ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো
একটি ফেসবুক পোষ্টে দেখেছিলাম এক ভদ্রলোক ‘ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো’ এই অদ্ভূত বাংলা শব্দবন্ধটির উৎস জানতে চাইছেন। শক্তি চট্টোপধ্যায়ের একটি কবিতার বইও আছে এই নামে। মনে হয় শব্দবন্ধটির উৎস অনেক পুরোনো। এর উৎস সম্পর্কে অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমিও এই সম্পর্কে বছর কয়েক আগে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেকের কাছেই ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলাম। তবে এব্যাপারে আমিও একটা মজার গল্প শুনেছি , কোথায় শুনেছি বা পড়েছি মনে নেই। সৈয়দ মুজতবা আলিও হতে পারেন। জোর দিয়ে বলতে পারছি না।
জয়পুরের মহারাজ একবার জাহাজে করে আফ্রিকা থেকে একটি জিরাফ আনান তার চিড়িয়াখানার জন্য। এইরকম অদ্ভুত দর্শন বিশাল আকৃতির জীব জয়পুর কেন আশেপাশের কেউ কখনও শোনেনি দেখা তো দূরের কথা। জয়পুর এবং আশপাশ থেকে দলে দলে সেই চিড়িয়াখানায় ভিড় জমাতো অদ্ভুত দর্শন সেই জন্তু দেখতে। আশেপাশের দেশীয় রাজারা সম্ভবতঃ ঈর্ষান্বিত হয়েই কিছু মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে রটিয়ে দিল যে এই রকম অদ্ভুত দর্শন জন্তুর উল্লেখ হিন্দু , মুসলমান বা ঈশাহী ধর্মগ্রন্থে কোথাও নেই তাই এই জন্তুটি ঈশ্বরের সৃষ্টি না, শয়তানের সৃষ্টি। একে দেখাও পাপ। জিরাফ দেখলে তাকে নরকে বা দোজখে যেতে হবে। এই ফতোয়াতে দর্শনার্থী প্রথম চোটে অনেকটা কমে গেলেও আস্তে আস্তে আবার দুয়েক জন করে আসতে লাগল। মানুষের কৌতুহলের জোর ধর্মীয় ফতোয়ার জোরের থেকেও শক্তিশালী মনে হচ্ছিল। তখন জয়পুরের মহারাজ একটু চালাকি করে রাতের দিকেও অনেকক্ষণ চিড়িয়াখানা খোলা রাখার ব্যবস্থা করলেন। ক্রমশঃ দেখা গেল যেসব ধর্মের ধ্বজাধারী দিনের বেলায় জিরাফ বিরোধী ফতোয়ার কথা ধর্মস্থানে ভক্তদের বোঝায় তারাই আবার অন্ধকার হলে চুপিচুপি সপরিবারে জিরাফ দেখতে চিড়িয়াখানায় যায়। এসব ভন্ড মৌলবাদীদেরই জয়পুরের লোকেরা
বলত এই ব্যাটারা দিনের বেলায় ধর্মে আছে রাতের বেলায় জিরাফে। বলা বাহুল্য ক্রমশঃ এই ফতোয়ারও কোনো মূল্য রইল না।
যাইহোক, এই শব্দবন্ধটির উৎস সম্পর্কে কেউ যদি
আরও কিছু আলোকপাত করতে পারেন তবে তা জানতে আগ্রহী।
সংগৃহিত
তারিখ: আগষ্ট ০২, ২০২০
মতামত:
১) জিরাফ বোবা
ধর্ম এবং তার প্রবক্তা যারা সবাই মুখে তাদের অন্তহীন বুলি- সেই বৈপরীত্য এবং আরও অনেক কিছুই শক্তিশেলে নিহিত।। ব্যক্তিগত পরিসরে ঋদ্ধ হবার জিনিস, ব্যাখ্যা করার নয়।
২) জিরাফের গলা অমন লম্বা হয়েছে অভিব্যক্তির কারণে। অর্থাৎ বিবর্তিত হয়ে আজকের জিরাফ এসেছে। কিন্তু ধর্মের কোনো বিবর্তন হয়নি, প্রাচীন যুগেও যা ছিল আজও তাই রয়েছে।
৩) শব্দবন্ধ এর উৎস আদৌ ভারতীয় নয়। জিরাফের লম্বা গলা ডারউইনের এভলুশন তত্ত্বের চাক্ষুস প্রমান। কিন্তু তা বাইবেলের creationist মতবাদের বিপরীতে। তাই ধম্মেও আছি জিরাফেও আছি – শব্দবন্ধ এর অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুই তত্ত্ব কে সমর্থন করা। যাঁরা ইচ্ছুক, স্প্যাগেটি-মিটবল মনস্টার সম্মন্ধে একটু পড়ে নেবেন, বেশ ইন্টারেস্টিং।
৪) ধর্ম হলো অবিবর্তনের প্রতীক যা পরিবর্তন হতনা।
কিন্তু জিরাফ বিবর্তনবাদের প্রতীক যার প্রমাণ এর লম্বা গলা আর বিবর্তন মানেই সময়ে সময়ে পরিবর্তন।
অর্থাৎ এই প্রবাদের অর্থ, পরিবর্তনেও আছি, অপরিবর্তনেও আছি৷ বিজ্ঞানেও আছি, অবিজ্ঞানেও আছি।
ওই সর্বঘটে কাঁঠালিকলার মতো।
রেটিং করুনঃ ,