টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে চাওয়া মানুষের জন্য প্রয়োজন। সফল হতে গেলে আপনাকে কাজ করতেই হবে, যথেষ্ঠ পরিশ্রম বা হার্ডওয়ার্ক করতে হবে। তবে, আপনি যদি হার্ড ওয়ার্ক এর সাথে ‘স্মার্ট ওয়ার্ক’ যোগ করতে পারেন – তবে এই সময় ও পরিশ্রমের পরিমান অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।
টিমোথি ফেরিস এর লেখা ”দি ফোর আওয়ার ওয়ার্ক উইক” (The 4 Hour Work Week) বইটিতে টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোডাক্টিভিটি বিষয়ে এমন কিছু উপায়ের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো কাজে লাগাতে পারলে আপনি দীর্ঘ সময়ের কাজ অনেক কম সময়ে করতে পারবেন।
সাধারণত আমরা সপ্তাহে ৫/৬ দিন, দিনে ৮ ঘন্টার আশপাশে কাজ করি। কিন্তু এর অনেকটাই আসলে বেকার পরিশ্রম করা হয়। মানে, দিনের কাজ আমরা চাইলে ৪ ঘন্টায়ও শেষ করতে পারি। এটা ঠিক যে, সব ক্ষেত্রে এটা সম্ভব না – কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব। আপনার কাজের ক্ষেত্রে আপনি টিমোথি ফেরিস এর মেথড ব্যবহার করতে পারবেন কিনা – সেটা আশা করি এই বুক রিভিউ পড়ার পর নিজেই বুঝতে পারবেন।
লেখক ও বইয়ের মূল আইডিয়া সম্পর্কে কিছু কথা:
যে কোনও বইয়ের পেছনেই বইয়ের লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা আর চিন্তা ভাবনা কাজ করে। ফোর আওয়ার ওয়ার্জ উইকও এর বাইরে নয়। বর্তমানে লেখক টিমোথি ফেরিস একজন অসাধারণ সফল মানুষ। কিন্তু এমন অবস্থা তাঁর সব সময়ে ছিল না। কিছু ঘটনার ফলে তাঁর মাঝে কিছু বিশেষ উপলব্ধি এসেছিল, যেগুলো থেকে তিনি কিছু আইডিয়া পেয়েছিলেন, এবং সেগুলো কাজে লাগিয়ে নিজের জীবনের মোড় তিনি ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
কলেজ পাশ করার পর ফেরিস একটি টেক ফার্মে বিক্রয় বিভাগে চাকরি নেন। কাজের প্রচন্ড্র চাপ আর ঝামেলার কারণে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজেই ব্যবসা শরু করবেন। কিন্তু ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেখলেন, অন্যের জন্য যেখানে তাঁর সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করলেই চলত, সেখানে নিজের জন্য তাঁর অন্তত সপ্তাহে ৮০ ঘন্টা কাজ করতে হচ্ছে। তিনি দম ফেলারও সময় পাচ্ছেন না। ব্যবসা থেকে টাকা ভালোই আসতো, কিন্তু সেই টাকা ভোগ করার মত কোনও সময়ই তাঁর হাতে থাকতো না।
তিনি আরও ভালোভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করার উপায় খুঁজতে লাগলেন, যাতে প্রোডাক্টিভিটি ঠিক রেখেও আরও কম সময়ে কাজ শেষ করা যায়।
এভাবে খুঁজতে খুঁজতেই তিনি “প্যারেটো প্রিন্সিপাল” বা ৮০/২০ প্রিন্সিপাল সম্পর্কে জানতে পারেন।
এই প্রিন্সিপালকে কাজে লাগিয়ে তিনি তাঁর ব্যবসার কার্যকারিতা ঠিক রেখে কাজের ঝামেলা কমিয়ে ফেলেন, অপ্রয়োজনীয় সবকিছু চিহ্নিত করে সেগুলো বাদ দেন, এবং এমন ব্যবস্থা করেন – যাতে তিনি না থাকলেও সব কাজ ঠিকমত চলে। – এর ফলে তিনিও অনেক কম পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করে ব্যবসাকে আরও লাভজনক ও প্রসারিত করতে পারলেন।
এরপর ফেরিসকে ব্যবসার পেছনে আগের চেয়ে অনেক কম সময় দিতে হত, যে সময়কে কাজে লাগিয়ে তিনি টাইম ম্যানেজমেন্ট মাস্টারপিস, দি ফোর আওয়ার ওয়ার্ক উইক লেখেন – যাতে অন্যরাও তাঁর পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে উপকৃত হতে পারে – এবং তিনিও কিছু এক্সট্রা সুনাম ও অর্থ কামাতে পারেন।
টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং ৮০/২০ প্রিন্সিপাল:
