আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন বিশেষায়িত সংস্থার লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার, চিহ্নিত অপরাধী ও মাদক কারবারি গ্রেপ্তারে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে সেনা, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা রয়েছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অভিযানকেন্দ্রিক সমন্বয় সভা হয়। এ ছাড়া পৃথকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করেন। সেখানে অভিযানকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এছাড়া অস্ত্র উদ্ধারে মহানগর ও জেলায় আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ সদরদপ্তর জানিয়েছে, থানা ও ফাঁড়ি থেকে সব মিলিয়ে পুলিশের ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র এবং ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২ রাউন্ড গুলি লুট হয়েছে। এছাড়া ৩১ হাজার ৪৪ রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল, ৪ হাজার ৬৯২ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড লুণ্ঠিত হয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৭.৬২ বোরের রাইফেল রয়েছে ১ হাজার ১৪৭টি। ৭.৬২ বোরের পিস্তল ১ হাজার ৫৫৬টি।
এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৭৬৩টি। এ ছাড়া টিয়ার শেল ২২ হাজার ২০১টি এবং দুই হাজার ১৩৯টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে। এখনও উদ্ধার হয়নি ২ হাজার ৬৬টি আগ্নেয়াস্ত্র। গুলি উদ্ধার হয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮২ রাউন্ড। এখনও বেহাত রয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৬৬০ রাউন্ড গুলি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, যৌথ অভিযানে সারাদেশে এলাকাকেন্দ্রিক চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে। এছাড়া ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অনেকে নির্বিচারে গুলি করে এখন গা-ঢাকা দিয়ে আছেন তাদের ওপর বিশেষ নজর থাকবে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, যৌথ বাহিনীর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসানের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার ডিএমপি সদরদপ্তরে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র জমা না দিলে তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য হবে। তাছাড়া, কোনো ব্যক্তির কাছে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষিত থাকলে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ওই সময়ে পর্যন্ত যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্রসংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরেক কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্রসহ চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে জোর দেওয়া হবে। সীমান্ত এলাকায় কোনো অপরাধী পলাতক থাকলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আনা হবে আইনের আওতায়।
গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার দিন মঙ্গলবার শেষ। রাত ১২টা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করবে। আপনারা অস্ত্র উদ্ধারসহ সব বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ দেখতে পাবেন।
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাদক একটি বড় সমস্যা। এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। মাদকের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা হবে। মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমান্ত সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে লুট ৯৮টি, লাইসেন্স স্থগিত ১৫৮টি অস্ত্র উদ্ধারে রাত থেকে যৌথ অভিযান শুরু হচ্ছে। রাজশাহীতে লাইসেন্স স্থগিতকৃত ১৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়নি। লুট হওয়া ৯৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়নি।
সূত্র:সমকাল।
তারিখ: সেপ্টম্বর ০৪, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,