জাতিসংঘ–ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে প্রথমটি হলো দারিদ্র্যকে শূন্যে নামিয়ে আনা। বাংলাদেশকে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার খরচ করতে হবে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। স্বল্পোন্নত ৪৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশকেই এ খাতে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হবে।
সংস্থাটি বলেছে, করোনা মহামারির কারণে নতুন করে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। করোনা মহামারির বিষয়টি মাথায় রেখে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে ৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার খরচ করতে হবে। গতকাল সোমবার রাতে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। স্বল্পোন্নত ৪৬টি দেশ নিয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
আঙ্কটাড বলেছে, বাংলাদেশে উৎপাদনশীলতার এখন যে সক্ষমতা আছে এটিকে দ্বিগুণ করতে হলে আগামী ১০ বছরে আরও ২৪হাজার ১০০ কোটি ডলার খরচ করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে এ খাতেও বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছে আঙ্কটাড। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে উৎপাদনশীলতা আছে ৯ নম্বরে।
জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি হাতেগোনা কিছু খাত ও পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। কিছু খাতের ওপর অতিনির্ভরশীলতা বাংলাদেশকে একসময় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। তাই দু–একটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আঙ্কটাড বলেছে, বাংলাদেশ গড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাইলে এসডিজির ৮ নম্বর অভীষ্ট শোভন কাজ ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খাতে আগামী ১০ বছরে ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে, যা মোট জিডিপির ৩১ শতাংশ।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫০ বছর আগে এলডিসির শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। ১৯৭১ সালে বিশ্বের ২৫টি দেশ নিয়ে এলডিসির তালিকা দিয়ে শুরু হয়। ১৯৯১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২। এখন তা ৪৬–এ নেমে এসেছে। এখন পর্যন্ত বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ভানুয়াতু ও ইকোয়েটরিয়াল গিনি এই ছয়টি দেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশ, ভুটান, সাও টোমে প্রিনসিপে, অ্যাঙ্গোলা, সলোমান দ্বীপপুঞ্জ, কিরিবাতি ও টুভালু এই সাতটি দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডিপি) সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা। এ ছাড়া ভুটান বের হবে ২০২৩ সালে। সাও টোমে ও সলোমান দ্বীপপুঞ্জ, অ্যাঙ্গোলা, কিরিবাতি ও টুভালুও ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে কর ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ঘটাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। বর্তমান চাকরির বাজারের কথা মাথায় রেখে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে শিল্পনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই এগিয়ে রয়েছে। মাথাপিছু জাতীয় আয়ের সূচকে নির্ধারিত মান হলো ১ হাজার ২৩০ ডলার। বাংলাদেশের আছে ১ হাজার ৬৪০ ডলার। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে নির্ধারিত মান হলো ৬৬ থেকে তার বেশি। বাংলাদেশের আছে ৭৫। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে নির্ধারিত মান হলো ৩২ থেকে কম। বাংলাদেশের আছে ২৭। তবে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিতে বলেছে আঙ্কটাড।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,