Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

নার্গিস ফুল

Share on Facebook

ইতালীর মহা কবি, লেখক দান্তে ( Dante Alighieri ) তাঁর একটি কবিতার বাংলা অনুবাদের একটি লাইন।
অন্তত প্রতিটি মানুষের জীবনে একবার প্রেম আসে বিরাট এক দর্পিত দাবি নিয়ে।

নার্গিস, একটি ফার্সি শব্দ। ফার্সি ভাষায় ও ইরানের বাগানের ফুল। তীব্র সুগন্ধ, সাদা পাপড়ি ও পাপড়ির উপর লাল প্রান্তযুক্ত বলয় যুক্ত বিশেষ। নার্গিস ফুল, কাজী নজরুলের জীবনে একটি প্রেমের ফুল হয়ে এসেছিল, প্রেমের বিরাট এক দর্পিত দাবি নিয়ে।

নার্গিস, আমাদের জাতীয় কবির জীবনে এসেছিল ক্ষণ কালের জন্যে কিন্তু তা আজ তা চির কালের জন্যে, অনন্ত কালের জন্যে। নার্গিস নজরুলের জীবনে একটি বেদনার ফুল হয়ে, কষ্টের ফুলের নাম হয়ে এসেছিলেন, থেকেছেন। থাকবেন। নার্গিস ফুল কবিকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন এক মহান প্রেমিক হিসাবে। নানান গানে কবিতায় জীবন্ত হয়ে আছেন।

কত গানে, কত কবিতায়, কত লেখায় কবি নার্গিসকে এক দর্পিত প্রেম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, অনেক গবেষক তা আজ তাঁদের গবেষণার বিষয়ে অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

নার্গিস ফুল বা নার্গিস বা নার্গিসের মূল নাম ” নার্গিস আসার খানম।”

কবি অনেক লেখায় উল্ল্যেখ করেছেন পল্লী বালা বা পল্লী বালিকা হিসাবে।

কবির সাথে ১৯২১ সালে নার্গিসের প্রথম দেখা হয়।

সংক্ষিপ্ত ভাবে লিখলে বলা যায় ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে কুমিল্লার দৌলতপুরে আসেন। সেখানে অবস্থানকালে কবি তাঁর বন্ধুর বোনের মেয়ে সৈয়দা খাতুনের সঙ্গে পরিচিত হন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁদের মধ্যে ভালোলাগা, প্রেম বাসা বাঁধে। কাজী নজরুল, সৈয়দা খাতুনের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘নার্গিস আসার খানম’। বিভিন্ন লেখা থেকে পাওয়া যায় ওই বছরের ১৭ জুন তাঁদের বিয়ে হয় (বাংলা ৩ আষাঢ়, ১৩২৭)। কিন্তু বিপত্তি ঘটে বিয়ের রাতে থেকেই নানান কারণে। বিয়ের শর্তে।

নজরুল কাউকে কিছু না বলে কুমিল্লা শহরে চলে আসেন। এরপর আর কখনো নার্গিসের সঙ্গে কবির দেখা হয়নি কিংবা কবি দেখা করেননি। তবে একবার দেখা হয়েছিল ১৫ বছর হয়তো। ওই বিয়ের তিন বছরের মধ্যে কবি ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন।

গানে, কবিতায়, লেখায় নার্গিস আসার খানম আজও জীবন্ত। আমাদের গানে, কবিতায় লেখায় নার্গিস আসার খানম। নার্গিসও বিয়ে করেন এক কবিকে।

হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া কবির কিছু গানে, কবিতায়, লেখায় নার্গিস আসার খানমকে নিয়ে লেখা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্যে। দৌলতপুরে নার্গিস ফুলকে নিয়ে লিখেছিলেন

” রেশমী চুরির ঝিঞ্জিনীতে
রিমঝিমিয়ে মরম কথা
পথের মাঝে চমকে কে গো
থমকে যায় ঐ শরম লতা। “

কবি অভিমান করে লিখেছেন।
” আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেবনা ভুলিতে
আমি বাতাস হইয়া জড়াইব কেশ, বেনী যাবে যবে খুলিতে।
তবু আমারে দেবনা ভুলিতে।।
তোমার সুরের নেশায় যখন, ঝিমাবে আকাশ কাঁদিবে পবন
রোদন হইয়া আসিব তখন তোমার বক্ষে দুলিতে ।
তবু আমারে দেবনা ভুলিতে।।”

