করোনার কারণে দেশের পণ্য রপ্তানি খাত অনেকটাই বিপর্যস্ত। সেই ধকল কবে নাগাদ কাটবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। সেটি ঘটলেই রাতারাতি বাজারসুবিধা হারিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে রপ্তানিকারকদের। তাতে বাড়তি শুল্কের চাপে পড়ে রপ্তানি আয় ৫৩৭ কোটি ডলার বা ৪৫ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা কমতে পারে, যা দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। অন্য দেশগুলোর মধ্যে প্রতিবেশী মিয়ানমারের রপ্তানি আয় ৪৯ কোটি ৯১ লাখ ও নেপালের ২ কোটি ১ লাখ ডলার কমতে পারে। এ ছাড়া লাওসের ৬ কোটি ৬৩ লাখ ও তিমুর লেসেথোর মাত্র ৪২ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি ঝুঁকিতে পড়বে।
এলডিসি থেকে উত্তরণে বাণিজ্যে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেই শীর্ষ বাজারগুলোয় পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৭০ শতাংশই বর্তমানে বাণিজ্যসুবিধার আওতায় শীর্ষ ১২টি বাজারে হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হলেও কয়েক বছর বিদ্যমান বাণিজ্যসুবিধা পাব। তবে কিছু পাব না ধরে নিয়েই আমরা কাজ করছি। আমরা এখন বসে নেই। ইতিমধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএ) করা শুরু করেছি। ভুটানের সঙ্গে এফটিএ হয়ে গেছে। পাইপলাইনে আছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, জাপান। উন্নয়নশীল দেশ হয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাকেই সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’ তিনি জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যেসব দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে ৪৫টি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, সেগুলো আবার পুনরুজ্জীবিত করতে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে বাংলাদেশের গড় রপ্তানি ছিল ৪ হাজার ২১৪ কোটি ডলার (শুল্কসহ আমদানিকারক দেশের হিসাব অনুযায়ী)। তার মধ্যে ৫৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ শতাংশ, কানাডা ও জাপানে ৩ শতাংশ করে এবং অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, রাশিয়া ও তুরস্কে ২ শতাংশ করে রপ্তানি হয়। আর রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা ১২টি পণ্যের প্রথম ১১টিই হচ্ছে পোশাকের বিভিন্ন আইটেম। বাকি একটি হচ্ছে চামড়ার জুতা। সব মিলিয়ে পণ্য রপ্তানির ৭৬ শতাংশই এ ১২ খাত থেকে আসছে।
ডব্লিউটিওর হিসাব অনুযায়ী, এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশের ৪৮৪ কোটি ডলারের পোশাক, ১৮ কোটি ডলারের বস্ত্র, ১৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ১১ কোটি ডলারের মাছ ও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি কমবে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: অক্টোবর ০৩, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,