গত সপ্তাহে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলে মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজে নাটকীয়ভাবে বাকি যাত্রীদের সঙ্গে আফগানিস্তান ত্যাগ করেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ডিএবি) গভর্নর আজমল আহমেদি। কাবুল থেকে পালানোর পর আহমেদি বর্তমানে অজ্ঞাত স্থানে বসবাস করছেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আফগান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক এই গভর্নর। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত তার একটি অভিমতে তিনি বলেন, কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব তিনভাবে টের পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে মানবিক সংকটেরও আশঙ্কা রয়েছে।
আহমেদি বলেন, আমি আশঙ্কা করছি অর্থনৈতিক প্রভাব তিনভাবে অনুভূত হবে। প্রথমত, আফগান মুদ্রার মান হ্রাস পাবে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে। ইতিমধ্যে খবর পাওয়া গেছে, কাবুলে গমের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এমনকি যাঁদের টাকা আছে, সেই আমানতকারীরাও ব্যাংক থেকে তাঁদের সঞ্চয় পুরোপুরি তুলতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, সামষ্টিক প্রকৃত আয় কমে যাবে। তালেবানের অধীনে সরকারের রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। যেহেতু দাতারা কম আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে, সরকারি সেবা–কর্মসূচিগুলোর কাটছাঁট করতে হবে। অনেক সরকারি কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হবে এবং যাঁরা বাকি আছেন, তাঁদের বেতন অনেক কম হবে। তৃতীয়ত, শরণার্থী প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। আমরা এখন কাবুল বিমানবন্দরে যার একটি ক্ষুদ্র প্রবাহ দেখতে পাচ্ছি। তবে প্রতিবেশী এবং আরও দূরে থাকা দেশগুলোকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও লাখ লাখ আফগান শরণার্থীর আগমন সামলাতে হতে পারে।
আহমেদি মনে করেন, আফগানিস্তানের আফিম ব্যবসা বা চোরাচালান ব্যবসাগুলো অনেক বেশি বিস্তৃত বলে অনেক প্রচার হয়। তবে ঘটনা পুরোপুরি সে রকম নয়। তিনি বলেন, কেউ কেউ অর্থনৈতিক সমস্যাকে ছোট করে দেখছেন। কারণ, অবৈধ খনি আহরণ, আফিম উৎপাদন বা বাণিজ্যিক পথ থেকে তালেবানের আয় বড়, এমনটা ভাবেন। আবার ভাবেন, চীন বা রাশিয়া বড় বিনিয়োগের জন্য মধ্যস্থতা করবে। এসব আসলে অতি আশাবাদী দৃশ্য। এ ধরনের উৎস থেকে তালেবানের রাজস্ব তুলনামূলকভাবে বড় বলে বিবেচিত হতে পারে তখনই, যখন তারা বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল। একটি কার্যকর সরকার পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণরূপে অপ্রতুল। সেই সঙ্গে চীন, রাশিয়া বা পাকিস্তান আফগানিস্তানে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করবে, এমন দাবিও বাস্তবসম্মত নয়।
আহমেদি বলেন, ‘২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে, বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, আফগানিস্তান কখনোই বিআরআইয়ের অংশ ছিল না এবং আমি আশাও করছি না যে ভবিষ্যতে এই উদ্যোগের অংশ হবে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান আবারও অন্ধকারের চাদরের মুখোমুখি হচ্ছে এবং সেখানে ভবিষ্যৎ বরাবরের মতোই অনিশ্চিত। বিমানবন্দরের দৃশ্যগুলো আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে তাড়া করে ফিরবে। কিন্তু আসুন, আমরা এখনই ব্যবস্থা নিই যাতে নিশ্চিত হয় যে এটি মানবিক সংকটে রূপ নেবে না।
আফগানিস্তান এখন কোভিড-১৯, সংঘাত ও খরা—এই তিন হুমকির মুখে রয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, দেশটির প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন। এর মধ্যে রিজার্ভের ৯০০ কোটি ডলার আটকে যাওয়ায় কঠিন অর্থনৈতিক আঘাত লেগেছে দেশটির অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সহায়তাও গ্রাস পাবে। ইতিমধ্যে জার্মানি ৩০ কোটি ডলার সহায়তা স্থগিত ঘোষণা করেছে। আইএমএফও এসডিআর বরাদ্দ স্থগিত করেছে। এই সপ্তাহে জি– সেভেন বৈঠকে ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও নতুন নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানাতে পারেন।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,