বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পতনে নব্বইয়ের মতো আরেকটা গণ–অভ্যুত্থান ঘটানোর সময় এসেছে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন বিএনপির এই নেতা।
আজ রোববার দুপুরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত ছাত্রদলের কর্মী জেহাদের স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব এই আহ্বান জানান। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতৃবৃন্দ ও জেহাদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ‘শহীদ জেহাদ দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৯০ সালে যে গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেদিনকার ছাত্র-জনতা স্বৈরশাসকের তখতে-তাউস উল্টে দিয়েছিল এবং সেদিনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেই সময় এসেছে এখন, আজকে সেই সময় উপস্থিত হয়েছে। আবার সেই ধরনের আরও দৃঢ়তার সঙ্গে আরও একটি গণ–অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, ‘আসুন আর সময়ক্ষেপণ নয়, আর কালবিলম্ব নয়। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। সময় এসেছে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি, ছাত্রদের ঐক্য গড়ে তুলি, বহুদলীয় ঐক্য গড়ে তুলি।’
অতীতের বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রতিবার যুগে যুগে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এই তরুণেরা, এই যুবকেরা, এই ছাত্ররা। এখনো তাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে, ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘তোমাদের দিকে ভবিষ্যৎ তাকিয়ে আছে। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি তোমাদের দিকে। তোমাদের জেগে উঠতে হবে, পরাজিত করতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় হাসিনা সরকারকে।’
ফখরুল বলেন, ‘তাদেরকে (সরকার) বিদায় করে একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নির্বাচন দিতে হবে, যে নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দমতো সরকার ও পার্লামেন্ট তৈরি করবে এবং মানুষ যে যাকে চায় ভোট দেবে এবং আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকেই দেব। এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে অবশ্যই এই দেশকে আমরা মুক্ত করব, দেশমাতা গণতন্ত্রের অবিসংবাদিত নেতা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব—এই হোক আজকে জেহাদ দিবসে আমাদের শপথ।’
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর স্বৈরাচারবিরোধী গণ–আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদলের কর্মী নাজির উদ্দিন জেহাদ। এর পর থেকে দিবসটিকে বিএনপি জেহাদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে রাজউক অ্যাভিনিউ মোড়ে শহীদ জেহাদ স্মৃতিস্তম্ভে বিএনপির নেতারা পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
দেশের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি। আমাদের কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। আমাদের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, আমাদের পার্লামেন্টকে ধ্বংস করেছে, আমাদের প্রশাসনটাকে ধ্বংস করেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। আজকে সেই জন্যই এই হাসিনা সরকারকে কোনোমতেই কোনো সময় দেওয়া যাবে না।’
ফখরুল বলেন, ‘আজকে মানুষজন কথা বলতে পারে না, লিখতে পারে না। সাংবাদিক ভাইয়েরা লিখতে পারেন না। বাইরে গিয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। যাঁরা কথা বলতেন, টেলিভিশনে তাঁরাও কথা বলতে সাহস পান না। বিদেশ থেকে কনক সারোয়ার তিনি কিছু সত্য কথা বলতেন। সর্বশেষ সত্য কথা যে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র গেলেন তাঁর…। এই কথা বলার পরে কনক সারোয়ারের বোনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। এ কোন দেশে বাস করি আমি। এটা তো জংলি দেশ। কোনো সভ্যতা নেই এখানে। আজকে এই অসভ্য জংলি দেশ তৈরি করেছে এই সরকার।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে চলে যেতে হবে। পরিষ্কার করে বলতে হবে—সরে দাঁড়াও, চলে যাও। এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ২০১২ সালে একটা ভ্রান্ত রায়ের মাধ্যমে পরিবর্তন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। যার ফলে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে আওয়ামী লীগ।
লন্ডন থেকে স্কাইপেতে এই আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নব্বইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হকের পরিচালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা শামসুজ্জামান, আসাদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির, মোস্তাফিজুর রহমান, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুদ্দিন আহমেদ, খন্দকার লুতফুর রহমান, সাইফুল আলম, আসাদুর রহমান খান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, কামরুজ্জামান, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, নাজির উদ্দিন জেহাদের বড় ভাই কে এম বশিরসহ সাবেক ছাত্রনেতারা বক্তব্য দেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১০, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,