প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির পেছনে থেকে সারা দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। বিএনপি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। এবার কাউকে সহজে ছাড় দেওয়া হবে না।
ব্যবসায়ীরা নৃশংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এবং দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রয়াসে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের দেওয়া সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যে কারণে আমরা সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যবাদী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছি। আপনাদের সহযোগিতা তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়নে আমাদের জন্য সহায়ক হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সবকিছু করার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, আমরা তাই করব।’
প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেন, নৈরাজ্যবাদীরা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য দেশে ও বিদেশে অব্যাহতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা রক্ষা করার জন্য আপনাদেরকে এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’ তিনি বলেন, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে আপনাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ব্যবসায়ীরা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানান এবং তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দেন। কেননা প্রধানমন্ত্রী সব সময় ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে তাঁদের সব দাবি পূরণ করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা সব সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন, সঙ্গে আছেন এবং সঙ্গে থাকবেন। আটজন ব্যবসায়ী তাঁদের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।
ব্যবসায়ীরা সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং যত দ্রুত সম্ভব দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য সারা দেশে কারফিউ জারি করেছে। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান প্রতিদিন কারফিউ জারি করে দেশ পরিচালনা করতেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত করল যে তারা সারা দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত নেই, বরং তারা যৌক্তিকভাবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর বিষয়। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি না হয়। পুলিশ মোতায়েন করে আমরা সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়েছি। যখন অগ্নিসংযোগ করা শুরু হলো, তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলল যে তারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয় এবং তারা এর নিন্দা জানাল। তারপরই আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছি, তার আগে নয়।’
যারা এ কথা বলার চেষ্টা করছে যে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সেনা মোতায়েন করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা ছাত্ররাজনীতি করে এসেছি।’
কোভিড-১৯ মহামারির মতো বিভিন্ন কঠিন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান বলেন, কোটা আন্দোলনে ভর করে বিএনপি-জামায়াত যখন সারা দেশে জ্বালাও–পোড়াও করছে, দেশের সম্পদ নষ্ট করছে, এই কঠিন সময়েও তাঁরা বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে আছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা প্রস্তুত এবং রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
‘এটা আসলে সংগঠিত অপরাধ’
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মতবিনিময়ে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে যে তাণ্ডব করা হয়েছে, তা চিন্তাই করা যায় না। এটা আসলে সংগঠিত অপরাধ। তিনি বলেন, ‘সরকারের পাশে আমরা ছিলাম, আছি ও থাকব।’
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর কারখানা চালু করার দাবি জানান। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অন্তত ই–মেইল যোগাযোগটা চালু করুন।’ অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ চলছে বলেও উল্লেখ করেন নাসিম মঞ্জুর।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ২৩, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,