নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা ‘দেখামাত্র গুলি’র একটি ঘটনাও ঘটেনি বলে দাবি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী সৃষ্ট অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের তরফে যেসব ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার কিছু কিছু বিষয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে রোববার রাতে দীর্ঘ এক বিবৃতি প্রচার করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে গত ক’দিনের সহিংসতাকে ‘টেরোরিস্ট অ্যাক্টস’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, সেটির পর বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সহিংসতা দমনে ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর’ কোনো ঘটনাও ঘটেনি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, মূলত নজরদারি, নির্দিষ্ট স্থানে আটকে পড়া আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উদ্ধার এবং অগ্নিনির্বাপণে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। জাতিসংঘের লোগোযুক্ত একটি সাঁজোয়া যান অসাবধানতাবশত মোতায়েন করা হয়েছিল জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সাদা রঙের একটি এন্টি পার্সোনাল ক্যারিয়ার মোতায়েনের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
‘জাতিসংঘের লোগো’ মুছতে রঙ ব্যবহার করা হলেও তা দৃশ্যমান ছিল জানিয়ে বলা হয়, প্রশ্নবিদ্ধ যানটি সেবা কার্যক্রম থেকে দ্রুতই সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ এখন পুরোপুরি চালু হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হয়, অস্থিরতা ও সহিংসতার পুরো সময়কালে ভূমিভিত্তিক এবং মোবাইল টেলিযোগাযোগসহ যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমগুলো কার্যকর ছিল। কারফিউ জারির পরও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা ছাড়ের অনুমতিসহ সর্বদা কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন। সরকার যেকোনো মূল্যে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারকে সমুন্নত রেখেছে এবং তা অব্যাহত রাখবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নজিরবিহীন ধ্বংসলীলা চালিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সেটি মোকাবিলায় সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাবে। এরই অংশ হিসেবে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রয়াসে সরকার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে আগ্রহী। যাতে সমাজে কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হবে এবং নিরাপদ পরিবেশে তাদের সম্ভাবনার বিকাশ ঘটবে।
বাংলাদেশে সামপ্রতিক সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং গণমাধ্যমসহ কিছু আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উদ্বেগ সরকার নোটে নিয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বিশেষ করে অপপ্রচার, ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তির ব্যাপক প্রচারের প্রেক্ষাপটেও অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। সরকার সব আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আশ্বস্ত করতে চায় যে, সরকার এবং জনগণের সময়োপযোগী এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার যখন বিয়োগান্ত প্রাণহানি, হতাহত এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির মূল্যায়ন করছে, তখন সামপ্রতিক সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মানবিক ক্ষতি কতোটা, সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ওই ক্ষয়ক্ষতির বিচার নিশ্চিত করার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস নিহতদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জীবিকার সুযোগেরও আশ্বাস দিয়েছেন। সরকার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের দ্বারা ভুক্তভোগী ট্রমা মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সংবেদনশীল রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি এখন স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি অংশের পরিচালিত শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং মারপিটের রাজত্বের বিস্তার ঘটিয়েছে। তারা কিছু সহিংস চরমপন্থি গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে জনজীবনকে ব্যাহত করে এবং অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের চক্রান্তের পুনরাবৃত্তির স্বার্থে ছাত্রদের আন্দোলনের দখল নিয়েছিল। স্বার্থান্বেষী ওই মহল একইভাবে এখন স্থানীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার আইনানুগ ব্যবস্থা এবং প্রতিক্রিয়াগুলোকে ‘ছাত্র বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন’ হিসেবে উপস্থাপন করতে তার বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছাত্রনেতারা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেও এ ধরনের বিকৃত উপস্থাপন ভিত্তি পেয়েছে।
সরকার আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে ইস্যুভিত্তিক ছাত্র আন্দোলনকে পরবর্তী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এক না করার অনুরোধ জানায়। কারণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীকে আইনসংগতভাবে মোতায়েন এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে কারফিউ আরোপের প্রয়োজন হয়। বিবৃতিতে খোলাসা করেই বলা হয়, এসব ঘটনায় দায়ীদের সংশ্লিষ্টতা যেটাই হোক না কেন নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে সবগুলো হত্যাকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সূত্র: মানবজমিন।
তারিখ: জুলাই ৩০, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,