Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

দুঃখকে তোমার কোনো ভয় নেই, সেও ভালোবাসে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়

Share on Facebook

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় জন্মঃ- ২৫ নভেম্বর, ১৯৩৪ – মৃত্যুঃ- ২৩ মার্চ, ১৯৯৫, কবির মৃত্যুদিনে কবির প্রতি আমাদের অনেক অনেক শ্রদ্ধা।

প্রথম উপন্যাস লেখেন ‘কুয়োতলা’। কলেজ জীবনের বন্ধু সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে চাইবাসায় আড়াই বছর ছিলেন। সেই সময়ে তিনি নিজেকে একজন লিরিকাল কবিতে পরিণত করেন। একই দিনে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখে ফেলার অভ্যাস গড়ে ফেলেন তিনি। তিনি নিজের কবিতাকে বলতেন পদ্য। যে চারজন কবিকে ১৯৬১-এর হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয় তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। অন্য তিনজন হলেন সমীর রায়চৌধুরী, দেবী রায় এবং মলয় রায়চৌধুরী। মতান্তরের জন্য ১৯৬৩ সালে তিনি হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করে কৃত্তিবাস গোষ্ঠীতে যোগ দেন। তিনি প্রায় ৫০টি হাংরি বুলেটিন প্রকাশ করে ছিলেন। পরবর্তীকালে কৃত্তিবাসের কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধধ্যায়ের নাম সাহিত্যিক মহলে একত্রে উচ্চারিত হতো, যদিও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলন এর ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং কৃত্তিবাস পত্রিকায় ১৯৬৬ সালে সেই মনোভাব প্রকাশ করে সম্পাদকীয় লিখে ছিলেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের জয়নগর-মজিলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্রের কারণে তিনি স্নাতক পাঠ অর্ধসমাপ্ত রেখে প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়েন, এবং সাহিত্যকে জীবিকা করার উদ্দৈশ্যে উপন্যাস লেখা আরম্ভ করেন।

পুরস্কার
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার সহ তিনি একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।
………..
তথ্য সংগৃহীত – প্রতাপ সাহা । ধন্যবাদ।
……….

কাব্যগ্রন্হ
হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য (১৯৬২)
ধর্মে আছো জিরাফেও আছো (১৯৬৭)
সোণার মাছি খুন করেছি (১৯৬৮)
অন্ধকার নক্ষত্রবীথি তুমি অন্ধকার (১৯৬৮)
হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান (১৯৬৯)
চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৯৭০)
পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি (১৯৭১)
প্রভু নষ্ট হয়ে যাই (১৯৭২)
সুখে আছি (১৯৭৪)
ঈশ্বর থাকেন জলে (১৯৭৫)
অস্ত্রের গৌরবহীন একা (১৯৭৫)
জ্বলন্ত রুমাল (১৯৭৫)
ছিন্নবিচ্ছিন্ন (১৯৭৫)
সুন্দর এখানে একা নয় (১৯৭৬)
কবিতায় তুলো ওড়ে (১৯৭৬)
ভাত নেই পাথর রয়েছে (১৯৭৯)
আঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল (১৯৮০)
প্রচ্ছন্ন স্বদেশ (১৯৮১)
যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮৩)
কক্সবাজারে সন্ধ্যা (১৯৮৫)
ও চির – প্রণম্য অগ্নি (১৯৮৫)
মিষ্টি কথায়, বিষ্টিতে নয় (১৯৮৫)
সন্ধ্যার সে শান্ত উপহার (১৯৮৬)
এই তো মর্মর মুর্তি (১৯৮৭)
বিষের মধ্যে সমস্ত শোক (১৯৮৮)
আমাকে জাগাও (১৯৮৯)
ছবি আঁকে ছিঁড়ে ফ্যালে (১৯৯১)
জঙ্গলে বিষাদ আছে (১৯৯৪)
বড়োর ছড়া (১৯৯৪)
সেরা ছড়া (১৯৯৪)
টরে টক্কা (১৯৯৬)
কিছু মায়া রয়ে গেল (১৯৯৭)
সকলে প্রত্যেকে একা (১৯৯৯)
পদ্যসমগ্র – ১ম থেকে ৭ম খণ্ড
………….
আমি যাই

যেখানেই থাকো
এপথে আসতেই হবে
ছাড়ান্ নেই
সম্বল বলতে সেই
দিন কয়েকের গল্প
অল্প অল্পই
আমি যাই
তোমরা পরে এসো
ঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়ে
শাক-সবজি বিলিয়ে
তোমরা এসো
পুণ্যিপুকুর পুষ্করিণী
আতাচোরা
আতাচোরা পাখিরে
কোন তুলিতে আঁকি রে
হলুদ ?
বাঁশ বাগানে যইনে
ফুল তুলিতে পাইনে
কলুদ
হলুদ বনের কলুদ ফুল
বটের শিরা জবার মূল
পাইতে
দুধের পাহাড় কুলের বন
পেরিয়ে গিরি গোবর্ধন
নাইতে
ঝুমরি তিলাইয়ার কাছে
যে নদিটি থমকে আছে
তাইতে
আতাচোরা পাখিরে
কোন তুলিতে আঁকি রে
—হলুদ ?
অবনী বাড়ি আছো
অবনী বাড়ি আছো
অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’
বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’
আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ?’
……………

আমি চলে যেতে পারি (১৯৮০)

যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?
ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।
এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়।
যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না, অসময়ে।।
মনে মনে বহুদূর চলে গেছি
মনে মনে বহুদূর চলে গেছি – যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয়
জন্মেই হাঁটতে হয়
হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতে
একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারি
পথ তো একটা নয় –
তবু, সবগুলোই ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে শুরু আর শেষের কাছে বাঁধা
নদীর দু – প্রান্তের মূল
একপ্রান্তে জনপদ অন্যপ্রান্ত জনশূণ্য
দুদিকেই কূল, দুদিকেই এপার-ওপার, আসা-যাওয়া, টানাপোরেন –
দুটো জন্মই লাগে
মনে মনে দুটো জন্মই লাগে
………………
এই আমি যে পাথরে (১৯৭৭)

