লেখক: মো. সাখাওয়াত হোসেন
নারীরা মায়ের জাত, নারীরা সাধারণত কোমল ও নরম হৃদয়ের অধিকারী হয়ে থাকেন। সে কারণেই বাবার তীক্ষ্ণ ও গুরুগম্ভীর চেহারার বিপরীতে ছেলে-মেয়েদের কাছে পরম নিরাপদ আশ্রয়স্থল মায়ের কোল, মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা। প্রতিটি মানবসন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি নারীর নানামুখী ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম। নারীকে সাধারণত মমতাময়ী মা, স্নেহময় ভগ্নী সর্বোপরি সর্বংসহা চরিত্র হিসেবে দেখে আসছে সবাই এবং নারীদের দ্বারা মারত্মক ও জঘন্য অপকর্ম সংঘটিত হবে না মর্মে সবাই বিশ্বাস করে থাকেন। অপরাধবিজ্ঞানের পথচলায় শুরুর দিকে নারীদের অপরাধ নিয়ে তেমন আগ্রহ ও চিন্তন না থাকলেও বর্তমান সময়ে নারী অপরাধ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে, প্রত্যহ আগ্রহ বাড়ছে একাডেমিশিয়ানদের। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, নারীরা পুরুষের চেয়ে ত্বরিত মারত্মক সব অপরাধ সংঘটন করে থাকে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, সুইসাইড বোম্বিংয়ে সক্রিয়ভাবে নারী সন্ত্রাসীরাই অংশগ্রহণ করে থাকে। কাজেই একাডেমিক ও ব্যাবহারিক আলোচনায় নারী অপরাধ বিষয়টি অত্যন্ত আলোচিত ও লোমহর্ষক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিদিনকার খবর, সংবাদ, ঘটনাপ্রবাহ দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নারী অপরাধ বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। জটিল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে এই কারণে যে নারীরা যেভাবে ভয়ংকর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তা যেকোনো সমাজ চিন্তকের চোখে-মুখে ভাঁজ ফেলে দিতে যথেষ্ট। ইদানীংকালের ট্রেন্ডে দেখা যাচ্ছে, গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে সমাজে ব্যাপকভাবে পরিচিতদের অপরাধমুখিতার তথ্য-প্রমাণসহ আটক হওয়ার ঘটনায় বিশেষ শ্রেণির মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। কারণ যারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তারা সমাজে কোনো না কোনোভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের সঙ্গে অনেকের জীবনাচারণ নানাভাবে সম্পৃক্ত; সুতরাং তাদের দ্বারা এমন গর্হিত আচরণ সমাজে বিশৃঙ্খলা আনয়নে সহায়ক। কেননা একটি শ্রেণি যেকোনো কারণেই হোক, তাদেরকে অনুসরণ করে অনুপ্রাণিত হবার চেষ্টা করে এবং তাদের করুণ পরিণতি বিশেষ শ্রেণিকে হরেক রকম উপায়ে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে।
চিত্রনায়িকা একা নব্বইয়ের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা, অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়ে দর্শকদের মনে স্থায়ী আসন গড়েছেন, তা ছাড়া চলচ্চিত্র জগতের নায়ক-নায়িকাদের ভক্ত-সমর্থকদের সংখ্যা অন্যান্য সেক্টরে প্রতিষ্ঠিতদের তুলনায় সঙ্গত কারণেই বেশি। কেননা মানুষের সাংস্কৃতিক জগত, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতি আগ্রহ বেশি। সেই নায়িকা একা বেশ কিছুদিন ধরে সংবাদের শীর্ষে রয়েছেন এবং গৃহকর্মীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাশিমপুর কারাগারে আটক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ, এক গৃহকর্মীকে নির্যাতন দুই মাদক সেবন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে একা বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন এবং এর প্রেক্ষিতে তিনি গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন ও সুনির্দিষ্ট মজুরী দিতে অস্বীকার করেন। মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে দৃশ্যপটে একাকে মানসিক বিকারগ্রস্থ মনে হয়েছে এবং অধিক তদন্ত সাপেক্ষে