ফোর আওয়ার ওয়ার্কউইক বইতে ফেরিস মূলত টাইম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য তিনি কিভাবে ৮০/২০ প্রিন্সিপাল ব্যবহার করেছেন – সেটাই ধাপে ধাপে বর্ণনা করেছেন। লেখকের ভাষায়, বইটি আসলে একজন মানুষ তার কর্মজীবনে কিভাবে ৪০/২০ প্রিন্সিপাল ব্যবহার করে সফল হবে – সেটাই দেখানো হয়েছে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস
প্রিন্সিপাল অনুযায়ী, মানুষের ৮০% প্রোডাক্টিভ কাজ হয় তার ২০% সময়ে। আর বাকি ২০% কাজ করতে তার ৮০% সময় খরচ হয়। লেখক বলেন, যদি কেউ সঠিক ভাবে এই প্রিন্সিপালটি কাজে লাগাতে পারেন, তবে সাধারণ ভাবে কাজ করতে তার যত সময় লাগে, তারচেয়ে অনেক কম সময়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট করে সে সেই কাজ করতে পারবে।
লেখকের মতে, ফোর আওয়ার ওয়ার্ক উইক এর টাইম ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে একজন মানুষ যে ২০% প্রোডাক্টিভিটি ৮০% সময় নষ্ট করে – তার অনেকটাই বাদ দিতে পারে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট করুন ফোর আওয়ার ওয়ার্ক উইক পদ্ধতিতে:
যে কোনও সেলফ ডেভেলপমেন্ট বা পার্সোনাল প্রোডাক্টিভিটি বইয়েরই মূল উপাদান থাকে লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা। লেখক তাঁর নিজের জীবন থেকে, এবং অন্যান্য সফল মানুষের জীবন থেকে আত্ম উন্নয়নের পদ্ধতিগুলো খুঁজে বের করেন। এবং এগুলোর পেছনে থাকে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক গবেষণা। – এসব বিষয় যে কেউ নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারে।
কিন্তু এই ধরনের বই পড়ার সময়ে পাঠককে বুঝতে হয় কোন জিনিসটি তার কাজে লাগতে পারে, এবং কোনটি লাগবে না। সেইসাথে এটাও বুঝতে হয়, কোন টিপস সে ইতোমধ্যেই কাজে লাগাচ্ছে। টাইম ম্যানেজমেন্ট বা অন্য যে কোনও ক্ষেত্রেই টিপস সমূহকে নিজের জীবনের বিভিন্ন দিকের সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়।
দি ফোর আওয়ার ওয়ার্ক উইকও এর বাইরে নয়। বুক রিভিউটি পড়ার সময়ে আপনিও আপনার জীবনের সাথে ব্যাপারগুলো মিলিয়ে দেখলে উপকার পাবেন। বইয়ের শিক্ষাগুলো আপনার জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে কিভাবে কাজে লাগাতে পারেন – সেটা নিয়ে ভাবেতে থাকুন। দেখবেন, কিছু সমস্যার এমন সমাধান বেরিয়ে আসছে, যা হয়তো আগে মাথায়ই আসেনি।
দি ফোর আওয়ার ওয়ার্ক উইক বইয়ের পদ্ধতিতে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হলে আপনাকে মোট ৪টি ধাপ অনুসরন করতে হবে। যেগুলো একে একে আমরা বর্ণনা করব।
০১. সংজ্ঞায়িত করা
এই ধাপে লেখক মূলত মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য খুঁজে বের করার দিকে নজর দিয়েছেন। নিজের সত্যিকার স্বপ্ন সম্পর্কে না জানলে একজন মানুষ বিভিন্ন দিকে নিজের সময় নষ্ট করে। বিভিন্ন ভাবে অর্থ আয়ের চেষ্টা করে। এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্থ আয় করতে পারলেও সত্যিকার মানসিক শান্তি পায় না।
তাই লেখক পাঠকদের প্রথমেই নিজের সত্যিকার লক্ষ্যকে সংজ্ঞায়িত বা নির্দিষ্ট করতে বলেন।
এটা করার জন্য তিনি একটি সহজ পদ্ধতি দিয়েছেন:
প্রথমে ৫ মিনিট সময় নিয়ে নিজের জীবনের স্বপ্নটিকে বোঝার চেষ্টা করুন। এর জন্য নিজেকে একটি প্রশ্ন করুন, এবং সেটি নিয়ে ডিটেইলে চিন্তা করুন। প্রশ্নটি হল, যদি আমার হাতে যে কোনও কাজ করে অর্থ আয় করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতো, তাহলে আমি কি করতাম?
