরিণতি স্বরূপ কিভাবে সুভাষচন্দ্রকে কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছিল, এতে জওহরলাল নেহেরুর নির্লজ্জ ভূমিকার কথা, ইত্যাদিও অধ্যাপক বসু এই বইতে তুলে ধরেছেন।

তাহলে আমরা অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুর সুভাষচন্দ্রের উপর লেখা সর্বমোট পাঁচটা বইয়ের সন্ধান পাচ্ছি যেগুলোর শিরোনামে সুভাষচন্দ্র বা সুভাষ নামটা রয়েছে। যথা:

১) ‘সুভাষচন্দ্র ও ন্যাশন্যাল প্লানিং’, জয়শ্রী প্রকাশন, ১৯৭০-এ প্রকাশিত;

২) ‘সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র প্রথম খণ্ড’, মণ্ডল বুক হাউস, জানুয়ারি ১৯৯৭-এ প্রকাশিত;

৩) ‘সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র দ্বিতীয় খণ্ড’, মণ্ডল বুক হাউস, এপ্রিল ১৯৯৮-এ প্রকাশিত;

৪) ‘বিবেকানন্দে উদ্ভাসিত সুভাষচন্দ্র’, দে’জ পাবলিশিং, জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত, এবং

৫) ‘Economic & Political Ideas – Vivekananda : Gandhi, Subhas Bose’, স্টারলিং পাবলিশার্স, ২০০০ সালে প্রকাশিত।

আর এছাড়া সুভাষচন্দ্র বিশদভাবে আলোচিত হয়েছেন অধ্যাপক বসুর ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ ও ৭ম খণ্ডে। এবং আমি নিশ্চিত যে সুভাষচন্দ্রের প্রসঙ্গ উঠে এসে থাকবে অধ্যাপক বসুর আর একটা বইতে, যার নাম, Swadeshi Movement in Bengal and Freedom Struggle of India. দুর্ভাগ্যবশত এই বইটা আমার পড়া হয়ে উঠেনি।

[অধ্যাপক শংকরীপ্রসাদ বসু এম এ পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও নিজে Ph.D বা ডক্টরেট করেননি। তাঁর অধীনে অনেক ছাত্র-ছাত্রী ডক্টরেট করেছেন। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে নবগঠিত বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রথম সাম্মানিক ডি-লিট উপাধি অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুকেই দিয়েছিল; কিন্তু তিনি নামের আগে বা পেছনে কখনো ‘ডক্টরেট’ লেখেননি। এরকম বহু কারণে তিনি আমার কাছে আদর্শ দ্রোণাচার্য হয়ে আছেন এবং থাকবেন।]

আর কয়েকটা কথা বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করবো। অধ্যাপক বসুর নেতাজী বিষয়ক বইতে (হয়তো অন্য বিষয়ের উপর বইগুলিতেও) প্রতি অধ্যায়ের শেষে ‘পাদটীকা ও প্রাসঙ্গিক তথ্য’ দেওয়া থাকে যেগুলো অধ্যবসায়ী এবং একাগ্রচিত্ত-আগ্রহী পাঠকদের জন্য রত্ন ভাণ্ডার। তাঁর সেইসব টীকার এবং প্রাসঙ্গিক তথ্যের থেকে কত বিচিত্র সব তথ্য জানতে পেরেছি যা বলে শেষ করতে পারবো না। মনোযোগী পাঠকের জন্য তাঁর প্রতিটা বইই এক একটা আকর গ্রন্থ। এমনিতেই তাঁর প্রতিটা লেখা, প্রতিটা বই মৌলিক চিন্তার ফসল এবং প্রচণ্ড নিষ্ঠা, পরিশ্রমলব্ধ গবেষণাপন্থী নিবন্ধ।

যেমন ঐতিহাসিকদের বিবেকানন্দ-অবহেলা, বিবেকানন্দ-উপেক্ষা তাঁকে বিবেকানন্দ-গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছিল, সেরকমই একই কারণে সুভাষচন্দ্র বা নেতাজী বিষয়ে গবেষণা করতেও তাঁকে বাধ্য করেছিল। অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু আমাদের বারংবার দেখিয়েছেন যে সুভাষচন্দ্র নিছক স্বাধীনতা-সংগ্রামী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না – যদি সুভাষচন্দ্র তাই থাকতেন তবে অধ্যাপক বসুর লেখার বিষয় তিনি হতেন না। অধ্যাপক বসু সর্বদাই মানুষের সন্ধানী। “ব্যাপক ও গভীর চেতনায় সমৃদ্ধ বিরাট পুরুষ ছিলেন সুভাষচন্দ্র।” তাই ‘এক’ সুভাষের মধ্যে ‘বহু’ সুভাষকে, সম্পূর্ণ সুভাষচন্দ্রকে, তিনি দেখাতে চেয়েছেন – তাঁর সামাজিক সত্তায়, মনন সত্তায় এবং আধ্যাত্মিক সত্তায়।

দেহাবসানের বছরখানেক আগে তিনি তাঁর ছোট পুত্রের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর উপলব্ধি জানাতে গিয়ে সুভাষচন্দ্র সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘অপার রহস্য’। নেতাজী সম্পর্কে অনেকের অনুভূতিই অনুরূপ। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনের অনেকটাই রহস্যাবৃত।

স্বামীজী বলতেন ‘চালাকির দ্বারা কোন মহৎকার্য হয় না’। তিনি আহবান করেছিলেন, “খেটে খেটে মরে যা”। স্বামীজীর এসব কথা আক্ষরিক অর্থে আত্মভূত বা আত্মস্থ করেছিলেন অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু। স্বামীজীর নির্দেশ অনুযায়ী তিনিই একমাত্র “জীবনে দাগ রেখে” গেলেন। আর আমরা তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থেকে গেলাম। তাঁর আদর্শই এখন আমাদের পাথেয়। যতদিন বাঁচব, স্বামীজী-নেতাজীর আশীর্বাদে যেন আমার দ্রোণাচার্য অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসুর মত সততা এবং নির্ভীকতা অবলম্বন করে নেতাজীর কাজ করে যেতে পারি।

(লেখক-উৎপলেন্দু আইচ। প্রবাসী বাঙালি ও একজন অবসরপ্রাপ্ত আইএফএস, নেতাজি সুভাষচন্দ্র ও সমকালীন রাজনীতি প্রসঙ্গে অন্যতম সফল গবেষক।)
সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ২৯

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