অপ্রকাশিত আরও অনেক অপরাধের ধরণ হয়তো উঠে আসতে পারে।কাজেই সমাজের যোগ্যতার জায়গায় অবস্থানের পরেও ব্যাপকহারে মাদক গ্রহণের কারণে অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন এবং নারীদের এ ধরনের অধ:পতন সামাজিক ছন্দপতনের বার্তা বহন করে থাকে। নায়িকা একার গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, শুধুমাত্র ঢাকা শহরে চিরুনি অভিযান চালালে দেখা যাবে উচ্চবিত্তদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা ও অপরাধে সক্রিয় হওয়ার অহরহ নমুনা দেখা যাবে। এসব কিছুও হয়তো বেরিয়ে আসতো না, যদি পুলিশের যুগোপযোগী ৯৯৯ সার্ভিস ব্যবস্থা চালু না হতো।
ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করা ডা. ঈশিতার সাফল্য, ডিগ্রি, পুরস্কার-খ্যাতি সবই ভুয়া মর্মে দৈনিক ইত্তেফাকে খবর প্রকাশিত হয়।সঙ্গত কারণেই খবর প্রকাশের সাথে সাথে উক্ত কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ ও দীর্ঘদিন ধরে ঈশিতার কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা রোগীরাও মর্মাহত হয়েছেন। কেননা, ডা. ঈশিতাকে নিয়ে উক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা গর্ববোধ করতেন এবং বিভিন্ন জায়গায় ঈশিতার জীবনের নানাদিক দিয়ে সগৌরবে আলোচনা হত। পক্ষান্তরে সেবাগ্রহীতারা যে বিশ্বাসের জায়গা থেকে সেবা গ্রহণ করতেন সে জায়গায় ঈশিতার সার্বিক কর্মকান্ড মুখ থুবড়ে পড়েছে। চিকিৎসক হয়েও প্রতারণা করে অর্থ আত্নসাৎ ও খ্যাতি অর্জনের জন্যই বিভিন্ন আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাওয়ার্ডসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্তির খবর প্রচার করতেন নিজ থেকেই। শুধু তাই নয়, টকশো আলোচনায় শাহেদের ন্যায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার তাড়া ছিলো ঈশিতার। করোনাকালিন সময়ে সাধারণ মানুষ ডাক্তারদের মানবিকতায় মুগ্ধতার বাণী ছড়িয়েছে এবং চরম কঠিন সময়ে ভুয়া সনদের দোহাই দিয়ে ঈশিতা চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থ আদায় করেছেন। যে সব সনদের উপর ভর করে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন শুধুমাত্র এমবিবিএস ছাড়া বাকি সব ভুয়া, কাজেই তার প্রশিক্ষণের গুণাগুণ সম্বন্ধে সরলভাবে যে কেউই মতামত প্রদান করতে পারে এবং এসকল কিছুর মান হবে অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রতারণার অভিনব কৌশল হিসেবে তিনি নিজেকে টকশো আলোচক, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, গবেষক, পিএইচডিধারী, মানবাধিকারকর্মী, সংগঠক, বিগ্রেডিয়ার জেনারেলসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে বিষয়টিকে প্রতারণা হিসেবে ধরা সহজতর হবে কেননা এ বয়সে এতসব অর্জন অসাধারণ মেধাবী না হলে কোনদিনই সম্ভব হবে না। পক্ষান্তরে, করোনা অতিমারির প্রেক্ষাপটে মানুষের মধ্যে একটি অস্বাভাবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বিশেষ করে সেবাদাতা সংস্থা ও সেবায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের আচার আচরণে দৃশ্যত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে ডাক্তার ও পুলিশের দায়িত্ববোধের কারণে সাধারণ মানুষ তাদের আচারাদিতে ব্যাপক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এর মধ্যে করোনার টেস্ট জালিয়াতির অভিযোগে ডা. সাবরিনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ, বর্তমানে মামলা বিচারাধীন।