সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে আজ করোনার টিকা দেওয়া হবে। শুরুর দিন ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তবে নিবন্ধন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।
সরকারের কাছে ৭০ লাখ টিকা আছে। এর ২০ লাখ টিকা ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে। বাকি ৫০ লাখ টিকা সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কিনেছে। এই টিকা ৩৫ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ।
একনজরে
* ১০০৫টি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। ঢাকায় ৫০টি হাসপাতালে।
* সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে।
* কেন্দ্রে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে, তবে টিকা নিতে হবে অন্যদিন।
* প্রথম দিন টিকা দেওয়ার সময় গ্রহীতাকে বলে দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ।
দেশব্যাপী সুষ্ঠুভাবে করোনার টিকা বিতরণ ও প্রয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি জাতীয় পরিকল্পনা করেছে। টিকাদানকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ও জেলায় জেলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর একাধিক হাসপাতালসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। যদিও জাতীয়ভাবে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি গতকাল রাত পর্যন্ত দূর হয়নি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় স্থায়ী সমাধান এনে দিতে পারে টিকা। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরু হয়েছে। আজ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরু হচ্ছে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, করোনা থেকে দূরে থাকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওই দিন ২১ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হয়। এর পরদিন রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে ৫৪৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, টিকা নেওয়া ৫৬৭ জনই সুস্থ আছেন। কারও বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
প্রস্তুতি ‘এ’ মানের
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রাজধানীর টিকাদানকেন্দ্রগুলোর প্রস্তুতি দেখে এসে বিকেলে অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রস্তুতির বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, প্রস্তুতি ‘এ’ মানের।
পরামর্শ
* ১৮ বছরের কম বয়সী, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মা টিকা নিতে পারবেন না।
* এখনই জ্বরে ভুগছেন, তিনি টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
* করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর চার সপ্তাহ পার হয়নি, এমন ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া যাবে না।
* ওষুধে অ্যালার্জি আছে এমন ক্ষেত্রে টিকা না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের মুখপাত্র অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, রোববার সারা দেশে ২ হাজার ৪০০টি দল টিকা দেবে। প্রতিটি দলের ১৫০ জনকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি আছে। সেই হিসাবে ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি আছে।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।’ নিবন্ধনকারী ব্যক্তি কোন টিকাকেন্দ্রে কবে টিকা নিতে পারবেন, তা মুঠোফোনে খুদে বার্তায় জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু নিবন্ধনকারীরা খুদে বার্তা পাচ্ছেন না। খুদে বার্তা না পেলে কী করে একজন টিকা নেবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘খুদে বার্তা পাওয়ার পর অন্য দিন গেলেও তাঁকে টিকা দেওয়া হবে।’
আজ টিকাদান শুরু হয়ে তা কত দিন চলতে থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সরকারি কর্মকর্তারা। গত মাসে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, প্রতি মাসে দুই সপ্তাহ ধরে টিকা দেওয়া হবে, সরকারি ছুটির দিন ছাড়া। গতকাল মহাপরিচালক বলেছেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমরা টিকা দিতে থাকব।’
টিকাকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, টিকাকেন্দ্রে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের দিনই টিকা দেওয়া হবে না। কোন দিন টিকা দেওয়া হবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: ফেব্রুয়ারী ০৭, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,