আপনি কি এখন যা করছেন, তাই করতেন, নাকি অন্যকিছু করতেন? কোথায় কোথায় সময় দিতেন?
এরপর নিজেকে আরেকটি প্রশ্ন করুন, আমি সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুই নিজের কাজ করার সবচেয়ে খারাপ ফলাফল কি হতে পারে?
এই প্রশ্নটা নিয়ে ৫ মিনিট চিন্তা করুন। – হতে পারে আপনি বর্তমান চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের ব্যবসা গড়ার কাজে মন দিলেন। এতে করে হয়তো কয়েক মাস বা বছর আপনাকে আর্থিক ভাবে খুব খারাপ অবস্থায় কাটাতে হবে। অথবা বন্ধুবান্ধবদের সময় দেয়া কমিয়ে নিজের অফিসের কাজে আরও ভালো করে মন দিলেন। এতে কিছু মানুষ হয়তো আপনাকে ভুল বুঝবে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক আগের মত গভীর থাকবে না।
দ্বিতীয় প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করা হয়ে গেলে আরও পাঁচটা মিনিট সময় নিয়ে চিন্তা করুন যে, নিজের কাজে সম্পূর্ণ ভাবে মনোযোগ ও সময় দেয়ার খারাপ দিক বেশি, না ভালো দিক বেশি?
বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই ভালো দিকই বেশি হয়। আপনারও যদি তাই হয়, তাহলে পরের ধাপগুলো অনুসরন করে টাইম ম্যানেটমেন্ট আরও ভালো ভাবে করতে পারেন, এবং নিজেকে আরও সফল মানুষে পরিনত করতে পারেন।
আপনাকে হয়তো টিঁকে থাকার জন্য চাকরি করতে হবে, বা যা করতে ভালো লাগে না – তা করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি এর মধ্য থেকেই পর্যাপ্ত সময় বাঁচিয়ে নিতে পারেন – তবে দেখবেন স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক সময় হাতে থাকছে – যা কাজে লাগিয়ে আপনি বেঁচে থাকার জন্য অপছন্দের কাজ করার পাশাপাশিও নিজের স্বপ্নটাকে বাস্তব করার কাজকরতে পারছেন।
০২. বাদ দেয়া
আপনার প্রতিদিনকার জীবনে যদি টাইম ম্যানেজমেন্ট আরও ভালো করে করতে চান, এবং কর্মজীবনকে আরও প্রোডাক্টিভ করতে চান – তবে এই ধাপে আপনার জন্য বেশ ভালো কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস আছে।
এই টিপস বা টেকনিক গুলো আপনার প্রতিদিনকার ছোট ছোট সময় নষ্ট কারী কাজগুলো চিনতে ও সেগুলো বাদ দিতে সাহায্য করবে।
এই ধাপে লেখক অনেকগুলো টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস দিয়েছেন, যার মধ্যে প্রধান ৭টি টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপস আমরা এখানে তুলে ধরছি:
কাল কি করবেন, তা আজ ঠিক করে রাখুন:
এই লিস্টে কোনও কাজ যোগ করার সময়ে চিন্তা করুন, কাজটি আপনার নিজের কাজ বা স্বপ্ন পূরণের জন্য কতটা জরুরী? – যদি জরুরী না হয়, তবে কাজটি বাদ দেয়ার চেষ্টা করুন। পরের দিনের প্রতিটি কাজ ঠিক করার আগে যদি এভাবে চিন্তা করেন – তাহলে দেখবেন অনেক কাজই আছে যেগুলো আপনার না করলেও চলে। কিন্তু সঠিক ভাবে চিন্তা না করার কারণে এগুলো আপনার জরুরী মনে হচ্ছিল। এভাবে আপনার পরের দিনের অনেকটা সময় বাঁচানো সম্ভব।
