এখন কথার অর্থ ও ধরণ পাল্টিয়েছে আগে বড় লোক বলতে বুঝাতো মান-সন্মানে, জ্ঞানে-গুণে যিনি পরিপূর্ণ কিন্তু এখন বড় লোক বলতে বুঝায় যার অর্থ-সম্পত্তি অঢেল। তাই এখন খুব দ্রুত বর্তমানের সজ্ঞায় বড় লোক অর্থাৎ দ্রুত নগদ টাকা ও জমির মালিক হওয়াটা আমাদের দেশের অনেক মানুষের মধ্যে একটি বড় প্রচেষ্টা, উচ্চ স্তর থেকে নিন্ম স্তরের প্রায় অনেকের মধ্যে কী ভাবে খুব দ্রুত বড় লোক হওয়া যায়! এই চিন্তাটি কাজ করছে।
মনে হয় না এখন আমাদের দেশের মত দ্রুত বড় লোক হওয়ার অধিক প্রবণতা অন্য কোন দেশে আছে !
যারা আগে থেকে নগদ টাকা ও জমির মালিক তারা ঋণ খেলাপি সেজে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে, সরকারী বা দূর্বলের জমি দখল করে, ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে দিনে দিনে কেউ ভূমি দস্যু, কেউ নদী পানি দস্, বন দস্যু, আবার কেউ ব্যবসায়িক দস্যুতে এমন কি কেউ জীবন হরণকারী দস্যুতে পরিণত হচ্ছে । অথচ কারো মধ্যে কোন অনুশোচনা নেই, নেই কোন সংশোষণের চেষ্টা।
একই ভাবে অনেকেই পিছিয়ে নেই যারা মধ্য বিত্তের তালিকায় আছেন- নানান কমিশন, ঘুষ বাণিজ্য, ভূয়া কাগজ-প্রত্র তৈরীর মাধ্যমে আবার কেউ বিষাক্ত ওষুধ তৈরী করে, বাজার জাত করে, অসহায় অশিক্ষিত মানুষকে সেবন করিয়ে, খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ ঘটিয়ে দ্রুত নগদ টাকা ও জমির মালিক হয়ে যাচ্ছে।
সাথে পিছিয়ে নেই নিন্ম শ্রেণী নামের তালিকার অনেকেই, হোক সে পিয়ন বা দপ্তরী কোন কোন না উপায়ে তার বাড়তির আয়ের চিন্তায় তার বেশি সময় ব্যয় আর পেয়েও যাচ্ছে দ্রুত নগদ টাকা আর টাকা জমিয়ে জমির মালিক হওয়া।
তাই বাদ থাকবে কেন ক্ষুদ্র সবজী বিক্রেতা ! চেয়ে বসছে কিছুটা বাড়তি দাম অনেক ক্রেতা আছে যার দরদাম করলে আত্ম সন্মানে বাঁধে তাই যে দাম হাকুক না কেন দিয়ে যাচ্ছে সেই দাম আর ফাঁকেও সবজী বিক্রেতাও মিশিয়ে দিচ্ছে বাসী পচা সবজী। খেটে খাওয়ার দলে যে রিক্সাওয়ালা, ঠেলা গাড়ি ওয়ালা তারও চাই বাড়তি আয়, ৭৫টাকার ভাড়া ১৫০ টাকা হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত ১২০টাকা ভাড়া আদায় করে ৪৫ টাকা বাড়তি আয়।
এমন বহু শ্রেনী মানুষের উদাহরণ টানা যায় আর খুব সংক্ষেপে লিখেও শেষ করা খুব কষ্টকর বিষয়, তবে ন্যয় নীতির মানুষ যে একেবারে হারিয়ে মুছে গেছে এমন তা নয়।যাই হোক না কেন সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হয় মুনাফা লোভী মানুষের স্যংখাই তুলনা মূলক ভাবে বেশি সৎ পথে আয়ের তুলনায়।
এখন অনেক বেশী বিশেষ করে সেবা খাতের যা মানুষের দূর্বল তম স্থান যেমন চিকিৎসা ও শিক্ষা এই দুই খাতে সবচেয়ে বিষাক্ত পদার্থের মিশ্রণ বেশি ঘটেছে। সবচেয়ে সংকটময় ও অসাহায়ত্বের শিকার তারাই যাদের নেই কোন বাড়তি আয় ও শুধু আছে সৎ পথের আয়টুকু অথবা কোন আয় নেই।
প্রয়োজনে হোক বা অপ্রয়োজনে হোক কিছু চিকিৎসক আছেন যারা আপনাকে ধরিয়ে দিবেন একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষার তালিকা, চিকিৎসকের সাফ জবাব তিনি প্রাচীন কালের অনুমান ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্বতিতে চিকিৎসা করেন না, তাই তার জানার প্রয়োজন শরীরের অনেক অংশের বর্তমান অবস্থা কী ! হোক তা রোগীর খুব সাধারণ রোগ।
চিকিৎসক নন কিন্তু চিকিৎসা পেশার সাথে জড়িত তারা কোন কোন কৌশল, গাফলতি, ফাঁক ফোকর বের করে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করবে সরকার তাকে যতই বেতন দিক না কেন ! সেবা খাতের জন-কল্যাণের যে সুবিধা সাধারণ মানুষের প্রাপ্য সেখানে তারা এমন ভূমিকায় বসেছে যে তারাই ঐ সেবা দেওয়ার মালিক তাই দিতে হবে নগদ অর্থ তবেই পাওয়া যাবে সরকারী সেবা যা কিনা বরাদ্ধ সরকারী খরচে।
অনেক শিক্ষকেই লোভে পড়ে হয়েছেন ছদ্মবেশি, নানান কায়দায় হাতিয়ে নিচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকদের কাছ থেকে নগদ অর্থ সাথে দিয়ে দিচ্ছেন ভুল জীবন গড়ার যাদুকরী কৌশল।
