লেখক:রাহীদ এজাজ।
ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক কাঠামো (আইপিইএফ) নামে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নতুন অর্থনৈতিক জোটে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক মাস ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী ২ জুন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের অর্থনৈতিক সংলাপে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের এক কূটনীতিক গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আইপিইএফ ঘোষণা করেছে। নতুন এই অর্থনৈতিক জোটের অগ্রাধিকারগুলো কী, তা কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশকে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জানতে চাইলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত মার্চে ঢাকায় অংশীদারত্ব সংলাপের সময় থেকে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে আইপিইএফ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পরে নিয়মিত বিরতিতে ঢাকা ও ওয়াশিংটনেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আইপিইএফ নিয়ে ভবিষ্যতেও মতবিনিময় অব্যাহত থাকবে।
২১ শতকের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন এই অর্থনৈতিক কাঠামোতে ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে উত্তরণ ও সরবরাহব্যবস্থাকে টেকসই করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
টোকিও সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল প্রাথমিকভাবে ১২টি দেশকে যুক্ত করে আইপিইএফের আনুষ্ঠানিক যাত্রার কথা ঘোষণা করেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে এই জোটে আছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪০ শতাংশ আসে এই ১২ দেশ থেকে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নতুন এই অর্থনৈতিক কাঠামো ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করবে। এই কাঠামো যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের জন্য একটি শক্তিশালী, সুষ্ঠু ও সহনশীল অর্থনীতির পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
আইপিইএফে মূলত ব্যবসা, সরবরাহব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি ও অবকাঠামোর পাশাপাশি সুষম করব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন এই কাঠামো ঘোষণার মধ্য দিয়ে চীনের অঞ্চল ও পথের উদ্যোগের (বিআরআই) বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা পদক্ষেপটি দৃশ্যমান হলো। মূলত বিআরআইয়ের মাধ্যমে এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কমানোর বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই কথা বলে আসছিল।
অবশ্য আইপিইএফ কীভাবে কাজ করবে, তা বাংলাদেশের কাছে এখন স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের কয়েকজন কূটনীতিক প্রথম আলোকে জানান, এ ফোরামের গতিপ্রকৃতি কী হবে, তা পুরোপুরি জানার পর বাংলাদেশ এতে যুক্ততার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ূন কবীর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছরের মে মাসে আইপিইএফের ধারণা দিয়েছিলেন। গতকাল এই জোটের বিস্তারিত ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন জোটে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত এ ধরনের বড় কোনো অর্থনৈতিক জোটে যুক্ততার অভিজ্ঞতা নেই। ফলে এতে যুক্ত হতে হলে করব্যবস্থা, দুর্নীতি মোকাবিলাসহ অভ্যন্তরীণ নানা সংস্কার শেষ করে এগোতে হবে। এসব অভ্যন্তরীণ সংস্কার করতে বাংলাদেশ কতটা রাজি হবে, সেটা বড় প্রশ্ন।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মে ২৪, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,