একসাথে অনেক কাজ করার অভ্যাস বা মাল্টিটাস্কিং একেবারে বাদ দিন:
এর মানে হল, যখন কোনও রিপোর্ট লিখবেন, অথবা হিসাব করবেন – বা অন্য যে কোনও জরুরী কাজই করবেন – তখন আপনার ম্যাসেঞ্জার, অপ্রয়োজনীয় ব্রাউজার ট্যাব – ইত্যাদি সবকিছু বন্ধ করে দিন। যেটা করছেন – শুধু সেটার ওপরই ফোকাস করুন। আপনি যদি ঘড়ি ধরে হিসাব করেন – তাহলে দেখবেন শুধুমাত্র একটি কাজে ফোকাস করে কাজ করার কারণেই আপনি সাধারণের চেয়ে অনেক কম সময়ে কাজ করতে পারছেন। এছাড়া এভাবে কাজ করলে কাজের মানও অনেক ভালো হয়। এটা চর্চা করার জন্য পমোডরো টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন।
বিকাল ৪টার মধ্যে দিনের কাজ শেষ করার জন্য নিজেকে বাধ্য করুন:
আমরা দিনের কাজ সাধারণত ৫টা-৬টার মধ্যে শেষ করতে অভ্যস্ত। কিন্তু আপনি যদি আরেকটু মনোযোগ দিয়ে এবং শুধু একটি কাজে ফোকাস রেখে রেখে দিনের কাজগুলো করেন – তবে আপনি ৪টার মধ্যে সহজেই দিনের কাজগুলো শেষ করে ফেলতে পারবেন। হতে পারে আপনার অফিস টাইম ৯টা থেকে ৫টা। তাতেও কোনও সমস্যা নেই, ৪টার মধ্যে কাজ শেষ করে চুপ চাপ বসে থাকুন – বা ভাব দেখান কাজ করছেন। – এই চর্চাটির মূল উদ্দেশ্য হল কম সময়ে বেশি প্রোডাক্টিভ হওয়া প্রাকটিস করা। এটা একবার অভ্যাস হয়ে গেলে আপনি আরও কম সময়ে নিজের কাজ শেষ করতে পারবেন।
এক সপ্তাহের জন্য সব ধরনের মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন:
খাওয়া বা ঘুমানোর মত মিডিয়া এখন আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু যাঁরা কাজ করে অনেক বেশি উন্নতি করতে চান, মিডিয়া তাদের জন্য একটা অভিশাপ। নিজের সময়কে প্রোডাক্টিভ ভাবে ব্যবহার করার জন্য তাই সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন, নিউজপেপার, ম্যাগাজিন, বিনোদন মূলক সাইট – ইত্যাদি থেকে দূরে থাকাটা জরুরী (যদি এগুলোর কোনওটা আপনার পেশা না হয়)।
লেখক ১ সপ্তাহ পাঠককে এগুলো থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে বলেন। রিফ্রেশমেন্টের জন্য দিনে এক ঘন্টা বিনোদন মূলক কিছু দেখতে পারেন – কিন্তু তার বেশি নয়। আপনি যদি এক সপ্তাহ এটা পালন করতে পারেন, তবে নিজেই বুঝবেন আপনার মাথা কত ফ্রেশ আছে। কারণ, বর্তমানে অপ্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের মাথাকে ভারী করে রাখে। আপনাকে কাজে ফোকাস করতে দেয় না। আর খবর জানা আসলে অতটা জরুরী নয়। যদি সত্যিই কোনও জরুরী বা চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে – আশপাশের মানুষের আলোচনা থেকে তা আপনি এমনিতেই জানতে পারবেন।
এক সপ্তাহ এটা অভ্যাস করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে, ঠিক ভাবে নিজের কাজ করার জন্য আপনার এগুলো থেকে দূরে থাকা কতটা জরুরী।
এরপর থেকে এগুলোর জন্য নির্দিষ্ট সময় রাখুন (তা যেন খুব বেশি না হয়), এবং যতটা সম্ভব দূরে থাকুন।
দিনে মাত্র দুইবার মেইল/নোটিফিকেশন চেক করুন:
