করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে দেশে বিধিনিষেধ জারি ও সীমান্ত বন্ধ থাকায় গত বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানির চাহিদা কমে যায় হু হু করে, সেই তালে কমে দামও। চলতি বছর সবকিছু আবার খুলতে শুরু করায় বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা আবার করোনা–পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে এসেছে। তবে সরবরাহ সে তুলনায় বাড়ানো সম্ভব হয়নি। চাহিদার চাপে ও সরবরাহের ঘাটতিতে তাই ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ১২০ ডলার। গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ঋণাত্মক ৪০ ডলার। এখন তা ঠেকেছে ৮০ ডলারে।
প্রায় সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গত সোমবার দেশটিতে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৮০ ডলার ছাড়ায়। এর আগে ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর তেলের দাম ৮০ ডলারের ওপরে উঠেছিল।
তেলের দাম ঋণাত্মক ৪০ ডলার কেন হয়েছিল
২০২০ সালের এপ্রিলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তেলের দাম শূন্যের নিচে নেমেছিল। বিষয়টি বুঝিয়ে বলা যাক। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে তেলের যে দাম বলা হয়, সেটা আসলে বাজারে তেলের দামের আগাম মূল্যায়ন। ভবিষ্যৎ চাহিদার ভিত্তিতে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী যে তেল সরবরাহ লাইনে আছে, তার ভিত্তিতেই আগামী কয়েক মাসে তেলের দাম কী হবে, সেটা বলা হয়। সরবরাহের তারিখ এগিয়ে এলে পরবর্তী মাসগুলোর চাহিদা মূল্যায়ন করে পরবর্তী দাম ঠিক করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম গত বছরের এপ্রিলে ব্যারেলপ্রতি শূন্যের নিচে নেমে যায়। সেটা ছিল মে মাসে সরবরাহের জন্য যেসব চুক্তি, তার ভিত্তিতে। অর্থাৎ কেউ তেল নিতে চাইছিল না। কারণ তেল মজুত রাখার জায়গা তাদের নেই।
আকাশচুম্বী গ্যাসের দাম
আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের (এএএ) তথ্যানুসারে, গত সোমবার গ্যাসোলিনের গড় মূল্যও বিগত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু গত সপ্তাহেই গ্যাসোলিনের দাম সাত সেন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি গ্যালন ৩ দশমিক ২৭ ডলারে। অথচ গত বছরের এপ্রিলে প্রতি গ্যালনের দাম ছিল ১ দশমিক ৭৭ ডলার, যা এ বছর প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, উচ্চ গ্যাসের দাম মূল্যস্ফীতির হারও বাড়িয়ে তুলবে। মার্কিন পরিবারগুলোর মাসিক বাজেটে চাপ পড়বে। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রাজনৈতিক ভাগ্যে আঘাত হানবে। পরিস্থিতি যা, তাতে গ্যাসের দাম আরও বাড়তে পারে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম এতটাই বেড়েছে যে ইউরোপ ও এশিয়ায় কারখানাগুলোতে বিদ্যুতের জন্য তুলনামূলকভাবে সস্তা জ্বালানি উৎসে পরিণত হতে পারে অপরিশোধিত তেল।
তেলের দাম যেতে পারে ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার পর্যন্ত
গত সোমবার মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ তার পূর্বাভাসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৫ ডলার পর্যন্ত উন্নীত করেছে। তারা বলছে, চলতি বছরের অপরিশোধিত তেলের দাম ৯০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তারা বলছে, এ শীতে জ্বালানির দাম হবে আকাশচুম্বী। প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে শীতের এ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। ফলে যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, তা হলো গ্যাসের চেয়ে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি। ফলে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে। প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলার হয়ে যেতে পারে।
সিটি গ্রুপ আরও আশঙ্কা করছে, সামনের শীতে, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ইউরোপে গ্যাসের সংকট দেখা দিতে পারে। ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত বছর প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ ছিল ২ ডলারের কম। অথচ এই শরতে দাম বেড়ে ৫৫ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
চীনে কয়লার দাম সর্বোচ্চ
এদিকে জ্বালানি নিয়ে বিপাকে আছে চীন। দেশটিতে শুধু গ্যাসের দামই বাড়েনি, কয়লার দামও হয়েছে আকাশচুম্বী। চীনের উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে কয়েক ডজন কয়লাখনি বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী কয়লার দামও বেড়ে গেছে। চীনে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ইস্পাত তৈরিসহ প্রায় সব শিল্পেই কয়লা মূল উপাদান। এমনিতে দুই মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংকটে ছিল দেশটি। কয়লার দাম বাড়ায় তা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বহু কলকারখানা বিদ্যুৎ–সংকটে বন্ধ রয়েছে।
সূত্র: সিএনএন
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,