অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক প্রবণতা হিসেবে বাজেটের আকারও বাড়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই ৪৯টি বাজেটে রেখার সোজা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। এবারও গতবারের তুলনায় বাড়ছে বাজেটের আকার।
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে একটি বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের পুনর্বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। এ লক্ষ্য পূরণে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আয়তন বাড়ছে। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, বড় বাজেটে সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। প্রথমে গণতান্ত্রিক, এরপর সামরিক, শেষে আবারও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। স্বাধীনতার পর ৪৯টি অর্থবছরে ১১ জন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পেশ করেছেন। সব মিলিয়ে মোট ১৩ জন বাজেট পেশ করেছেন। ১৯৭২ সালে প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। শেষ প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটের নানা তথ্য
প্রথম বাজেটের পর এক হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল তিন বছর। এরপর ১৪ বছর লেগেছে ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে। ১৯৮৮ সালে এ বাজেট পেশ করা হয়। এরপর ২১ বছর পর এক লাখ কোটিতে উন্নীত হয় বাজেটের আকার। এটি ২০০৯ সালের কথা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে এক লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করে। এর ১০ বছরের মাথায় এবার একই সরকার ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দেয়।
স্বাধীনতা–পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন ওই বাজেট পেশ হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ওই দিন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, অর্থাৎ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর আরও দুবার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ, সেটি সবশেষ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকার।
১৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। দুজনেই ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিতই টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন আওয়ামী লীগের হয়ে। তিনি প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-৮৩ সালে, এরশাদের শাসনামলে। সেটার আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। আর সবশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তার বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার।
অর্থমন্ত্রীরা বাজেট বক্তৃতায় বিভিন্ন ধরনের উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন। তবে একই উদ্ধৃতি দুজন অর্থমন্ত্রীর ব্যবহার বিরল। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরের বাজেটে এম সাইফুর রহমান বক্তব্য শেষ করেছিলেন এভাবে—‘পৃথিবীর একটি সুপ্রাচীন দেশের একটি উক্তির কথা মনে পড়ে: “হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় একটি পদক্ষেপ দিয়েই।” আসুন আমরা সমবেত হয়ে সেই একটি পদক্ষেপ নেই।’ পরে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যের শেষে অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া বলেছিলেন, ‘চীনা ভাষায় একটি প্রবাদে যথার্থই বলা হয়েছে, “হাজার মাইলের ভ্রমণ শুরু হয় একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপের মাধ্যমেই।” আমাদের গন্তব্য যত দুর্গমই হোক না কেন আমরা চলতে শুরু করেছি।’
এক অর্থবছরে দুবার বাজেট উপস্থাপনের উদাহরণও আছে। যেটি হয়েছিল ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এর পরে নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়ে মূল আর্থিক কাঠামো ঠিক রেখে নতুন করে বাজেট উপস্থাপন করেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া।
পঞ্চম মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ জন অর্থমন্ত্রী ২১টি বাজেট দিয়েছেন। বিএনপির তিন মেয়াদের শাসন আমলে ৩ জন ১৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। জাতীয় পার্টির আমলে নয়টি বাজেট চারজন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তিনটি বাজেট দিয়েছে দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এ এম এস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট ঘোষণা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুটি বাজেট ঘোষণা করেন এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি ২০০৭-০৮ অর্থবছর ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অসুস্থতার কারণে পুরো বাজেট সংসদে উপস্থাপন করতে না পারায় উত্থাপন করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুন ০৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,