ভিতর-বাইরে বিষম যুদ্ধ
ইচ্ছে ছিলো তোমার কাছে ঘুরতে-ঘুরতে যাবোই
আমার পুবের হাওয়া।
কিন্তু এখন যাবার কথায়
কলম খোঁজে অস্ত্র কোথায়
এবং এখন তোমার পাশে দাঁড়িয়ে-থাকা কুঞ্জলতায়
রক্তমাখা চাঁদ ঢেকেছে
আকুল চোখ ও মুখের মলিন
আজকে তোমার ভিতর-বাইরে বিষম যুদ্ধ পুবের হাওয়া।।
পাবো প্রেম কান পেতে রেখে
বড় দীর্ঘতম বৃক্ষে ব’সে আছো, দেবতা আমার।
শিকড়ে, বিহ্বল প্রান্তে, কান পেতে আছি নিশিদিন
সম্ভ্রমের মূল কোথা এ-মাটির নিথর বিস্তারে ;
সেইখানে শুয়ে আছি মনে পড়ে, তার মনে পড়ে ?
যেখানে শুইয়ে গেলে ধীরে-ধীরে কত দূরে আজ !
স্মারক বাগানখনি গাছ হ’য়ে আমার ভিতরে
শুধু স্বপ্ন দীর্ঘকায়, তার ফুল-পাতা-ফল-শাখা
তোমাদের খোঁড়া-বাসা শূন্য ক’রে পলাতক হলো।
আপনারে খুঁজি আর খুঁজি তারে সঞ্চারে আমার
পুরানো স্পর্শের মগ্ন কোথা আছো ? বুঝি ভুলে গেলে।
নীলিমা ঔদাস্যে মনে পড়ে নাকো গোষ্ঠের সংকেত ;
দেবতা সুদূর বৃক্ষে, পাবো প্রেম কান পেতে রেখে।

দিন যায়

সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
অর্ধেক কপাল জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শুধু ঝড় থমকে আছে গাছের মাথায়
আকাশমনির।
ঝড় মানে ঝোড়ো হাওয়া, বাদ্ লা হাওয়া নয়
ক্রন্দনরঙের মত নয় ফুলগুলি
চন্দ্রমল্লিকার।
জয়দেবের মেলা থেকে গান ভেসে আসে
সঙ্গে ওড়ে ধুলোবালি, পায়ের নূপুর
সুখের চট্ কা ভাঙে গৈরিক আবাসে
দিন যায় রে বিষাদে, ষাদে, মিছে দিন যায় …
……………..

চাবি

আমার কাছে এখনো পড়ে আছে
তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরংগ আজ খোলো?
থুতনিপরে তিল তো তোমার আছে
এখন? ও মন নতুন দেশে যাবি?
চিঠি তোমায় হঠাত্ লিখতে হলো।
চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে
রেখেছিলাম, আজই সময় হলো –
লিখিও, উহা ফিরত্ চাহো কিনা?
অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে
তোমার মুখ অশ্রু-ঝলোমলো
লিখিও, উহা ফিরত্ চাহো কি না?
কিছু মায়া রয়ে গেলো
সকল প্রতাপ হল প্রায় অবসিত…
জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতে
কিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের,
শুধু এই –
কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানো
পৃথিবীকে।
মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি,
শুধু এই –
ঘৃনা নেই, নেই তঞ্চকতা,
জীবনজাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু।
এবার হয়েছে সন্ধ্যা
এবার হয়েছে সন্ধ্যা। সারাদিন ভেঙেছো পাথর
পাহাড়ের কোলে
আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
তোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠি
অন্যায় হবে না – নাও ছুটি
বিদেশেই চলো
যে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।
শ্রাবনের মেঘ কি মন্থর!
তোমার সর্বাঙ্গ জুড়ে জ্বর
ছলোছলো
যে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।
এবার হয়েছে সন্ধ্যা, দিনের ব্যস্ততা গেছে চুকে
নির্বাক মাথাটি পাতি, এলায়ে পড়িব তব বুকে
কিশলয়, সবুজ পারুল
পৃথিবীতে ঘটনার ভুল
চিরদিন হবে
এবার সন্ধ্যায় তাকে শুদ্ধ করে নেওয়া কি সম্ভবে?
তুমি ভালোবেসেছিলে সব
বিরহে বিখ্যাত অনুভব
তিলপরিমাণ
স্মৃতির গুঞ্জন – নাকি গান
আমার সর্বাঙ্গ করে ভর?
সারাদিন ভেঙ্গেছো পাথর
পাহাড়ের কোলে
আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
তবু নও ব্যথায় রাতুল
আমার সর্বাংশে হলো ভুল
একে একে শ্রান্তিতে পড়েছি নুয়ে। সকলে বিদ্রূপভরে দ্যাখে।

পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি (১৯৭১)

