সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। তখন জাতিসংঘের শ্রম ও কর্মপরিবেশ–সংক্রান্ত নীতিকাঠামো (এনজিপিএস) পরিপালন করতে হবে। তবে এনজিপিএসের আটটি সূচকের সব কটিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে গতকাল শনিবার ‘জাতিসংঘের নীতিকাঠামোর আলোকে পোশাক খাতে শ্রম ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় এমনটাই জানান বক্তারা। ক্রিশ্চিয়ান এইড ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের শ্রম ও কর্মপরিবেশ–সংক্রান্ত নীতিকাঠামো অনুযায়ী আগামী দিনের পোশাকশিল্পকে গড়ে তুলতে হলে কিছুটা ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন হবে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্ব আলোচনায় অংশ নেন সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, শ্রমসচিব মো. এহছানে এলাহী, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, শ্রম বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে এনজিপিএস সূচকগুলো কী অবস্থায় রয়েছে, সেটি বোঝার জন্য একটি সমীক্ষা করে সিপিডি। এতে অংশ নেয় ৬০৩টি কারখানা। সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এনজিপিএসের আটটি সূচকের মধ্যে রয়েছে—নীতি প্রতিশ্রুতি, পরিচালনায় শ্রম বিষয়গুলো সংহতকরণ, মানবাধিকার–সংক্রান্ত ইস্যু শনাক্তকরণ ও ঝুঁকির অগ্রাধিকার, অংশীদারদের অংশগ্রহণ, মানবাধিকার–সংক্রান্ত ঝুঁকি মূল্যায়ন, একীভূতকরণ ও নিরসনজনিত ব্যবস্থা, নিয়মিত পর্যালোচনা এবং প্রতিকার ও অভিযোগ। এর মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সূচকে কিছুটা অগ্রগতি আছে। অংশীদারদের অংশগ্রহণ সূচকে অবস্থা বেশি খারাপ।
বিজ্ঞাপন
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তাদের সবাই মনে করেন, শ্রম মানবাধিকারের উন্নতি হলে সেটি সবার জন্যই ভালো। তাতে ক্রয়াদেশ ও উৎপাদন বাড়ে।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, এনজিপিএস পরিপালনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যেসব কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করা হয়েছে, তার আলোকে নিম্নতম নীতিকাঠামো করা যেতে পারে।
শ্রমিকেরা শ্রম আদালতে বিচার পান না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি বলেন, শ্রম আইনসংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে মামলার রায়ের পর অনেক কারখানার মালিক শ্রমিকের ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকা পাওনা না দিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তখন শ্রমিকের পক্ষে হাইকোর্টে মামলা চালিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার বলেন, পোশাকশিল্পের মালিকেরা ট্রেড ইউনিয়ন মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নন। তাঁরা ট্রেড ইউনিয়নকে অ্যালার্জি মনে করেন। অনেক পোশাকশিল্পের মালিক গণমাধ্যম কিংবা সভা–সমাবেশে ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ নিলেও তাঁরা ট্রেড ইউনিয়নকে ভয় পান। তিনি আরও বলেন, পোশাকশিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে।
বাবুল আক্তারের কথার সূত্র ধরে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে পোশাকশিল্পের মালিকদের মধ্যে ভীতি কাজ করে। তবে দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়নকে আমরা স্বাগত জানাই। যদিও দেশে দায়িত্বশীল ট্রেড আছে কি না, সেটি নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে।’
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাকশিল্পের ইতিবাচক বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বিজিএমইএ এই বিষয়ে সোচ্চার। এক বছরের মধ্যে এনজিপিএসের আটটি সূচকে অগ্রগতি হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
শ্রমসচিব মো. এহছানে এলাহী বলেন, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে সর্বনিম্ন বয়স কত হবে, সেটি নির্ধারণের বিষয়টি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তা ছাড়া শ্রম বিধিমালা সংশোধনও শিগগিরই সম্পন্ন হবে জানান তিনি।
আরও বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ক্রিশ্চিয়ান এইডের এদেশীয় পরিচালক পঙ্কজ কুমার, বিজিএমইএর পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান, হারুন অর রশীদ, আইনজীবী শারমিন সুলতানা প্রমুখ।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১০, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,