খুব দ্রুত বড় লোক অর্থাৎ দ্রুত নগদ টাকা ও জমির মালিক অনেকে হবেন না বা কেন ! তারা দেখছে তার খুব কাছের জন তরতর করে বিত্তশালী অর্থশালী হয়ে পরিবারে সমাজে নাম ধাম তৈরী করে ফেলেছেন, সমাজে এখন অনেক কদর। প্রায় বড় নেতার কাছাকাছি।
বড় ব্যবসায়ি দেখছেন তার কাছের ব্যবসায়ি বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতি অথচ তিনি হতে পারেন নি কম ব্যবসায়ের কারণে বলে তাই তিনি নেমে পড়লেন বাড়তি আয়ের সন্ধানে আলাউদ্দিনের চেরাগের খোঁজে একই ভাবে চাকুরী জীবি অফিসাররা দেখছেন সহকর্মী রাতারাতী অভিজাত পাড়ায় ফ্লাটের পর ফ্লাটের মালিক তাই অন্য সহকর্মীদের কেন পিছিয়ে থাকা তাই তারাও ছুটছে বাড়তি আয়ের নেশায়। সাময়িক বরখাস্ত, চাকুরী চলে যাওয়া কিম্বা প্রতিকী ভাবে জেলে যাওয়া ! সমস্যা কী অভিজাত পাড়ায় ফ্লাটের পর ফ্লাটের মালিক তো হওয়া গেছে, সমাজে পরিবারে নাম ধাম তো বেড়েছে।
চাকুরী জীবি ছোট কর্তা বা কর্মচারীদেরও একই চিন্তা। আর এই বিষাক্ত চিন্তা থেকে বাদ পড়েছে কিছু খেঁটে খাওয়া মানুষ আর গ্রামে সহজ সরল কৃষকেরা, বড় কথা তাদের হাতে কিছুটা বাড়তি আয়ের যে কোন সুযোগই নেই, নেই ভিন্ন চিন্তার কোন অবকাশ, তাদের মনে ও মাথায় শুধুই কাজ করে পরিশ্রমেই একমাত্র ধর্ম।
মনের সুখ শান্তি বাদ দিয়ে খুব দ্রুত বড় লোক অর্থাৎ দ্রুত নগদ টাকা ও জমির মালিক হওয়ার যে নেশা অনেকেই ভর করেছে তা আর দ্রুত কখনই বন্দ করা যাবে না – এই রোগ এখন খুব জটিল রোগে রূপ ধারণ করেছে।
এদেশে যদি কখনো একাধিক মহা-মানবের আবির্ভাব ঘটে তখনই হয় তো আমাদের সমাজ শুদ্ধ পথে যাত্রা শুরু করতে পারে, এর আগে আমাদের ক্রমাগত দেখে যেতে হবে শিশু নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, গরীবে উপর শোষণ, অসহায় মানুষের আহাজারী, আর দুর্বৃত্তদের দাপট।
তারিখ: সেপ্টম্বর ২৭, ২০১৭
রেটিং করুনঃ ,
অত্যন্ত বাস্তব কথা বলেছেন। দৌড় চলছে দৌড়, পয়সাওয়ালা হওয়ার দৌড়। কেউ থামতে না চায়, পিছু ফিরে না, বিবেকের মৃত্যু ঘরিয়ে।
ভাবছি আমিও কি তাদের মত নই। সুখ পাই, ছুটি বটে তবে বেমাপা, বেখােপ্পা নয়।
বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো লেখা।
অত্যন্ত বাস্তব কথা বলেছেন। দৌড় চলছে দৌড়, পয়সাওয়ালা হওয়ার দৌড়। কেউ থামতে না চায়, পিছু ফিরে না, বিবেকের মৃত্যু ঘরিয়ে।
আরো কিছু কথা যোগ করে দিয়ে লেখাটির মান বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ মালেক ভাই।
এইসব পোষ্ট না দিয়া বরং কিভাবে ধনী হবেন, দশটি উপায়, ভিডিও সহ টাইপের পোষ্ট দেন, পাবলিক খাইবে। :hiding:
ডেল কর্নেগী সাহেবের পুরো ৫০০ পাতার বই একেবারে মুখস্ত, কোন কাজ হয় নাই, যেই কেরানী সেই কেরানী এখনও, তবে আপনাদের দোয়া চাই। :bring:
গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট। ধন্যবাদ
লেখাটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।
মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন না হলে দ্রুত বড় লোক হওয়ার রোগ সহজে আরোগ্য লাভ সম্ভব নয় । ভালো একটি বিষয় তুলে ধরেছেন, নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে বৈধ আয়ের দিকে পা বাড়াতে হবে তবেই মুক্তি সমাজে আনা সম্ভব সুখ ও শান্তি।
বড় লোক হওয়া দোষের কিছু নয়, তবে দ্রুত বড় লোক হতে গোলেই বিপদ ওৎ পেতে থাকে। অবশ্য যদি বৈধ পথের অর্জন হয় তবে বিপদ না থাকারই কথা। অবৈধ পথের বড় লোক কখনই বড় লোক নয়। যতই সে অর্থ সম্পদের মালিক হোক না কেন ! সে লোভী কিম্বা দরিদ্র ।
অর্থ সম্পদ এমন পরিমাণে থাকা উচিত, যার চিন্তায় রাতের ঘুম যাতে হারাম না হয়ে যায়, যেন মনের শান্তি বিনষ্ট না হয়।
সু-চিন্তত মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ সেই সাথে শুভেচ্ছাও।