একবার তুমি
একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর–
দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর।
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল–ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার, যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সলমা-চুমকি-জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটেনক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি।
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই–পাথরের ফাঁক-ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল–
অনেক সময় তো ঘর গড়তেও মন চায়।
মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার। আমরা ঘরবাড়ি গড়বো–সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো।
রূপোলি মাছ পাথর ঝরাতে-ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো।
এক অসুখে দুজন অন্ধ
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ
দীর্ঘ দাঁতের করাত ও ঢেউ নীল দিগন্ত সমান করে
বালিতে আধ-কোমর বন্ধ
এই আনন্দময় কবরে
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ।
হাত দুখানি জড়ায় গলা, সাঁড়াশি সেই সোনার অধিক
উজ্জ্বলতায় প্রখর কিন্তু উষ্ণ এবং রোমাঞ্চকর
আলিঙ্গনের মধেযে আমার হৃদয় কি পায় পুচ্ছে শিকড়
আঁকড়ে ধরে মাটির মতন চিবুক থেকে নখ অবধি ?
সঙ্গে আছেই
রুপোর গুঁড়ো, উড়ন্ত নুন, হল্লা হাওয়ার মধ্যে, কাছে
সঙ্গে আছে
হয়নি পাগল
এই বাতাসে পাল্লা আগল
বন্ধ ক’রে
সঙ্গে আছে …
এক অসুখে দুজন অন্ধ !
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ।

অস্ত্রের গৌরবহীন একা (১৯৭৫)

যখন একাকী আমি একা
এখন সন্ন্যাসী দুইজন–
একজন আমি আর অন্যজন আমার পিতার
মমতাবিহীন চক্ষু
মাঝেমধ্যে রাত্রে দেন দেখা
যখন একাকী আমি একা
মাঝেমধ্যে রাত্রে দেন দেখা
কেন তাঁর নামত সন্ন্যাস
কেন তিনি মাত্র মায়াহীন
মনে ভাবি
এমন দেখিনি তাঁকে আগে
কোনদিন
এখন সন্ন্যাসী দুইজন–
একজন আমি আর অন্যজন আমার পিতার
মমতাবিহীন চক্ষু
মাঝেমধ্যে রাত্রে দেন দেখা
যখন একাকী আমি একা।

ঈশ্বর থাকেন জলে (১৯৭৫)

ওদিকে যেও না তুমি আর
বেজে ওঠে দূর টেলিফোনে
কাঁ টা তা র
ওদিকে যেও না তুমি আর
ওদিকে যেও না তুমি আর।
আছো তুমি ভালো!
দুইটি বিড়াল শাদা-কালো
আছে দুই হাতে
কথা হবে তোমাতে-আমাতে।
সে-কথা কি আজো মনে পড়ে?
বেজে ওঠে দূর টেলিফোনে
কাঁটাতার
ওদিকে যেও না তুমি আর
ওদিকে যেও না তুমি আর।

সুখে আছি (১৯৭৪)

মুহূর্তে শতাব্দী
ওই বাড়ি, শিরীষের পাতায় আহত…
এ-সত্য মৃত্যুর হিম ছোঁয়া দিয়ে তাকে
ব’লে যাবে, আজই নয়, কিন্তু কাল তোর
মসৃণ চূড়াটি ভাঙবো, পলেস্তরা খশাবো পীযূষে
ভাঙবো, ভেঙে টুকরো করবো ইট কাঠ পাথর প্রতিমা
শব্দের…শিরীষ তাই ছুঁয়ে গেলো মহিমা দুপুরে
চুল-নাড়া খুশকি যেন, বালক বোকার পচা রাগ
নিতান্ত সামান্য তার ঝরে-পড়া ধেয়ানি শহরে
মসজিদের পাশাপাশি, কাঁচা ফল রোদের উপর
ভয়ংকর ম্লান পাতা, তবু কত চোখ উন্নাসিক
দ্যাখে ব্যস্ত চঞ্চল রঙিন চুড়ো-করা উড়ো মেয়ে
পাগল একটি শুধু স্পৃষ্ট হয় হেমন্তবিদ্যুতে
বলে, থাকো, চেয়ে থাকো, মৃত্যু এসে দাঁড়াবে এখানে
পুলিশের মতো স্পষ্ট, হেমন্তের পাতায় আহত
থাকো, তুমি চেয়ে থাকো–মুহূর্তে শতাব্দী সৃষ্টি হবে।

ভাত নেই, পাথর রয়েছে (১৯৭৯)

ভাত নেই, পাথর রয়েছে
বছর-বিয়োনী মেঘ বৃষ্টি দেয়, বজ্রপাত দেয়–
ডোবা’র রহস্য বাড়ে, পদ্মপাতা দীঘিতে তছনছ।
শিকড়, কেঁচোর মত, জীবনের অনুগ্রহ পায়,
পায় না মাথায় ছাতা, এত হাতা ভাতের মানুষও!
মানুষ বারুদ খুবই ভালোবাসে, ধূপগন্ধ যেন
আকাশপিদ্দিম গেঁথে মন্ত্রী যায় সানাই বাজাতে,
পুলিস-মেথর যায় ঝাঁটা হাতে জানাতে বিদায়–
দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়ালই, লাগে ভালো।
সমস্যার সমাধান পায় ভূয়োদর্শী রাজবাড়ি–
অত্যন্ত সহজে, শুধু মানুষ পাথর নয় ব’লে
পরিত্রাণ পেয়ে যায়। অথচ পাথরে যদি মারো,
ঘা দাও, অমনি বগা ফোঁস করে, ঐতিহ্যমন্ডিত
দেশের পাথর যদি ছেদ্রে যায়, বিদেশ কী কবে!
ছাত নেই, ভাত নেই – কোন্ কাম পাথরে, মচ্ছবে–
তোমাদের?

