‘পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে’ ঘেরাও, পদযাত্রা ও বড় সমাবেশের মতো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে বিএনপি। কিন্তু মাঠে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে, সেই চিন্তাও রয়েছে দলটিতে। এখন মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বাধা এলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে, দলটি সেই আশঙ্কাও করছে। মহাসমাবেশের (২৭ জুলাই) পর জুলাই মাসের একেবারে শেষের দিকে দুই দিনের অবস্থান বা পদযাত্রার মতো কর্মসূচি নিয়ে বিএনপিতে আলোচনা রয়েছে। শোকের মাস আগস্টে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রাখতে বিএনপি মানুষকে সম্পৃক্ত করার কিছু কর্মসূচি রাখবে। আগামী সেপ্টেম্বরে নির্বাচন কমিশন, সচিবালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও—এ ধরনের কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা রয়েছে দলটিতে। তবে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কী পরিস্থিতি হয়, তার ওপরও নির্ভর করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে দলটি। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনেও হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বা যেসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা করার সুযোগ থাকে, এ ধরনের কর্মসূচি না দেওয়ার চেষ্টা থাকবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি বলেন, সরকারের একগুঁয়েমির কারণে রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি এক দফা দাবিতে মাঠে নেমে সমঝোতার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে যত চাপই আসুক না কেন, সরকারের পদত্যাগের প্রশ্নে কোনো আলোচনা হওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। এর বাইরে এক দফা নিয়ে আলোচনা বা সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।
‘আলোচনার সম্ভাবনা কম’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিএনপির এক দফা দাবি যদি আওয়ামী লীগ মেনে নেয়, তাহলে রাজনৈতিকভাবে তাদের পরাজয় হবে, এমন ধারণা তৈরি হতে পারে। ফলে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেবে না।
এক দফা দাবি তুলে বিএনপি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার পরিকল্পনা করেছে—এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনায় যেতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ।
যদিও নির্বাচন নিয়ে এবার ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকেরাও বেশ তৎপর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। বিএনপি মনে করছে, সামনের দিনগুলোতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়বে। আর দেশের ভেতরে বিরোধী দলগুলো চাপ বাড়াতে পারলে আন্দোলন একটা পরিণতির দিকে যেতে পারে।
প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি আগামী নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে মাঠ ছেড়ে দিতে চায় না। এবার নির্বাচন থেকে বাইরে থাকলে বিএনপি অস্তিত্বের সংকটে পড়বে—এমন চিন্তা দলটির নেতাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ তাদের জন্য আগামী নির্বাচনকে দেখছে ভিন্নভাবে। তারা মনে করছে, নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে কার্যত একটা সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে। ফলে দুই দলই নিজ নিজ অবস্থানে অটল থেকে পরিস্থিতি তাদের মতো করে সামলাতে চাইছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, রাজপথে গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে তাঁরা এক দফা দাবি আদায় করতে চান।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সে রকম কোনো উদ্যোগ দেখি না।’
তবে বিরোধী দলের আন্দোলন ও বিদেশিদের তৎপরতা—কোনোটাকেই চাপ হিসেবে আমলে নিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক ১৪–দলীয় জোট। এই জোটের নেতারা বলছেন, যথাসময়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেবে সরকার।
১৪–দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে আলোচনা বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। তবে তাঁর মতে, রাজনীতি হয়তো অনিশ্চয়তার দিকেই এগোচ্ছে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জুলাই ২৪, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,