চিকিৎসাবিদ্যা পেশাটি অত্যন্ত মর্যাদার ও ইজ্জতের, এ পেশায় জড়িতদের মানুষ অসম্ভব সম্মান প্রদর্শন করে থাকে এবং তাদের কাছ থেকে অসম্মানজনক কর্মকান্ড কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় এবং সর্বশেষ হেলেনাকে পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে। বিতর্কের শেষ পরিণতি আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী চাকুরিজীবী লীগের কমিটি গঠনের বিজ্ঞাপন দেওয়াকে কেন্দ্র করে, এর পূর্বেও তিনি বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন কিন্তু গ্রেফতার হয় কমিটি গঠনের বিজ্ঞাপন দিয়ে। উল্লেখ্য, তিনি নামসর্বস্ব বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মূলত অর্থ আত্নসাৎ করা ও খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করার উদ্দেশ্যেই হেলেনা জাহাঙ্গীর ইতিপূর্বে অযাথিত কর্মকান্ড সংঘটন করে আসছিলো মর্মে সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়।টেলিভিশন টকশোতেও নিয়মিত বিচরণ ছিল হেলেনার, শুধু তাই নয় একটি টেলিভিশন চ্যানেল খুলে বসেছিলেন হেলেনা।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সখ্যতার সচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সাংবাদিক নিয়োগ দানের আড়ালে অর্থ আত্নসাতের অডিও বিবরণও ভাইরাল হয়েছে।রাজনৈতিক চেহারার আড়ালে সমাজসেবক, গায়ক, অভিনয়শিল্পীসহ নানা পরিচয়ে তিনি পরিচিত ছিলেন। পুলিশ আটক করার পর থেকেই থলের বেড়াল বের হয়ে আসছে, নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির তথ্য বের হয়ে আসছে। হেলেনাদের আটক করলেই হবে না, হেলেনাদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, হেলেনাদের যারা প্রতিষ্ঠিত করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ব্যক্তি হেলেনাদের শাস্তি দিয়ে কলুষিত সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করা দুষ্করই হবে।
অপরাধবিদেরা নারী অপরাধকে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য উপাত্ত দিয়ে বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। Opportunity Theory-তত্ত্বে বলা আছে, সমাজসৃষ্ট কারণে কিংবা প্রতিবেশের কারণে নারীরা যখন অপরাধ করার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ পায় ঠিক তখনই তারা অপকর্মে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।তাহলে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, সুযোগের অপ্রতুলতার কারণে নারী অপরাধ পূর্বে কম ছিলো।যুগোপযোগী প্রাসঙ্গিকতার কারণেই নারীরা বহুমুখী দায়িত্বও পালন করছে, কারণে-অকারণে কিংবা প্রয়োজনেই অপরাধকর্ম সংঘটিত করে ফেলছে। রিটা সিমন ১৯৭৬ সালে তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে এমন তত্ত্বই প্রদান করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে কিন্তু বিষয়টি প্রাসঙ্গিক কেননা সমসাময়িক সময়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যে সকল নারীদের আটক করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই অপরাধ এবং অপরাধীদের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।আড্ডায় এক প্রফেসর বলছিলেন, পূর্বের তুলনায় পারিবারিক সহিংসতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে শহর এবং গ্রাম উভয় এলাকায়, তবে সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদার ভয়ে সেটা অনেকেই প্রকাশ করছে না। এর পিছনের মূল কারণ হচ্ছে; গার্মেন্টস শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা নিয়মিত উপার্জন করছে এবং যারা মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত তাদের পরিবারের মেয়েরা সরকারি-বেসরকারি সেক্টরে চাকুরিতে যোগদান করে পরিবারের জন্য অবদান রাখছে। সে সুবাদে পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকাকে গুরুত্ব না দেওয়া হেতু সংসারে পারিবারিক অশান্তি ও সহিংসতা বিরাজ করছে।পুরুষতান্ত্রিকতা পরিবারের মধ্যে অধিকাংশ পুরুষই চর্চা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়, এ বোধ থেকে পুরুষদের সরে দাঁড়াতে হবে।প্রকৃতঅর্থে সব কিছুরই ভাল-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে; মন্দ দিকটিকে পরিত্যাগ করে ভাল দিকটিকে সাদরে গ্রহণ করা