ছিন্ন বিচ্ছিন্ন (১৯৭৫)

ছিন্ন বিচ্ছিন্ন – ০১

ছোট্ট হয়েই আছে
আমার, না হয় তোমার, না হয় তাহার বুকের কাছে
দুঃখ নিবিড় একটি ফোঁটায় – দুঃখ চোখের জলে
দুঃখ থাকে ভিখারিনীর একমুঠি সম্বলে।
ছোট্ট হয়েই আছে
একের, না হয় বহুর, না হয় ভিড়ের বুকের কাছে।
একটি ঝিনুক তাকে
জন্ম থেকেই, একটু-আধটু, বাইরে ফেলে রাখে।

প্রভু, নষ্ট হয়ে যাই (১৯৭২)

প্রভু, নষ্ট হয়ে যাই
বার বার নষ্ট হয়ে যাই
প্রভু, তুমি আমাকে পবিত্র
করো, যাতে লোকে খাঁচাটাই
কেনে, প্রভু নষ্ট হয়ে যাই
বার বার নষ্ট হয়ে যাই
একবার আমাকে পবিত্র
করো প্রভু, যদি বাঁচাটাই
মুখ্য, প্রভু, নষ্ট হয়ে যাই!

পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি (১৯৭১)

তুচ্ছ, তুচ্ছ এইসব
তুচ্ছ এইসব–এই জানালা কপাট গোরস্থান
তুচ্ছ, তুচ্ছ এইসব, ভালোবাসা, ভালো-মন্দে বাসা
তুচ্ছ, তুচ্ছ, এইসব জানালা কপাট গোরস্থান…
তারপর, কে আছো মন্দিরে?
মন্দিরে ভিতে কি ফড়িং?
ভালোবাসা মানে এক হিম
অন্ধকার খুঁজে নিয়ে পুঁতে ফেলা অশ্লীল ডালিম
তারপর, কে আছো মন্দিরে?
আমি যাই ভিত্তি খুঁড়ে খুঁড়ে
আমি যাই ভিত্তি খুঁড়ে খুঁড়ে…

সোনার মাছি খুন করেছি (১৯৬৮)

তোমার হাত
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে
এই দেশে বসতি করে শান্তি শান্তি শান্তি
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে
সফলতার দীর্ঘ সিঁড়ি, তার নিচে ভুল-ভ্রান্তি
কিছুই জানতে পারিনি আজ, কাল যা-কিছু আনতে
তার মাঝে কি থাকতো মিশে সেই আমাদের ক্লান্তির
দু-জন দু-হাত জড়িয়ে থাকা–সেই আমাদের শান্তি?
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে।
বেশ কিছুদিন সময় ছিলো–সুদুঃসময় ভাঙতে
গড়তে কিছু, গড়নপেটন–তার নামই তো কান্তি?
এ সেই নিশ্চেতনের দেশের শুরু না সংক্রান্তি–
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারি নি জানতে।

সুন্দর এখানে একা নয় (১৯৭৬)

স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি
মনে পড়ে স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি রাজপথ ধ’রে ক্রমাগত
সাইকেল ঘন্টির মতো চলে গেছে, পথিক সাবধান…
শুধু স্বেচ্ছাচারী আমি, হাওয়া আর ভিক্ষুকের ঝুলি
যেতে-যেতে ফিরে চায়, কুড়োতে-কুড়োতে দেয় ফেলে
যেন তুমি, আলস্যে এলে না কাছে, নিছক সুদূর
হয়ে থাকলে নিরাত্মীয় ; কিন্তু কেন? কেন, তা জানো না।
মনে পড়বার জন্য? হবেও বা। স্বাধীনতাপ্রিয়
ব’লে কি আক্ষেপ? কিন্তু বন্দী হয়ে আমি ভালো আছি।
তবু কোনো খর রৌদ্রে, পাটকিলে কাকের চেরা ঠোঁটে
তৃষ্ণার চেহারা দেখে কষ্ট পাই, বুঝে নিতে পারি
জলের অভাবে নয়, কোন টক লালার কান্নায়
তার মর্মছেঁড়া ডাক; কাক যেন তোমারই প্রতীক
রূপে নয়, বরং স্বভাবে – মনে পড়ে, মনে পড়ে যায়
কোথায় বিমূঢ় হয়ে বসে আছো হাঁ-করা তৃষ্ণায়!
কক্সবাজারে সন্ধ্যা (১৯৮৪)
শিশিরভেজা শুকনো খর
শিশিরভেজা শুকনো খর শিকড়বাকড় টানছে
মিছুবাড়ির জনলা দোর ভিতের দিকে টানছে
প্রশাখাছাড় হৃদয় আজ মূলের দিকে টানছে
ভাল ছিলুম জীর্ণ দিন আলোর ছিল তৃষ্ণা
শ্বেতবিধুর পাথর কুঁদে গড়েছিলুম কৃষ্ণা
নিরবয়ব মূর্তি তার, নদীর কোলে জলাপাহার …
বনতলের মাটির ঘরে জাতক ধান ভানছে
শুভশাঁখের আওয়াজ মেলে জাতক ধান ভানছে
করুণাময় ঊষার কোলে জাতক ধান ভানছে
অপরিসীম দুঃখসুখ ফিরিয়েছিলো তার মুখ
প্রসারণের উদাসীনতা কোথাও ব’সে কাঁদছে
প্রশাখাছাড় হৃদয় আজ মূলের দিকে টানছে
—————
কবির ৫০ তম জন্ম দিনে (২৬/১১/১৯৮৩) লেখা।
সুন্দর রহস্যময় (১৯৮০)
ভয় আমার পিছু নিয়েছে
জঙ্গলে গিয়েছো তুমি একা একা, জঙ্গলে যেও না
তুমি, মানে তুমি, মানে তুমি, ভুল বৃদ্ধ–ওহে তুমি
জঙ্গলে গিয়েছো একা? হারিয়েছো পথ?
সর্বস্ব হারিয়ে কোনো অন্নপূর্ণা গাছ ধরে জড়িয়ে কেঁদেছো?
পাতা চেয়ে ফুলে চেয়ে রস-আঠা চেয়ে
দাঁড়িয়েছো? ঠায় গাছ যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে বহুদিন ধরে
একা, তার আর্শি হয়ে, পারা-চটা আর্শি হয়ে, সিঁথির সিঁদুর হয়ে, পা-র আলতা হয়ে
তুমি দাঁড়িয়েছো কিনা! নিজেও জানো না,–এই
জানা, বহু অর্থ দাবি করে, দাবি রক্ত, অসম্মান, তুলোধোনা পিছমোড়াবাঁধা
সিঁড়ি ভেঙে বস্তার গড়ানো, দাবি–চাবি নিয়ে রুগ্ন তালা খোলা
দাবি তার বহুবিধ, দাবি তার সন্ন্যাস গৃহেই, দাবি ছেঁড়াখোঁড়া জামা
নিচে নামা, গড়াতে গড়াতে–যেভাবে পাথর নামে, গাছ নামে, মানুষেও নামে
ভয়ে পেয়ে নয়, শুধু তাড়া আছে বলে, তার কমলার বন থেকে, ভুটান পাহাড় থেকে
মানুষ যেভাবে নেমে আসে, নেমে থমকে যায়, ধাক্কা খেতে হবে বলে এই ভয়ে
চুরমার হতে হবে এই ভয়ে, থমকে, থেমে, পা তুলে দাঁড়ায়
ভাস্করের, ছেনি-কাটা ঘোড়ার উড়ন্ত ব্রোন্জ যেভাবে দাঁড়ায়
সেইভাবে।

আঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল (১৯৮০)

চেনা পাথরের জন্যে
একটি চেনা পাথর পড়ে আছে
পরনে তার অসংখ্য মৌমাছি
ভিতরে মৌ–কী জানি কার কাছে
ভালোবাসার অমল মালাগাছি?
একটি চেনা পাথর পড়ে আছে
পাথর, ওকে নাম দিয়েছি ওরা
ভয় ক’রে তার শক্তি আগাগোড়াই
ঝর্না বলে ডাক দিলে প্রাণ বাঁচে।।

আমি চলে যেতে পারি (১৯৮০)

দুঃখকে তোমার
দুঃখকে তোমার কোনো ভয় নেই, সেও ভালোবাসে
ভালোবাসা থেকে তুমি ভয় পাও? সুখ থেকে পাও?
উল্লেখযোগ্যতা যদি নিয়ে যায় সমুদ্রের তীরে–
সেখানে তোমার ভয় আছে নাকি? আনন্দও আছে?
তীরে সারবন্দী গাছ, সেখানে ভূমিষ্ঠ ছায়াতলে
যদি তুমি একবার গিয়ে বসো পাথরের মতো
তবেও তোমার ভয়? ভয় সবখানে!
তোমার অবোধ ভয় থেকে আমি পাই অন্য মানে।
দুঃখকে তোমার কোন ভয় নেই, সেও ভালোবাসে…

আমি চলে যেতে পারি (১৯৮০)

যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?
ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।
এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়
যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না, অসময়ে।।
আমাকে দাও কোল (১৯৮০)
মানুষটি মৃত
সাড়ে ছয় হাতে দেহ জড়াবে নিশ্চয়,
থানকাপড়ের গন্ধ আর জাগাবে না
মৃত্যু নয়, প্রসঙ্গত মূর্ছা মনে হবে।
কিছু কাঠকুটো আমি উঠোনে রেখেছি
কাচের বয়ামে আছে পুরাতন ঘৃত
তাহলে তো মূর্ছা নয়, মানুষটি মৃত।
হেমন্ত যেখানে থাকে (১৯৭৭)
হেমন্ত যেখানে থাকে
হেমন্ত যেখানে থাকে, সেখানে কৌতুক থাকে গাছে
সাড়া থাকে, সচ্ছলতা থাকে।
মানুষের মতো নয়, ভেঙে ভেঙে জোড়ার ক্ষমতা
গাছেদের কাছে নেই
হেমন্ত বার্ধক্য নিতে আসে
খসায় শুকনো ডাল, মড়া পাতা, মর্কুটে বাকল
এইসব।
হেমন্ত দরোজা ভেঙে নিয়ে আসে সবুজ নিশ্বাস…
মানুষের মতো নয় রক্তে পিত্তে সৌভাগ্য সরল
শিশুটির মতো রাঙা ক্রন্দন ছিটিয়ে চারিপাশে
হেমন্ত যেখানে থাকে, সেখানে কৌতুক থাকে গাছে।।
আমি ছিঁড়ে ফেলি ছন্দ, তন্তুজাল (১৯৭৬)
ভালো, এই ভালো
ভালো, এই ভালো, এই সম্পর্কে জটিল
হাওয়া লাগা।
কতদিনে হবে? মুক্তি, ওই তার ছিঁড়ে
দেয়াল ডিঙিয়ে
ভেঙে নয় কোনকিছু, শক্তি ভেঙে নয়
সম্মুখে সর্বস্ব বাধা–তাও ভেঙে নয়
শুধু ডানা পেলে উড়ে অথবা ডিঙিয়ে
ছিঁচকে কাজ, যা করে নির্বোধ চোর
তাই করে, শুধু তাই করে
আর কিছু নয়
আর কিছু করতেও পারে না।।
মানুষ বড়ো কাঁদছে
একটি মানুষ
একটি মানুষ দেখেছিলাম, দাঁড়িয়েছিলেন একা
হঠাৎ পথে দেখা আমার, হঠাৎ পথে দেখা
সবাই তাঁকে দেখতে পায় না
সবাই তাঁকে দেখতে পায় না
কিন্তু, তিনি দেখেন–
কোথায় তোমার দুঃখ কষ্ট, কোথায় তোমার জ্বালা
আমায় বলো, আমারই ডালপালা
তোমার এবং তোমার, তুমি যেমন ভাবেই কাটো
আমি একটু বৃহৎ, তুমি ছোট্ট করেই ছাঁটো
লাগবে না লাগবে না
আমি কি আর পাথর, আমায় লাগবে একটুতে?
মানুষ আমি, কী মনে হয়? মানুষ সহ্য করে।
পরশুরামের কুঠার
আপন মনে
আমার ভিতর ঘর করেছে লক্ষ জনায়–
এবং আমায় পর করেছে লক্ষ জনে
এখন আমার একটি ইচ্ছে, তার বেশি নয়
স্বস্তিতে আজ থাকতে দে না আপন মনে।
লক্ষ জনে আমার ভিতর ঘর করেছে, লক্ষ জনে পর করেছে।
আমার একটি ইচ্ছা, স্বগতোক্তির মতো–আপন মনে থাকার।
যারা থাকতে দিচ্ছে না, তাদের কাছে আমার এই সামান্য নিবেদন
বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে।
কবিতায় তুলো ওড়ে (১৯৭৬)
সন্ধ্যায় দিলো না পাখি
শালিখের ডাকে আমি হয়েছি বাহির
রোজ ঘর থেকে
পাতায় লুকায় সে যে ডেকে
জনশূন্য অথচ নিবিড়
এ-উঠানে শালিখেরই ভিড়!
দুপুরে শালিখের হাতে
ভাসিয়ে দিয়েছি অকস্মাতে
চেতনার পাখা–
ডাকের আড়ালে তার বেদনাই রাখা।
সন্ধ্যায় দিলো না আর প্রতি ডাকে সারা
শালিখের দল
আমার জীবন যেন শ্রুতির নিষ্ফল
প্রবাসের পাড়া
সন্ধ্যায় দিলো না পাখি প্রতি ডাকে সাড়া।
জ্বলন্ত রুমাল (১৯৭৫)
ছিন্নবিচ্ছিন্ন
তুমুল বৃষ্টিতে সব পাতা ভিজে গেলো
এখনই শুকাতে হবে রোদ্দুর কোথায়?
তিজেলে চড়াতে হবে অন্ন, তা কোথায়?
মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে শুকাতেও জানে।
এই অন্ন, পাতা-পত্র, এর অন্য মানে।
ও চিরপ্রণম্য অগ্নি (১৯৮৫)
জন্মদিনে
জন্মদিনে কিছু ফুল পাওয়া গিয়েছিলো।
অসম্ভব খুশি হাসি গানের ভিতরে
একটি বিড়াল একা বাহান্নটি থাবা গুনে গুনে
উঠে গেলো সিঁড়ির উপরে
লোহার ঘোরানো সিঁড়ি, সিঁড়ির উপরে
সবার অলক্ষ্যে কালো সিঁড়ির উপরে।
শুধু আমিই দেখেছি
তার দ্বিধান্বিত ভঙ্গি
তার বিষণ্ণতা।
জন্মদিনে কিছু ফুল পাওয়া গিয়েছিলো
এখন শুকিয়ে গেছে।
কোথাকার তরবারি কোথায় রেখেছ (১৯৮৩)
সেই হাত
অভিনব দুটি হাতে দেয়াল দরোজা খুলে দাও।
ততক্ষণে রোদ্দুর পৌচেছে
গোটারাত ঘুরে ঘুরে রোদ্দুর পৌঁচেছে
ঘরে।
কিছুটা নড়বড়ে
ছিলো ঘর।
এককোণে পাথর
তেমন সন্তুষ্ট নয়, ‘দখল দখল শব্দ করে।
দাবি তার ঘরটি ভরাবে
মানুষের মাথায় চড়াবে
তার ভার।
আর
যদি পারে
গিলে খাবে মানুষের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচা
অন্ধকারে!
তা কি হয়?
রোদ্দুরের ফুল ফোটে ঘরে
যে-হাতে দরোজা খোলো
সেই হাত শানাও পাথরে!
যুগলবন্দী (১৯৭২)
বাগানে তার ফুল ফুটেছে
ওইখানে ওই বাগানে তার ফুল ফুটেছে কতো
জানতে পারি, ওর মধ্যে কি একটি দেবার মতো?
একটি কিম্বা দুটির ইচ্ছে আসতে আমার কাছে
তাহার পদলেহন করতে সমস্ত ফুল আছে।
সব ফুলই কি গোষ্ঠীগত, সব ফুলই কি চাঁদের
একটি দুটি আমায় চিনুক, বাদবাকি সব তাঁদের
গাছ তো তাঁহার বাগানভর্তি, আমার রোপণ ছায়া–
প্রবীণ তাঁদের ভালোবাসা, আমার বাসতে চাওয়াই।।
মন্ত্রের মতন আছি স্থির (১৯৮০)
পোড়ামাটি
দূরে যাও
থেকো না এখানে
চিরদিন উড়ন্ত শাম্পানে
ছন্নছাড়া
চিঠি তো পুড়েছে একতাড়া
আগুনে পুড়েছে শত পাড়া
দূরে যাও
থেকো না এখানে
দূরে যাও
