প্রসিদ্ধ ইরানী কবি, গণিতজ্ঞ, বৈজ্ঞনিক, জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম আমাদের দেশে সব চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছেন তাঁর ফার্সী ভাষায় লিখা তাঁর এই বিখ্যাত রুবাইয়াৎ- এর মাধ্যমে। বাংলা ভাষায় অনেক কবি এর বাংলা অর্থও করেছেন।
” গোইয়ান্দ বেহেশত্ আদম বা হুর খোশ আস্ত্
মান মীগোইয়াম কেহঃ আবে আংগুর খোশ আস্ত্
ইন নগদ্ বেগীর ও দস্ত্ আয আন নসিয়েহ্ বেদার
কাহওয়াযে দহলে বেরাদর আয্ দুর খোশ আস্ত্ । “
ফিটজেরাল্ডের ইংরেজী অনুবাদেঃ
” Some for the Glories of this world;
and some Sigh for the prophets Paradise to come;
Ah, for the Cash, and let the promise go,
Nor heed the music of a distant Drum !! “
( Rubai XI )
নূরুন নাহার বেগম নামে একজন লেখিকা বাংলায় অনুবাদ করে লিখেছেন-
” অনেকেই বলে বেহেশতে আনান্দ হুর পরীতে
আমি ( খৈয়াম) বলি আংগুরের রস পানে আমার সব আনান্দ।
এটা নগদে গ্রহন কর আর বাকি হিসাব থেকে নিজেকে দুরে রাখো।
কেননা দূরের ঢোলের আওয়াজ শুনতে অনেক মধুর মনে হয়।”
ঢোলের শব্দ খুব কাছ থেকে কানে আসলে মধুর লাগার চেয়ে বরং বিরক্ত লাগে, কিন্তু দুরের ঢোলের আওয়াজ শুনতে অনেক মধুর। হাতের কাছের বা বর্তমানের অনেক কিছুকে গুরুত্বহীন মনে হয়, বিরুক্তিকর মনে হয়। সময়ের উপলদ্ধি সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা যায় না, জীবনকে জানার সময় অজানা রাখা হয়। অনেকেই বর্তমানের সুখ ও ভোগ থেকে বিরত থেকে দুরের সুখ ও ভোগের কথা চিন্তা করে জীবনকে নিরানন্দ, বেদনা বিধুর করে রাখে। নগদে বা বর্তমানকে উপভোগের প্রতি কবি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁর এই এই বিখ্যাত রুবাইয়াৎ- এ।
অনেক দুরের ভাবনায় আমাদের সমাজের অনেক অভিভাবক প্রিয় সন্তানের ভালো ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজেদের সুখ শান্তি, ভোগ বিলাস থেকে নিজেদেরকে বিরত রেখে সন্তানের অনেক দুরে ভাবনায় বিভোর থাকেন। ভবিষ্যতে মানুষ হওয়া সন্তানরাই বাবা-মাকে সুখে শান্তিতে রাখবেন এই আশায় মগ্ন থাকেন। কবির পরামর্শ নগদে সুখ উপভোগ করা, জীবনকে অর্থবহ করা। সন্তান নিজের চিন্তা ধারায় নিজের পথ ধরে এগিয়ে যাবে সন্তানের অনেক দুরের ভাবনায় বিভোর না থেকে নিজেরা যেন জীবনটাকে পূর্ণ ভাবে উপভোগ করে নেন।
ওমর খৈয়ামের এই জীবন দর্শন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে আর পশ্চিমাদেশগুলিতে ওমর খৈয়ামের জীবন দর্শন ব্যপক ভাবে গৃহিত হয়। অনেক দূরে কি আছে না আছে সেই চিন্তায় বিভোর না থেকে, বড় চিন্তায় বিভোর না থেকে বর্তমানের উপর জোড় দিয়ে, জীবনকে প্রফুল্ল রেখে, জীবনকে উপভোগের লক্ষ্যে নগদ সময়কে প্রাণবন্ত করার কথা বলেছেন তিনি বেশ দৃঢ় ভাবে।
বাংলায় কবি কান্তি ঘোষ এই বিখ্যাত রুবাইয়াৎ- এর শেষের দুই লাইন অনুবাদ করে লিখেছেন –
” নগদে যা পাও হাত পেতে নাও,
বাকীর খাতায় শূণ্য থাক –
দুরের বাদ্য লাভ কী শুনে ! –
মাঝ খানে যে বেজায় ফাঁক!! “
কবি কান্তি ঘোষ তার অনুবাদে নগদে যতটুকু পাওয়া যায় তাই নিয়ে জীবনকে উপভোগ করতে বলেছেন দূরে, বহু দূরে অনেক পরে কী হবে এই চিন্তা থেকে বিরত থেকে বর্তমানকে উপভোগ করতে বলেছেন। কবি কান্তি ঘোষের এই অনুবাদটির মধ্য দিয়ে ওমর খৈয়াম বাংলা পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
রেটিং করুনঃ ,
চমৎকার উপস্থাপনা।
:rose:
এই রকমরে একটা লেখা আগেও কোথাও মনে হয় পড়েছিলাম।
স্মৃতি শক্তিটা বেশ প্রখরই বলা যায়, হয় তো পড়ে ছিলেন প্রথম আলোতে না হয় ঘুড়িতে। মাঝে মাঝে আরও কিছু পর্ব থাকবে ওমর খৈয়ামের উপর।
খুব একটা প্রখর বলা যাবেনা, ঝাপসা ভাবে শুধু মনে হয়েছে আগে দেখেছি। আর কিছু না।
অনেক গভীর দর্শণ, জানা হলো অনেক জীবনের অনেক গভীরের কথা।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক গভীরের কথা জানা হলো, অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
দূরের ঢোলের আওয়াজ
আশা জাগানিয়া স্বপ্ন দেখায়
সুতরাং এর মোহ থেকে নিস্কৃতি নেই।
ভবিষ্যতের আশা ছেড়ে দিলে মৃত্যু চিন্তা
ভর করবে। তাই বাজতে থাকুক ঢােল দূরে………………
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ নূরু ভাই।
ওমর খৈয়ামের এই জীবন দর্শন থেকে তুলে ধরে চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন রব্বানী ভাই। ভালোলাগা রইলো এবং শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। :-)
প্রাণ-বন্ত মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপা, ওমর খৈয়াম লিখতে গিয়ে যদি নিজের চিন্তা চেতনাটা বাড়ে এই জন্য লেখাগুলি লেখা।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানবেন আপা।