কাজের মাঝে নোটিফিকেশন চেক করতে গেলে গড়ে মানুষের ২৩ মিনিট সময় নষ্ট হয়। আপনিই চিন্তা করে দেখুন, অন্য একটি কাজের মাঝে নোটিফিকেশন আসলে সেটা চেক করতে যাওয়ার পর কি কখনও অন্য কনটেন্টে আটকে যাননি? অথবা কাজের কথাই ভুলে যাননি? – এমনটা আমাদের সাথে প্রায়ই ঘটে। এবং অবিশ্বাস্য হলেও এটা মানুষের প্রোডাক্টিভ সময়ের অনেকটাই নষ্ট করে ফেলে। তাই কাজের সময়ে ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন। এবং মেইল ও নোটিফিকেশন চেক করার জন্য নির্দিষ্ট সময় রাখুন। হতে পারে সন্ধ্যার পর বা লাঞ্চের পর ঘন্টাখানেক এর পেছনে সময় দিলেন। এতে করে অগোছালো ভাবে অনেক বেশি সময় নষ্টের হাত থেকে বাঁচবেন।
অযথা মিটিং করবেন না:
বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যপারটা সবচেয়ে বেশি ঘটে। টিমের মধ্যে কারণে অকারণে প্রচুর মিটিং হয়। এতে সত্যিকার কাজের সময় অনেকটাই নষ্ট হয়। লেখক শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়েই মিটিং করার পরামর্শ দেন। টাইম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য এটা খুবই জরুরী। মিটিং কেন হচ্ছে, এবং আপনার বা আপনার টিমের নির্দিষ্ট কিছু মেম্বারের আসলেই সেখানে থাকা দরকার কিনা এটাও ভালোভাবে ভেবে দেখতে হবে। সব মিটিং এ টিমের সবার থাকার দরকার নেই। তাদের পরে জানিয়ে দিলেও হবে। এই সময়টা আপনি বা অন্য টিম মেম্বার কাজ এগিয়ে নিতে পারবেন।
কাজের সময়ে ‘না’ বলুন:
আমরা অনেকেই ভদ্রতার খাতিরে অথবা কাছের মানুষদের কষ্ট দেয়ার ভয়ে কাজের সময় নষ্ট করে অন্যদের সময় দেই। এতে কাজের অনেক ক্ষতি হয়। এমন অবস্থায় লেখক পরামর্শ দেন, কাজের সময়ে দরজার বাইরে “ডু নট ডিসটার্ব” সাইন ঝুলিয়ে রাখার। অথবা আপনি সবাইকে জানিয়ে দিতে পারেন দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে খুব বড় বিপদ বা ইমার্জেন্সী না হলে যেন কেউ আপনাকে না ডাকে। প্রয়োজনে কাজ শেষ করে দেখা করার বা কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিন। এটা যদি কেউ না বোঝে, সে আসলে আপনার ভালো চায় না। তারা আপনার ওপর মনো:ক্ষূন্ন হলেও পাত্তা দেবেন না।
০৩. যতটা পারেন নিজের কাজের বোঝা কমিয়ে ফেলুন
এই ধাপে লেখক পরামর্শ দেন নিজের কাজগুলোকে অটোমেটিক করানোর। অর্থ আয়ের ক্ষেত্রে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করুন, যেন তা আপনি সরাসরি কাজ না করলেও আপনাকে অর্থ এনে দেয়। নিজের কাজের পাশাপাশি এমন কিছু একটা দাঁড় করানোর চেষ্টা করুন, যেটা আপনি ঘুমিয়ে থাকলেও আপনার জন্য টাকা রোজগার করে। – হতে পারে সেটা ভাড়ায় চলা একটি গাড়ি, (আপনি একা টাকা জমিয়ে বা সমমনাদের সাথে মিলে কিনতে পারেন) – যা প্রতি দিন আপনাকে কিছু কিছু আয় করে দিচ্ছে। যদি লেখালেখি ও ডিজিটাল মার্কেটিং বোঝেন – তবে একটি ওয়েবসাইট থেকেও এমন আয় করা সম্ভব। অথবা কোনও লাভজনক ব্যবসায় নিজের জমানো কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে পারেন। আশেপাশে তাকালেই এমন সুযোগ দেখতে পাবেন। নিজের কাজের ইনকাম থেকে কিছু কিছু টাকা সব সময়েই এর জন্য জমাতে শুরু করুন। এটা পরে আপনার নিজের পরিশ্রমের বোঝা অনেক কমিয়ে দেবে।