থেকো না এখানে
কাকে পাও?
আমি একা বড়ো একা
আমি একা, বড়ো একা
চন্দনের ধূপ আমি কবে পুড়িয়েছি
মনে নেই। মন আর স্মৃতিগুলি ধরে না আদরে।
সংশ্লিষ্ট চন্দন এই অবহেলা সহ্য করে গেছে।
কখনো বলেনি কিছু, বলেনি বলেই পরিত্রাণ
পেয়েছে সহজে, নয়তো অসহ্য কুঠারে ধ্বংস হতো।
আমার সংহারমূর্তি দেখেছে চন্দন একদিন
কিশোর বয়সে, সেই অভিপ্রেত সুকালে, সময়ে।
দেখেছে এবং একা-একা ভয়ে-রহস্যে কেঁপেছে–
বলেছে, আমার দুটি সুগন্ধি কৌটায় হাত রাখো,
পায়ের নখর থেকে জ্বালিও না শিখর অবধি
আমি একা, বড়ো একা, চন্দনের গন্ধে উতরোল।।
আমাকে জাগাও (১৯৮৯)
দিনরাত
দিনরাত মৃত্যু চলে সন্তান অবধি।
দেখা তো হয়েছে ক্রূর যমের সহিত,
তাকে বলা গেছে, আমি একাকীই যাবো।
গঙ্গার তরঙ্গভঙ্গে নিভে যাবে আলো,
আমি যাবো, সঙ্গে নিয়ে যাবো না কারুকে
একা যাবো
দিনরাত মৃত্যু চলে সন্তান অবধি!
বিষের মধ্যে সমস্ত শোক (১৯৮৮)
বিবাদ
ভালোবাসা নিয়ে কত বিবাদ করেছো!
এখন, টেবিল জোড়া নিবন্ত লণ্ঠনও
সহনীয়।
অনুভূতি। সবজির মতন
বিকোয় না হাটে।
হাত কাটে,
না রক্ত পড়ে না।
বিভীষিকা!
দুচোখের পক্ষেও নড়ে না।
প্রজড় পিণ্ডের মতো আছো–
আজই
বিবাদ করেছো।
ভালোবাসা নিয়ে কিছু বিবাদ করেছো,
কাতর পাথর মিছু বিবাদ করেছো!
এই তো মর্মর মুর্তি (১৯৮৭)
কঠিন অনুভব
চারধারে তার উপঢৌকন, কিন্তু আছে স্থির,
দুহাত মুঠিবদ্ধ কিন্তু ভিতরে অস্থির।
কেউ তাকে দ্যাখেনি হতে, উচিত ভেবে সব
ফিরিয়ে দিল, তার ছিলো এক কঠিন অনুভব।
সন্ধ্যার সে শান্ত উপহার (১৯৮৬)
সুখে থাকো
চক্রাকারে বসেছি পাঁচজনে
মাঠে, পিছনের পর্চে আলো
অন্ধকার সন্ধ্যা নামে বিড়ালের মতো ধীর পায়ে
তুমি এসে বসেছো আসনে অকস্মাৎ।
হঠাৎই পথে ঘুরতে-ঘুরতে কীভাবে এসেছো
একেবারে পাশে,
তোমার গায়ের গন্ধ নাকে এসে লাগে
বৃদ্ধের রোমাঞ্চ হয়!
খুব ভালো আছো?
অন্তত এখন, তুমি?
তুমি ঠিক আছো?
না থাকার মানে হয়
বিশেষত যখন এসেছো
কৃপা করে।
কৃপা বাক্যবন্ধ তুমি কিছুতে ছাড়বে না!
ছাড়া যায়?
কিছুক্ষণ আছো?
হ্যাঁ, হাতে সময় আছে
তাই, পায়ে পায়ে
এখানে এসেছি চলে।
শুনেছি, সন্ধ্যার আড্ডা তোমার এখানে
যদি ভাগ্য ভালো হয়, দেখা পেয়ে যাবো,
ভাগ্য ভালো।
এমনই এসেছি,
তোমাকে দেখার জন্য আজ কটি দিন
কী ইচ্ছা করছিলো।
জানালে যেতাম।
কিছুতে যেতে না।
‘কাল আসবো’ বলে তুমি পালিয়ে এসেছো
সেই কাল কবে হবে? ভেবেছি তোমার
সময় অত্যন্ত কম,
আমি নিজে আসি।
আমার সময় আছে…দীর্ঘ অবসর!
চক্রাকারে বসেছি পাঁচজনে।
পাঁচজনের মধ্যে থেকে একা একা একান্ত দুজন,
পাঁচজন বুঝেছে সবই
নিচুস্বরে কথা চালাচলি করে যাচ্ছে অহেতুক শ্লথ,
পাঁচজনের মধ্যে থেকে একা একা একান্ত দুজন
অকস্মাৎ।
ধীরে ধীরে রাত বেড়ে যায়।
সন্ধ্যার আঁচলে মুড়ে করতল অন্য পাতে পায়–
করস্পর্শ।
পাখির পালক হাত খেলা করে কর্কশ মুঠিতে,
পাঁচজনে সমস্ত দেখে ধীরে ধীরে কোথা উঠে যায়
একাকী দুজনে রেখে।
চলো পৌঁছে দিয়ে আসি তোমার বাড়িতে।
যাবে?
কেন নয়।
চলো।
একগাড়ি আঁধার আজ দক্ষিণে দৌড়ায়
দ্রুত।
মনে হয়, গতি বড় দ্রুত বিদ্যুতের মতো!
কথা বলো।
কী কথা বলার?
আছে।
কাছে আছো, এ যথেষ্ট নয়?
যথেষ্ট যথেষ্ট। আজ দিন বড় বেশি কিছু দিল।
সত্যি একে দেওয়া বলো এখনো তুমিও।
না বলার সাধ্য আছে?
বহুদিনই ভাবি, হঠাৎ চলেই যাই, গিয়ে দেখে আসি–
আছোটা কেমন?
কিন্তু বড়ো ভয় করে
যদি তুমি কিছু ভাবো?
অন্যের সংসারে ও কেন হঠাৎ আসে?
সেই জন্যে ভয়,
জড়িয়ে যাবার ভয়,
মন্দ ভাগ্যে ভয়!
বড়ো দ্রুত যাচ্ছে গাড়ি সমূহ দক্ষিণে
গাড়ির আঁধার হলো হাসিতে উজ্জ্বল
এবং মধুর গন্ধ ছড়ালো বাতাসে।
আবাল্য তোমার কিছু পাওনা রয়ে গেলো।
আমি বলি শোধ হয়ে গেছে।
আজি, এইমাত্র, এই এতো কাছে পেয়ে
জীবনে এতোটা কাছে তোমাকে পাইনি,
একা বহুক্ষণ ধরে গাড়ির ভিতরে।
গাড়ি বাঁয়ে চলো, গাড়ি এখন দক্ষিণে
কিশোর প্রেমের মতো অত্যন্ত রঞ্জিত
এই সুসময় আজ দিনশেষে কেন!
মূর্ছার ভিতরে নেমে, দু’কদম গিয়ে
ফিরে এসেছিলে…
আজ নয়, অন্য একদিন।
আর দরজা থেকে একা ক্লান্ত ফিরে যাও,
দুর্বলতা গলা টিপে আছে,
আজ নয়, অন্য কোনদিন
আমার সর্বস্ব নিও।
আজ নয়, অন্য কোদিন…
তুমি হাত দুটি ধরে মুখমণ্ডলের
উপরে আগ্নেয় পাত কেন বা ঘটালে?
সর্বস্ব পেয়েছি আমি আজই, অকস্মাৎ।
সুখে থাকো, আমি ফিরে যাই
একা একা।
মিষ্টি কথায়, বিষ্টিতে নয় (১৯৮৫)
ছড়ার আমি ছড়ার তুমি
ছড়া এক্কে ছড়া, ছড়া দুগুণে দুই
ছড়ার বুকের মদ্দিখানে পান্সি পেতে শুই।
ধানের ছড়া গানের ছড়া ছড়ার শতেক ভাই
ছড়ার রাজা রবিন ঠাকুর, আর রাজা মিঠাই।
আরেক রাজা রায় সুকুমার, আছেন তো স্মরণে?
আর ছড়াকার ঘুমিয়ে আছেন সব শিশুদের মনে।
ছড়ার আমি ছড়ার তুমি ছড়ার তাহার নাই
ছড়া তো নয় পালকি, বাপা, ছজন কাহার চাই!
ছড়া নিজেই বইতে পারে কইতে পারে, দুইই–
বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা তার তুলোতে শুই।।

