আগামী বছর জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬ জন কংগ্রেস সদস্য। তারা গত ৮ই জুন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের কাছে লেখা যৌথপত্রে এই উদ্বেগের কথা জানান। একইসঙ্গে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেয়া র্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলো মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। এর জন্য অব্যাহতভাবে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য এজেন্সির প্রতি আহ্বান জানাতে অনুরোধ করেছেন তারা।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেসম্যানরা হলেন- উইলিয়াম আর কেটিং, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, বারবারা লি, জিম কস্তা, দিনা তিতাস ও জেমি রাশকিন। এতে তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বারবার এবং স্পষ্ট বিবৃতি এবং পদক্ষেপ গ্রহণ বাংলাদেশ সরকারকে তার মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলো নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এরই মধ্যে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার ও সহিংসতা শুরু হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনের ফল কলঙ্কিত হতে পারে। তাতে সামাজিক সংঘাত গভীর হতে পারে।
চিঠিতে তারা আরও বলেছেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং এর তখনকার সাতজন ও সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেয়া মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ওই প্রতিষ্ঠানটি মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে প্রমাণিত রিপোর্ট আছে।
এর প্রেক্ষিতে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজনীয় এবং যৌক্তিক ছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলো, তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে নিষ্পেষণ বন্ধ হয়নি। বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট ২০২২-এ বাংলাদেশের সম্মানজনক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকার ৩১টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ২১টি জোরপূর্বক গুম, জেলে ৬৮ টি মৃত্যু এবং র্যাব, ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ ও একটি এজেন্সি দ্বারা ১৮৩ জন সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। এসব প্রামাণ্য ডকুমেন্ট সত্ত্বেও, ঘন ঘন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার কথা অব্যাহতভাবে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা। তারা একে দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনকি জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত এবং পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে তারা আরও বলেছেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাতে বাংলাদেশি সমাজের অনেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলার শক্তি পেয়েছেন। তারা এসব লঙ্ঘনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন করেছেন। অথবা আইন প্রয়োগকারীদের বিভিন্ন এজেন্সির হাতে পড়ার মতো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। জবাবে নাগরিক সমাজের সংগঠন, মানবাধিকারের পক্ষের কর্মী, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিকটিম ও তাদের পরিবারগুলো সরকারের তীব্র প্রতিশোধের মুখে পড়েছে।
সূত্র: মানব জমিন।
তারিখ: জুন ১৫, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,