প্রসিদ্ধ ইরানী কবি, গণিতজ্ঞ বৈজ্ঞনিক, জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম লিখেছিলেন ফার্সী ভাষায় তাঁর বিখ্যাত রোবাইয়াৎ- এ।
” ইয়েক্ চান্দ্ বেহ্ কুদকি্ বেহ্ উস্তাম শুদিম
ইয়েক্ চান্দ্ যে উস্তাদি খুদ্ শাদ শুদিম
পায়ান সুখন শোন হেদ মারা চেহ রসিদ।
আয্ খাক দর্ আমাদিম ও চুন্ বাদ শুদিম। “
ফিটজেরাল্ডের ইংরেজী অনুবাদেঃ
With them the seed of Wisdom did I sow,
And with my own hand wrought to make it grow,
And this was all the Harvest that I reap’d–
” I Came like water, and like wind I go”
( Rubai XXVII)
অনুবাদ করলে দাঁড়ায় – ” শৈশবে আমি (ওমর খৈয়াম) পন্ডিতদের সাথে সময় কাটাতাম। সে সময় নিজেকে পন্ডিত ভেবে আনন্দ বোধ করতাম।
শুনে যাও, অবশেষে কি হল আমার পরিনিতি !!
এসেছিলাম মৃত্তিকা রসে শিক্ত হয়ে এবং বাতাসের সাথে উড়ে গেলাম! “
হাতে গোনা কতকগুলি বই পড়ার পর হঠাৎ এক সময় মনে হলো নিজে একজন ছোট্ট ধরনের পন্ডিত ব্যক্তি। মনে হতে থাকলো আমি যা জেনেছি অন্যরা তা জানে না, এমন ধারণা হয়তো অনেকেরই হয়। নিজেকে এক ধরণের পন্ডিত ভেবে আশে পাশের মানুষকে শির্ষ্য ভেবে নিজের গড়া মতবাদ বা অর্জিত জ্ঞানগুলি ক্রমাগত ভাবে বলেতে থাকি।
ঠিক একই ভাবে দুই একটা প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া, গল্প লিখার পর হঠাৎ এক সময় মনে হলো নিজে একজন ছোট্ট ধরনের পন্ডিত ব্যক্তি, লেখকও বটে ও লেখার মান অনেক উন্নত এ ধরণের ধারণাও হয়তো অনেকেরই হয়।
ওমর খৈয়ামেরও হয় তো হয়েছিল এবং তিনি একজন মহা ও উঁচু মানের পন্ডিত ব্যক্তি বলে তিনি নিজেকে বর্ণনায় দিলেন যে, শুনে যাও, অবশেষে কি হল আমার পরিনিতি !!
এসেছিলাম মৃত্তিকা রসে শিক্ত হয়ে এবং বাতাসের সাথে উড়ে গেলাম!
একটি বালুকণা ঠিক কতদিন ধরে এ পৃথিবীতে আছে কবে তার আগমন ঘটেছিল আর অবশেষে বালুকণাটি ঠিক কবে মহাজগৎ থেকে উধাও হয়ে যাবে এমন একটি চিন্তা মাথায় আসার পর আমার সমস্ত চিন্তা, চিন্তা করার ক্ষমতা এলোমেলো হতে থাকলো আর তখন এক সময় নিজেই অনুমান করতে থাকলাম যে আমার জ্ঞানের গভীরতা কতটুকু !!! নিজের অবস্থান একটি বালুকণার থেকেও ক্ষুদ্র।
গুটি কতক মানুষের মধ্যে মেলা মেশার পর নিজের কথাগুলি গুটি কয়েক জন মানুষের মধ্যে প্রচারিত হওয়ার পর যদি কখনো আমাদের মধ্যে কিছু তত্বের উদ্ভব হয়, পান্ডিত্ব বোধের জন্ম হয়, অনেক সময় এগুলি আমাদের জন্য একটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।।
যদি কখনো অধিক জ্ঞান লাভের সুযোগ ঘটে, নিজের অর্জিত জ্ঞানের সীমা বড় হতে থাকে ঠিক তখন নিজের গড়া তত্বগুলি ভেংগে যেতে থাকে আর নিজের মধ্যে আবিষ্কার হতে থাকে যে এত দিনের গড়া তত্বগুলি ভুল ধারনা উপর দাড়িয়ে ছিল। সংসয়ের বিষয় এই যে অনেকেই ভুল তত্বের মধ্যে জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত কাটিয়ে দিয়ে থাকেন আর এর বড় কারণ হলো যে নিজের জ্ঞান ভান্ডারকে প্রসারিত না করা। নিজের ধ্যান ধারণার মধ্যে নিজে গুটিয়ে থাকা, নিজের মধ্যে বাইরের আলো বাতাস প্রবেশ করতে না দেওয়া।
অনেক বই পড়ে, অনেক জ্ঞান অর্জনের পরে অনেক লেখা লেখার পরে আমাদেরও মধ্যেও জেগে উঠুক ওমর খৈয়ামের চেতনা, পরিশুদ্ধ হোক চিন্তা, সঠিক তত্ব, সঠিক লেখনীর ধারা।
রেটিং করুনঃ ,