অবনী বাড়ি আছো

দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’

বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’

আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ

যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?

ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়
যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো

যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
একাকী যাবো না অসময়ে।।

আমি যাই

যেখানেই থাকো
এপথে আসতেই হবে
ছাড়ান্ নেই
সম্বল বলতে সেই
দিন কয়েকের গল্প
অল্প অল্পই
আমি যাই
তোমরা পরে এসো
ঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়ে
শাক-সবজি বিলিয়ে
তোমরা এসো

কিছু মায়া রয়ে গেলো

সকল প্রতাপ হল প্রায় অবসিত…
জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতে
কিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের,
শুধু এই –
কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানো
পৃথিবীকে।
মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি,
শুধু এই –
ঘৃনা নেই, নেই তঞ্চকতা,
জীবনজাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু।

এক অসুখে দুজন অন্ধ

আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ
দীর্ঘ দাঁতের করাত ও ঢেউ নীল দিগন্ত সমান করে
বালিতে আধ-কোমর বন্ধ
এই আনন্দময় কবরে
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ |
হাত দুখানি জড়ায় গলা, সাঁড়াশি সেই সোনার অধিক
উজ্জ্বলতায় প্রখর কিন্তু উষ্ণ এবং রোমাঞ্চকর
আলিঙ্গনের মধেযে আমার হৃদয় কি পায় পুচ্ছে শিকড়
আঁকড়ে ধরে মাটির মতন চিবুক থেকে নখ অবধি ?
সঙ্গে আছেই
রুপোর গুঁড়ো, উড়ন্ত নুন, হল্লা হাওয়ার মধ্যে, কাছে
সঙ্গে আছে
হয়নি পাগল
এই বাতাসে পাল্লা আগল
বন্ধ ক’রে
সঙ্গে আছে …
এক অসুখে দুজন অন্ধ !
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ।

আতাচোরা

আতাচোরা পাখিরে
কোন তুলিতে আঁকি রে
হলুদ ?
বাঁশ বাগানে যইনে
ফুল তুলিতে পাইনে
কলুদ
হলুদ বনের কলুদ ফুল
বটের শিরা জবার মূল
পাইতে
দুধের পাহাড় কুলের বন
পেরিয়ে গিরি গোবর্ধন
নাইতে
ঝুমরি তিলাইয়ার কাছে
যে নদিটি থমকে আছে
তাইতে
আতাচোরা পাখিরে
কোন তুলিতে আঁকি রে
—হলুদ ?

একবার তুমি

একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর –
দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর |
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল – ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার, যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সলমা-চুমকি-জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটেনক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি |
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই – পাথরের ফাঁক-ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল –
অনেক সময় তো ঘর গড়তেও মন চায় |
মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার | আমরা ঘরবাড়ি গড়বো – সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো |
রূপোলি মাছ পাথর ঝরাতে ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো |

এবার হয়েছে সন্ধ্যা

এবার হয়েছে সন্ধ্যা। সারাদিন ভেঙেছো পাথর
পাহাড়ের কোলে
আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
তোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠি
অন্যায় হবে না – নাও ছুটি
বিদেশেই চলো
যে ?

আমি দেখি – শক্তি চট্টোপাধ্যায়

গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও
আমাদের দরকার শুধু গাছ দেখা
গাছ দেখে যাওয়া
গাছের সবুজ টুকু শরীরে দরকার
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার

বহুদিন জঙ্গলে কাটেনি দিন
বহুদিন জঙ্গলে যায়নি
বহুদিন শহরেই আছি
শহরের অসুখ হা করে কেবল সবুজ খায়
সবুজের অনটন ঘটে….

তাই বলি, গাছ তুলে আনো
বাগানে বসাও আমি দেখি
চোখ তো সবুজ চায়!
দেহ চায় সবুজ বাগান
গাছ আনো , বাগানে বসাও।
আমি দেখি ।

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ২৩, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