যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মতামত কলামে এ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার যৌথ লেখাটি গতকাল রোববার প্রকাশিত হয়।
নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়তে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া অঙ্গীকারবদ্ধ। চার নেতার যৌথ নিবন্ধে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে চার দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মতামত কলামে এ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার যৌথ লেখাটি গতকাল রোববার প্রকাশিত হয়।
পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য এই চার দেশের সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘দ্য কোয়াড’ নামে পরিচিত। গত শুক্রবার ভার্চ্যুয়ালি সম্মেলনের পর ওই কলাম লেখেন চার দেশের নেতারা।
নেতারা বলেছেন, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল যেন গতিশীল হয়, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং যেকোনো বিতর্কের শান্তিপূর্ণ সমাধানকে গুরুত্ব দেওয়ার নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন তাঁরা। এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশ যাতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়াই নিজেদের রাজনৈতিক পছন্দ ঠিক করতে পারে, তা নিশ্চিত করার কথাও বলেন এ নেতারা।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারত, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া সরকার বছরের পর বছর ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছে। শুক্রবার ‘কোয়াড’-এর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ে অর্থবহ সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন নেতারা। এ অঞ্চলকে একটি অবাধ ও মুক্ত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জোরদারের লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে নতুন প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মত হয়েছেন তাঁরা। যেসব নিয়মনীতির ভিত্তিতে ভবিষ্যতের উদ্ভাবনগুলো পরিচালিত হবে, সম্মিলিতভাবে তা নির্ধারণেও একমত হন তাঁরা।
সংকটের মধ্যে কুয়াডের জন্মের কথা উল্লেখ করে তাঁরা বলেছেন, ২০০৭ সালে এটি একটি কূটনৈতিক সংলাপে রূপ নেয়, ২০১৭ সালে তার পুনর্জন্ম হয়। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র—গণতান্ত্রিক দেশের এই গ্রুপ বাস্তব সহযোগিতায় বিশ্বাসী। জরুরি প্রয়োজনে দুর্গত মানুষের প্রতি সম্মিলিতভাবে দ্রুত মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ দিয়ে আসছে দেশগুলো।
২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামির কথা উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, ওই বিপর্যয়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়। বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। সে সময় দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এই চার দেশ। এখন দেশগুলোর মধ্যে আন্তযোগাযোগের এই যুগে এবং এ অঞ্চলজুড়ে কাজ করার সুযোগের এই সময়ে তাদের আবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার ডাক পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চার দেশের নেতারা। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলার পদক্ষেপ জোরদারেরর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা জোরদারে উদ্যোগী হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। নেতারা লিখেছেন, ‘সুনামির পর থেকে জলবায়ু পরিবর্তন আরও বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। নতুন প্রযুক্তি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, ভূরাজনীতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে জটিল রূপ নিয়েছে। আর মহামারি বিশ্বকে বিপর্যস্ত করেছে।’
এ বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অবাধ, খোলামেলা, সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তোলার অভিন্ন লক্ষ্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন নেতারা।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় কাজ করার প্রতিশ্রুতি জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলোর একটি তৈরি করেছে এ ভাইরাস। মহামারির যাতে সমাপ্তি ঘটে, সে জন্য অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করবেন তাঁরা। জনগণের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দৃঢ় অঙ্গীকারের জায়গা থেকে কোভিড-১৯ মহামারি অবসানে কাজ করার কথা উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, মহামারি চলতে থাকলে কোনো দেশই নিরাপদ থাকতে পারবে না।
কোভিড-১৯-এর সমাপ্তির জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নেতারা বলেছেন, ভারতে নিরাপদ, কার্যকর ও সবার জন্য সহজলভ্য টিকা উৎপাদন বাড়াতে কাজ করবেন। ২০২২ সালের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে টিকা প্রদান নিশ্চিতে সব পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করবেন তাঁরা।
শুক্রবার কুয়াড সম্মেলনে ভারতে করেনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় ধরনের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। সক্ষমতা বাড়িয়ে ২০২২ সালের মধ্যে ভারত থেকে এক শ কোটি ডোজ টিকা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সরবরাহেরও সিদ্ধান্ত হয়।
নিবন্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কোভ্যাক্সের মতো বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সমন্বয় করে জীবনরক্ষাকারী টিকা সরবরাহ বৃদ্ধিতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন নেতারা। তাঁরা বলেছেন, একটি ভ্যাকসিন এক্সপার্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরামর্শে টিকা নিয়ে তাঁদের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের নিয়ে এ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে।
নেতারা বলেছেন, মহামারির সমাপ্তি এবং এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে উত্তরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভূমিকা গ্রহণ এবং এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে না। সহযোগিতা ও সমন্বয় ছাড়া তা সম্ভব হবে না। তাই আসিয়ানের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবেন তাঁরা। সংকটের এই সময়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গেও সহযোগিতা বাড়াতে চান তাঁরা।
বিগত মাসগুলোতে বিশ্ববাসীকে যে দুর্দশার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সে কথা উল্লেখ করে নেতারা বলেছেন, এ অন্ধকার সময়ে তাদের অংশীদারত্ব সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মার্চ ১৪, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,