হিংসা, অনুযোগ, মান, অভিমান—মানুষের অভিধান এমন অনেক আবেগ–অনুভূতিতে পূর্ণ। আবার মানুষ তার নানা স্বভাবে দুষ্ট ও তুষ্ট। এমনই একটি স্বভাব ‘অভিযোগ’, যা হতে পারে নিজের এবং অন্যের বিরুদ্ধে। অনেক সময় বিপরীতজনকে শোধরানোর সুযোগ দিতেও অভিযোগ করা হয়। কিন্তু যদি কেউ ক্রমাগত অভিযোগ করতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তা অভিযোগকারীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে সে ক্ষেত্রে নিজেকে বদলানোর প্রয়োজন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য অন্যের চেয়ে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা অনেক সহজ।
দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে কেউই নয়। সবার মধ্যেই কমবেশি অভিযোগ করার প্রবণতা থাকে। আমরা যখন কারও সম্পর্কে অভিযোগ করি, তখন কোনোভাবেই নিজেকে অভিযুক্তের জায়গায় বিবেচনা করি না এবং যার সম্পর্কে অভিযোগ করা হচ্ছে, তার ইতিবাচক দিকগুলো নিয়েও চিন্তা বা আলোচনা করি না।
কিন্তু কেউ কেউ অভিযোগ এত বেশি করে যে মনে হয়, এটাই তার অভ্যাস। অভিযোগ করার আগে নিজের অবস্থাটা নিজে নিজেই বিশ্লেষণ করে নিলে সমস্যার সমাধান অনেক সহজভাবেই করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন সে রকমই কিছু সমাধান। তাঁরা বলছেন, আগে বুঝতে হবে নিজেকে। মিলিয়ে নিন আপনার সঙ্গেও এমন হয় কি না—
১. আপনি নিজের অভিযোগগুলোকে অভিযোগ নয়, বরং সেগুলোকে বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক হিসেবেই বিবেচনা করেন। তাই আপনি আপনার তুলে আনা পয়েন্টগুলো যৌক্তিকভাবে একবারও না ভেবে অভিযোগ করে যান।
২. আপনি নিজেই নিজের সবচেয়ে খারাপ সমালোচক এবং সবকিছুর জন্য নিজের সমালোচনা করেন। নিজের কোনো ভুলই আপনি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। কেউ আপনার অতীত কোনো ঘটনা মনে করিয়ে দিলে, সেটিকেও নিজের ব্যর্থতা মনে করেন।
৩. আপনি নিজের গুণগান শুনতে পারেন না। কেউ আপনার প্রশংসা করলে বিব্রত বোধ করেন। এবং একইভাবে অন্যের প্রশংসা করতে পারেন না।
৪. সবকিছু নিয়েই আপনি বিরক্ত বোধ করেন এবং সেসবের বিপরীতে প্রশ্ন আপনার তুলতেই হয়।
৫. আপনি নিজেকে পারফেকশনিস্ট মনে করেন। অন্যদের কাছেও সেটা নিজের কাজ ও কথা দিয়ে প্রকাশ করতে চান।
৬. আপনি সমালোচনা সহজে নিতে পারেন না। আপনি মনে করেন, অন্যরা আপনাকে সবার সামনে ছোট করার চেষ্টা করছে। আবার সেসব ভুল আপনি নিজে নিজে কখনো শোধরানোর চেষ্টা করেন না।
৭. অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা আপনার অভ্যাস। আর সব সময় নিজেকে নেতিবাচক দিকে রাখেন। আপনার মনে হয়, অন্যরা আপনার থেকে ভালো কিছু করছে।
৮. আপনি মনে করেন, অন্যরা সব সময় আপনার থেকে সুবিধা নিচ্ছে এবং আপনাকে ব্যবহার করছে।
৯. বন্ধুরাও এখন আড্ডা-আয়োজনে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে আগ্রহী নয়। হতে পারে আপনার ক্রমাগত অভিযোগ শুনতে শুনতে তারা বিরক্ত এবং আপনাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে।
১০. বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন কেউ কোনো বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করে না বা পরামর্শ দেয় না। কারণ, তারা জানেই যে আপনি তা গ্রহণ করবেন না।
১১. খুব কাছের বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনও এখন আপনাকে নিজেকে উপলব্ধি করার পরামর্শ দিচ্ছে এবং অভিযোগ বন্ধ করার অনুরোধ করছে।
নিজের সঙ্গে কতটা মিলল? এবার কি তাহলে নিজেকে বদলানো প্রয়োজন বলে মনে করেন? সে ক্ষেত্রে করণীয়ও বলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
১. অন্যদের কাছে ক্রমাগত নিজের অভিযোগ বলে বেড়ানোর আগে তা একটি কাগজে লিখে ফেলুন।
২. হয়েছে লেখা? এবার খুবই কাছের কোনো মানুষকে সেটা বলুন। তবে সেই প্রকাশটা যেন শুধু একবারই হয়। পরে আর কখনোই বিষয়টা নিয়ে কথা বলবেন না।
৩. যে বিষয়ে আপনার অভিযোগ, সে বিষয়ের নেতিবাচক দিক না খুঁজে বরং ইতিবাচক দিক খুঁজুন।
৪. যারা আপনার সামনে ক্রমাগত অভিযোগ করতে থাকে, তাদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। কারণ, তাদের একটা খারাপ প্রভাব থাকে।
বেশি নয়, অল্প কিছুদিন চেষ্টা করে দেখুন। নিজেকে বদলানোর এই প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই সফল হবেন। তারপর পাবেন নতুন এক ‘নিজেকে’।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মে ০৭, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,