এছাড়া নিজের কাজগুলোর কিছুকিছু অন্যদের দিয়ে করানোর চেষ্টা করুন। সামর্থ থাকলে কর্মী নিয়োগ দিন। এতে করে আপনার অনেকটা সময় বাঁচবে – যা আপনি আরও লাভজনক কাজে লাগাতে পারবেন।
এটা হয়তো সবার জন্য সম্ভব নয় (আগেই বলেছি, সবগুলো হয়তো সবার কাজে লাগবে না), কিন্তু আপনার পক্ষে এটা সম্ভব হলে সময়কে আরও অনেক ভালো ভাবে কাজে লাগাতে পারবেন।
০৪. দূর থেকে কাজ করুন
আপনি যখন অন্যান্য ধাপ গুলো অনুযায়ী কাজ করবেন – তখন আপনি অনেক বেশি কাজ অনেক কম সময়ে করতে পারবেন। এটা রপ্ত হলে লেখক পরামর্শ দেন অফিসে না গিয়ে কাজ করার। মাঝে মাঝে যাবেন, কিন্তু নিয়মিত না গেলেও চলে – এমন একটা অবস্থায় চলে আসার চেষ্টা করতে পারেন।
আপনি যদি চাকরি করেন, তবে ছুটির সময়ে বা অসুস্থ থাকলে বাসা থেকে কাজ করতে পারেন। এবং এমন ভাবে কাজ করুন – যেন তা অফিসের পারফর্মেন্স থেকেও ভালো হয়। এরপর বসদের কাছে আপনাকে অফিসে নিয়মিত না এসে কাজ করার অনুমতি চাইতে পারেন। অফিসে যাওয়া-আসায় অনেকেরই অনেকটা সময় নষ্ট হয়। আপনার যদি এমন চাকরি হয় – যাতে বাসায় থেকে কাজ না করলেও চলে – সেক্ষেত্রে আপনি এটা চেষ্টা করতে পারেন।
কিন্তু এটার একটা ঝুঁকিও আছে, বাসা থেকে কাজ করতে গেলে টিমের ও সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়, যেটা ক্যারিয়ারে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কাজেই এটা করার সময়ে সব দিক ভেবে চিন্তে সতর্ক হয়ে করতে হবে।
আর ব্যবসা যদি আপনার নিজের হয়, তবে সপ্তাহে এক/দুইদিন কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বাসায়ও একটা অফিসের মত বানিয়ে নিতে পারেন – যেখান থেকে আপনি নিজের কাজ করবেন এবং ফোন/ইন্টারনেট এর মাধ্যমে অফিসের কাজ নিয়ন্ত্রণ করবেন। এতে আপনার সময় অনেকটাই বেঁচে যাবে, এবং অনেক রিল্যাক্সড হয়ে কাজ করতে পারবেন।
পরিশিষ্ট:
সময়ের মূল্য জীবনে সব কিছুর চেয়ে বেশি। টাকা বা সম্পদ হারালে ফিরে পাওয়া যায়, কিন্তু সময়কে ফিরে পাওয়া যায় না। একারণেই টাইম ম্যানেজমেন্ট এতটা জরুরী।
আপনার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে সময়কে কাজে লাগানোটা সবচেয়ে জরুরী। প্রথম ধাপে আপনি আপনার সত্যিকার স্বপ্ন বা লক্ষ্যকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এর পরের ধাপ অনুসরন করে আপনি তার জন্য সময় বাঁচাতে পারবেন, অথবা অনেক কম সময়ে জরুরী কাজ শেষ করে নিজের জন্য সময় বাঁচাতে পারবেন। এই সময় আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে কাটাতে পারবেন, অথবা নিজের শখের পেছনে দিতে পারবেন।
সূত্র: নেট থেকে সংগৃহিত (লড়াকু)
তারিখ: মার্চ ১৪, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,