আজ ১৯ মার্চ বিশ্ব ঘুম দিবস। কম ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। ঘুমের সমস্যা জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে সামনে আসছে। ঘুমের ব্যাপারে ব্যক্তি ও সমাজের মনোযোগী হওয়া দরকার।
করোনা মহামারিকালে অনেকে ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা মহামারিকালে বেড়েছে। অনিদ্রা ও ঘুমের বিভ্রাট জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দেওয়ার আগে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার তাগিদ অনুভব করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকেরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে অনেকে জীবিকা হারিয়েছেন অথবা তাঁদের জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জীবিকার চিন্তায় অনেকের ঘুম কমেছে, ঘুম নষ্ট হয়েছে। তাঁরা আর আগের মতো নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন না। করোনার কারণে অনেককে বাড়িতে-ঘরে বেশি সময় আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে, তাই নতুন অভ্যস্ততায় অনেকের ঘুমের অভ্যাস বদলে গেছে। বাড়িতে-ঘরে থেকে টেলিভিশন দেখা বা মোবাইল ফোন-কম্পিউটার ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে শিক্ষার্থীদের। এসব ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর যেসব সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে, তার অন্যতম অনিদ্রা ও ঘুমের অন্য কিছু সমস্যা।
গত ডিসেম্বরে ইউরোপিয়ান স্লিপ রিসার্চ সোসাইটি ঘুমবিষয়ক সাময়িকী জার্নাল অব স্লিপ রিসার্চে কানাডার ৫ হাজার ৫২৫ জন নাগরিকের ওপর করা জরিপ ফলাফল প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করে। উত্তরদাতাদের ৩৬ শতাংশের মহামারির আগেই নানা ধরনের ঘুমের সমস্যা ছিল। তবে মহামারির সময় সেই হার বেড়ে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।
করোনাকালে দেশের মানুষের ঘুমের সমস্যা ঠিক কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে কোনো গবেষণার কথা এখনো জানা যায়নি। মহামারি শুরুর আগে দেশের মানুষের ঘুমের পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় কোনো জরিপ হয়েছে, এমন তথ্যও পাওয়া যায় না। তবে ২০০৩ সালে ঢাকা শহরের ১ হাজার ১৪৫ জন মানুষকে নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ২৮ শতাংশ ঢাকাবাসী নানা ধরনের মানসিক রোগে ভুগছেন। তাঁদের একটি অংশ অনিদ্রাসহ ঘুমের অন্যান্য সমস্যার কথা গবেষকদের জানিয়েছিলেন।
২০১২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আফ্রিকা ও এশিয়ার আটটি দেশের মানুষের ঘুম নিয়ে গবেষণা হয়েছিল। তাতে চাঁদপুরের মতলব এলাকার মানুষের ঘুমের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা হয়েছিল। ওই গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়, ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ নারী এবং ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ ঘুমের সমস্যায় ভোগার কথা বলেছিলেন। ওই গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত দেশগুলোতে অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যাকে এখনো জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ সার্জনসের মহাসচিব মণিলাল আইচ অনিদ্রা ও ঘুমের সমস্যায় ভোগা মানুষের চিকিৎসা দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় জরিপ হলে দেখা যাবে বহু মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনাকালে অনিদ্রাসহ অন্যান্য ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মহামারি ঘুমের সমস্যাকে গভীরতর করেছে।’
এই পরিস্থিতিতে আজ শুক্রবার ১৯ মার্চ বিশ্ব ঘুম দিবস পালিত হচ্ছে। ঘুম দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘নিয়মিত ঘুম: স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’। দিনটি পালন উপলক্ষে ২২ মার্চ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ সার্জনস।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মার্চ ১৯, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,