Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

‘দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ গল্পের চরিত্রদের ‘চাল’-চিত্র (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:হাসান ইমাম।।

উন্নয়নের যে রাজনৈতিক ‘ভাষ্য’ দাঁড় করানো হয়েছে, তাতে গণমানুষের বাস বা ভাত—কোনোটারই ঠাঁই হয়নি। তাই আজদাহা উড়ালপুলের নিচে রাত পার করা আজন্ত গৃহহীনদের দিকে নজর নেই কারও; আকাশচুম্বী দরদালানের পাশে ফুটপাতে পড়ে থাকা সম্বলহীনদের অবস্থারও কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তেমনি আলোচনায় নেই প্রশস্ত মসৃণ মহাসড়কের ধারে সংকীর্ণ ঝুপড়িঘরের মলিন বাসিন্দারা; ইতিউতি চলমান মেগা প্রকল্পের আশপাশের ‘স্মল’ গরিবগুরবাও সমানভাবে উপেক্ষিত।

‘উন্নয়নের ফেরিওয়ালাদের’ যেন এ কথাই এক দফায় মনে করিয়ে দিল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সংস্থাটির ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি প্রতিবেদন-২০২১’ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৫ কোটি ২০ লাখ মানুষ মাঝারি ও তীব্র খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। অর্থাৎ দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের তিন বেলার আহার জুটবে—এমন নিশ্চয়তা নেই। হাঘর, হাভাত এসব মানুষেরও অবশ্য উন্নয়নের ফিরিস্তি অজানা নয়।

হররোজ বেজে চলছে উন্নয়নের ঢক্কানিনাদ! স্বাভাবিকভাবেই এই উচ্চণ্ড শব্দে কারও কানেই পৌঁছাচ্ছে না ম্লান মানুষের কষ্টের উচ্চারণ। তাদের অভাবের কাতরতা, অসহায়ত্বের বেদনা, মানবিক বিপন্নতাই বড়জোর কাব্যের খোরাক হয়, তাদের খোরাকির বন্দোবস্ত হয় না। এফএওর প্রতিবেদন তারই সাক্ষ্য দেয়, দেশে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১২ লাখ। অবশ্য এ প্রতিবেদনে চলতি বছরের চিত্র পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিক দেখতে-শুনতে পায়, এমন একজন মানুষও বোধ করি দ্বিমত করবে না যে এ বছরের পরিস্থিতির আরও খারাপের দিকেই গড়িয়েছে।

করোনায় বড় ঝাঁকুনি খাওয়া বিভিন্ন খাত ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, অর্থনীতি সচল হচ্ছে, কিন্তু আগের গতি ফিরে পায়নি এখনো। এ কারণে কাজ হারানো বহু মানুষের আয়রোজগারের উপায়ও হয়নি। আর নিত্যপণ্যের বাজারে আক্ষরিক অর্থেই যেন ‘আগুন’ লেগে আছে। কে না জানে, আগুন দিয়ে আগুন নেভানো যায় না। তাই নিম্ন আয়ের মানুষেরও পেটের ‘আগুন’ নিভছে না! অথচ ‘দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ শিরোনামের গল্পের চরিত্রও তারা!

এসব বিপন্ন মানুষ কি জানে, গ্লোবাল ফাইন্যান্সের ২০২১ সালের তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৪০তম ধনী দেশ। সাময়িকীটির হিসাবে, ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এখন ৫ হাজার ৩০৭ ডলার। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার (সাড়ে ২৯ হাজার টাকা)।

এই গল্পের অন্য দিকটি উদ্ভাসিত হয় কিছু জরিপ, পরিসংখ্যান বা গবেষণায় চোখ বুলালে। প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের ‘বৈশ্বিক অসমতা’ প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের মোট আয়ের অর্ধেকের বেশি যাচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ ধনীর সিন্দুকে। অথচ বিশ্বের অর্ধেক মানুষের আয় মাত্র ৮ শতাংশ। করোনাকালে ২০২০ সালে অতিধনীদের সম্পদ বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ, ৬৪ শতাংশ। এর বিপরীতে এ সময়ে ১০ কোটি মানুষ পড়েছে চরম দারিদ্র্যের কবলে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘বৈশ্বিক অসমতা’ প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে দেশে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর আয় মোট জাতীয় আয়ের ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে, পিছিয়ে থাকা ৫০ শতাংশ মানুষের আয় মাত্র ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। ধনী-গরিবের আয়ের ব্যবধান কতটা, তা মাপার মতো ফিতা কি আমজনতার হাতে আছে?

বিশ্বব্যাংকও জানিয়ে দিয়েছে, গত দেড় দশকে দারিদ্র্য কমানোর প্রতিযোগিতায় শীর্ষ ১৫ দেশের তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ এ সময় ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়—দুটোই বেড়েছে।

২০১০ থেকে ২০১৯ সাল—এই ১০ বছরে বাংলাদেশে ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ার হার ছিল ১৪ দশমিক ৩। ওয়েলথ এক্সের ‘আ ডিকেড অব ওয়েলথ’ শীর্ষক গবেষণা বলছে, এ হার বিশ্বের সর্বোচ্চ। সম্পদশালীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারে বিশ্বের তাবড় তাবড় অর্থনীতিকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। ফুটনোট হলো, ৫০ লাখ ডলার বা অন্তত ৪০ কোটি রেস্ত যাদের পকেটে, এ ক্ষেত্রে ধনীর তকমাটা তাদের।

ওয়েলথ এক্সের গবেষণার প্রতিফলন দেখা যায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবেও। ওই হিসাব অনুযায়ী দেশের ৩৮ শতাংশ সম্পদের মালিকানা মাত্র ১০ ভাগ মানুষের হাতে। আর সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ মাত্র ১ শতাংশ সম্পদের মালিক।
বিজ্ঞাপন

দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়েছে—এ কথা বলছে দেশীয় সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনও (এমএসএফ)। তাদের হিসাবে, দেশে বছরে পাঁচ হাজারের বেশি ব্যক্তি নতুন করে কোটিপতি হচ্ছেন। দেশের প্রবৃদ্ধি গুটিকয় মানুষ ভোগ করেন—এমন অভিমত দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়েরই বহিঃপ্রকাশ ক্রমাগত বৈষম্য বৃদ্ধি ও অসমতা।

এমএসএফ ‘উন্নয়ন’-এর আগে ‘দৃশ্যমান’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। ক্ষুধা তো ‘দৃশ্যমান’ নয়। তাই দেশের সোয়া পাঁচ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা কী বস্তু, এই মানুষগুলো ঝুঁকিতে নাকি বিপদে, তা নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’ থেকেই যায়! এ কারণে এতে চলমান ‘দৃশ্যমান’ উন্নয়ন ব্যাহত হবে বলে মনে হয় না।

লেখক: হাসান ইমাম সাংবাদিক।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ০১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