আগষ্ট ০৬, ২০১৮ সূত্র: কালের কণ্ঠ
রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর গত আট দিন ধরে রাজপথ কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিশ্বে প্রথমবারের মতো রাজপথে নেমে আসে কিশোর-কিশোরীরা। তারা ট্রাফিক কন্ট্রোল, ইমার্জেন্সি লেন তৈরি, লাইসেন্স চেক, ফিটনেস চেক ইত্যাদি কাজ করে সারাবিশ্বে সাড়া ফেলে দেয়। এক পর্যায়ে তাদের ওপর হামলে পড়ে সন্ত্রাসীরা।
বাংলাদেশে চলমান নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোর-কিশোরীদর আন্দোলন ক্রমশ সহিংস রূপ নিচ্ছে। জিগাতলায় গত শনিবার সংঘর্ষের পর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে রাজপথ ছেড়ে দিলেও মাঠে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
আজ সোমবারও রাজধানীর শাহবাগ, রামপুরা কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ এবং অস্ত্রধারী হেলমেট পরা যুবকদের হামলার শিকার হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
এই আন্দোলনের সমর্থনে গর্জে উঠেছে ওপার বাংলার ছাত্র-ছাত্রীরা। বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের এই অভূতপূর্ব আন্দোলনে কলকাতার সোশ্যাল দুনিয়া উত্তাল। তবে অনলাইনে প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত নয় তারা; রীতিমতো রাজপথে মিছিল করেছে।
কিশোর আন্দোলনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কিছু স্লোগান ফেস্টুনে লিখে রাস্তায় নেমেছিল কলকাতার শিক্ষার্থীরা। যার মধ্যে ছিল বিখ্যাত সেই স্লোগান, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমিই বাংলাদেশ।’
রাজধানীর দৃক গ্যালারির কর্ণধার ও খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (০৬ আগস্ট ২০১৮) বিকেলে রমনা থানায় দায়ের হওয়া তথ্যপ্রযুক্তির ৫৭ ধারায় একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। তাকে আলজাজিরার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তা কি শুধুমাত্র সড়কের নিরাপত্তার অভাবেই শুরু হয়েছে নাকি এর পেছনে আরো বড় কিছু রয়েছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল আলম বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে, যারা আসলে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই শাসন করছে, ব্যাংক লুট করছে, মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে, বিরোধী মতের লোকজনকে গুম করা হচ্ছে, সরকারের প্রত্যেকটি স্তরে ঘুষ, এসবই চলছে দেশে। যে আবেগ বা ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছে এই আন্দোলনে তা আসলে শুধুমাত্র নিরাপদ সড়কের দাবিতে নয় এসবের কারণেও হয়েছে।
আলজাজিরাকে দেয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে শহিদুল আলম চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নিকটজনেরা সরকারি চাকরি পাচ্ছে, চরম একটা বৈষম্য রয়েছে সেখানে। আন্দোলনকারীরা সেটার সংস্কার করতে বলেছে সেটাও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, অনেক দিন হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন করেননি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজকে রাস্তায় যা হচ্ছে এটার কারণ খোঁজা হচ্ছে। অথচ পুলিশ এই নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে সরকার দলীয় স্বশস্ত্র লোকদের সহযোগিতা নিয়েছে। এবং ঠিক সেমতে আজ আমি নিজেও রাস্তায় দেখেছি নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর অস্ত্রধারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং পুলিশ তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে এবং তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে একযোগে হামলা করছে।’
সরকারের হিসেব নিকেশে ভুল হচ্ছে মন্তব্য করে শহিদুল বলেন, বিরোধী মতের সবাইকে শত্রু জ্ঞান করে তাদের ধ্বংস করা হচ্ছে। পুরো রাষ্ট্র কাঠামোর সব কলকব্জা ব্যবহার করে স্বশস্ত্র পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তাদেরকে শেষ করে দিতে চাইছে সরকার।
রেটিং করুনঃ ,