উচিত। আবার নারীদেরকেও এ বিশেষ দিকটি মনে রাখা প্রয়োজন যে, সুযোগ পেলেও অপরাধ কর্মে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না।
অপরাধবিজ্ঞানের Marginalization Theory- তত্ত্বে মেডা চেজনি লিন্ড (১৯৮৬)-উল্লেখ করেন; কম উপার্জন, অপর্যাপ্ত চাকুরি, নিম্ন পর্যায়ে অবস্থান, পারিবারিকভাবে নির্যাতন সহ্য করা ইত্যাদি কারণগুলো একজন নারীকে অপরাধ প্রবৃত্তির দিকে আহবান জানায়।প্রকৃতঅর্থে এমনটাই হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, যে সকল নারীরা প্রতিষ্ঠিত এবং সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন সেসব নারীরাই আলোচিত অপরাধ সংঘটন করছে।কিন্তু এ তত্ত্বে উল্লিখিত কারণগুলোর জন্য নারীরা হতাশায় পর্যুদস্ত হয়ে অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে Paternalism Theory- তত্ত্বে থমাস (১৯৫০) বর্ণনা করেন এমনও দেখা যায় নারীদের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পুরুষেরা অপরাধ করে থাকে। আবার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা আসলে একটি মিথ, মূলত উৎপাদনশীল কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকেই নারীরা পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেমনিভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন ঠিক তেমনিভাবে অপরাধের মোহনীয়তার আবিষ্ট হয়ে উঠছে নানা প্রেক্ষাপটেই।এদিকে Masculization Theory-তত্ত্বে এডলার (১৯৭৫) উল্লেখ করেন, যে সব নারীরা পুরুষসুলভ আচরণ করে থাকে তারা মূলত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, কর্মক্ষম মহিলারা মারত্নক অপরাধ করে থাকে; বিশ্লেষকরা বলছেন যে সকল নারীরা কর্মজীবী তারা অন্য নারীদের চেয়ে ভয়ংকর অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে এবং এটি খুবই ভয়াবহ আকার সমাজে দেখা দিয়েছে।কাজেই, নারী অপরাধের বিশ্লেষণে সমাজবৈজ্ঞানিক কারণগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্বক্ষেত্রে হুবহু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত না হলেও অধিকাংশের সঙ্গে উপাদানগুলোর সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে।
নারী অপরাধের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক কারণগুলো জানা গেছে এবং অনেকেই এসব বিষয়ে অবগত রয়েছেন কিন্তু কারণগুলো জানা স্বত্ত্বেও কেন আমরা নারী অপরাধকে সহসাই নির্মুল করতে পারছি না সেটাই আলোচনার মূল বিষয় হওয়া উচিত।মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ঘৃণ্য জঘন্য নারীদের অপরাধলিপ্সু মনোবৃত্তিকে চিহ্নিত করার জন্য ইন্টেলিজেন্সি ইউনিটের সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে হবে, পাশাপাশি বিচারব্যবস্থাকেও আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে। কোন মামলা পেন্ডিং রাখা যাবে না, প্রয়োজনে বিশেষ আদালত বসাতে হবে, উদ্যোগ গ্রহণ করে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। অপরাধীকে সনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে মূল হোতাদেরও বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পারলেই হেলেনা, পিয়াসা, মৌ, সাবরিনা, ঈশিতাদের উত্থান বন্ধ করা সম্ভব হবে, না হয় আরও এমন চরিত্রের উত্থান ঘটতে পারে সহসাই। অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো চৌকস ও দায়িত্বশীল হতে হবে কেননা উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য বাজারজাতের দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অব্যশই নিতে হবে। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে মাদকের ছড়াছড়ি সর্বত্র সে বিষয়েও ব্যাপকভাবে তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ পুলিশেও ওসি প্রদীপের মতো অফিসাররাও রয়েছেন এখনো।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
তারিখ: আগষ্ট ০৯, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,