আবারো অভিমানের সুরে লিখেছেন।

” ভীরু এ মনের কলি
ফোটালে না কেন ফোটালে না-
জয় করে কেন নিলে না আমারে,
কেন তুমি গেলে চলি।।
ভাঙ্গিয়া দিলে না কেন মোর ভয়,
কেন ফিরে গেলে শুনি অনুনয়;
কেন সে বেদনা বুঝিতে পার না
মুখে যাহা নাহি বলি।।”

মোরে ভালোবাসায় ভুলিও না
পাওয়ার আশায় ভুলিও
মোরে আদর দিয়ে তুলিও না
আঘাত দিয়ে তুলিও।।
হে প্রিয় মোর একি মোহ
এ প্রাণ শুধু চায় বিরহ
তুমি কঠিন সুরে বেঁধে আমায়
সুরের লহর দুলিও।।

নার্গিস ফুল উল্ল্যেখ করে লিখেছেন

” ………….
মজনু! তোমার কাঁদন শুনিয়া মরু-নদী পর্বতে
বন্দিনী আজ ভেঙেছে পিঞ্জর বাহির হয়েছে পথে।
আজি দখিনা বাতাস বহে অনুকূল,
ফুটেছে গোলাপ নার্গিস ফুল,”

আবারো নার্গিস ফুল উল্ল্যেখ করে লিখেছেন

নূরজাহান! নূরজাহান!
সিন্ধু নদীতে ভেসে,
এলে মেঘলামতীর দেশে
ইরানী গুলিস্তান।।
নার্গিস লালা গোলাপ আঙ্গুর-লতা
শিরিঁ ফরহাঁদ সিরাজের উপকথা”

কবির চির বালিকাকে লিখেছেন-

মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী,
দেব খোঁপায় তারার ফুল।
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির,
চৈতী চাঁদের দুল।।
কন্ঠে তোমার পরাবো বালিকা,
হংস-সারির দুলানো মালিকা।”

অভিমান করে লিখেছেন
আমার গানের মালা
আমি করব কারে দান।
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে
করুণ অভিমান।”

কবি অভিশাপ দিয়ে লিখেছেন-

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।
ছবি আমার বুকে বেধে পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে ফিরবে মরু কানন গিরি সাগর আকাশ বাতাশ চিরি
সেদিন আমায় খুজবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।”

এমনি অনেক গান কবিতায় নার্গিস হয়ে আছেন অমর।

জেল খানায় বসে কবি লিখেন এক অমর চিঠি, যেখানে তিনি উল্ল্যেখ করেছিলেন তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া চিঠির কিছুটা অংশ উল্ল্যেখ করা হলো।

জ্বর হয়েছিল, বহু সাধনার পর আমার তৃষিত দুটি কর তার শুভ্র সুন্দর ললাট স্পর্শ করতে পেরেছিল; তার সেই তপ্ত ললাটের স্পর্শ যেন আজও অনুভব করতে পারি। সে কি চেয়ে দেখেছিল? আমার চোখে ছিল জল, হাতে সেবা করার আকুল স্পৃহা, অন্তরে শ্রী বিধাতার চরণে তার আরোগ্য লাভের জন্য করুণ……………। “

নার্গিস ফুল। নার্গিস। নার্গিস আসার খানম।

পরে কবি আজিজুল হাকিমের সাথে নার্গিসের বিয়ে সম্পন্ন হয়। অনেক পড়ে, সঠিক দিন ক্ষণ মনে নেই, খুব সম্ভবত আশির দশের শেষের দিকে একটি জাতীয় পত্রিকায় পড়ে ছিলাম লন্ডনে আমাদের জাতীয় কবির গানের কথার, কবিতার কথার নানান লেখার নার্গিস আসার খানম শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

থেকে গেলেন, থেকে যাবেন অনন্ত কাল ধরে আমাদের জাতীয় কবির লেখায়, সুরে।
” আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেবনা ভুলিতে
আমি বাতাস হইয়া জড়াইব কেশ, বেনী যাবে যবে খুলিতে।
তবু আমারে দেবনা ভুলিতে।”

তারিখ: জুলাই ৩০, ২০১৪

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