তেজপাতা দেখেনি, এমন মানুষ বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না আমাদের দেশে। মসলা হিসেবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। এর ভেষজ গুণ শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এত গুণের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তেজপাতার কদর রয়েছে। এটি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনে বেশি উৎপন্ন হয়। তেজপাতায় আছে ভিটামিন ‘ই’ ও ‘সি’, রয়েছে ফলিক অ্যাসিড। এতে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়তা করে।
ঘরোয়া চিকিৎসায় তেজপাতা
তেজপাতা আমাদের দেশের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত একটি গাছ। এর পাতা ব্যবহার করা হয় মূলত মসলা হিসেবে। খাবারে এটি ব্যবহার করা হয় এর ভেষজ গুণাগুণের কারণে। ভেষজ গুণের কারণেই তেজপাতা ঘরোয়া চিকিৎসায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় আমাদের দেশের আনাচকানাচে।
তেজপাতা অরুচি দূর করে। এ জন্য তেজপাতা সেদ্ধ করে তার পানি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। মাথার হালকা ব্যথা বা মাথাধরা দূর করার জন্য লবঙ্গ ও তেজপাতা দিয়ে চা বানিয়ে খাওয়ারও প্রচলন আছে কোথাও কোথাও। মাড়িতে ব্যথা কিংবা ক্ষত হলে তেজপাতা–সেদ্ধ পানিতে অল্প পরিমাণ লবণ মিশিয়ে গার্গল করার প্রচলন রয়েছে।
হার্টবান্ধব
তেজপাতায় জৈব যৌগের মধ্যে রয়েছে ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। হৃদ্যন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৩০ দিন ১ থেকে ৩ গ্রাম তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমে। তেজপাতায় থাকা উপাদান ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
তেজপাতার মধ্যে রয়েছে লিনালুল নামক উপাদান। এটি উৎকণ্ঠা কাটাতে, শান্ত থাকতে ও হতাশা দূর করতে সহায়তা করে।
তেজপাতার স্বাস্থ্যগুণ
সর্দিকাশি বা ফ্লু এড়াতে কার্যকর: তেজপাতায় থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। সর্দিকাশি বা ফ্লু এড়াতে তেজপাতা সেদ্ধ করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
হজমশক্তি বাড়ায়
হজমশক্তি বাড়াতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তেজপাতায় রয়েছে এমন জৈব যৌগ, যা পেটের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যায় তেজপাতা খুব কার্যকর। অনেক সময় শরীর জটিল প্রোটিন সহজে হজম করতে পারে না, তেজপাতা তা হজমে সাহায্য করে।
ব্যথা উপশমে কার্যকর
তেজপাতার অন্যতম গুণ হলো এটি প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথাব্যথা উপশমে কার্যকর। তেজপাতায় রয়েছে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট উপাদান, যা প্রদাহ দূর করে। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে তেজপাতার এসেনশিয়াল ওয়েল উপকারী।
ক্ষত নিরাময় করে
বিভিন্ন ধরনের ক্ষত নিরাময়ে তেজপাতা অতুলনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।
সূত্র: ‘কোন খাবারে কি ভিটামিন ঘরে বসে জেনে নিন’, অধ্যাপক ডা. আশরাফ চৌধুরী এবং এনডিটিভি অনলাইন। (প্রথম আলো)
তারিখ : জানুয়ারী ০৪, ২০২১
যদি বলি তেজপাতা ত্বকের বলিরেখা দূর করে তারুণ্য ধরে রাখে তাহলে চমকাবেন না কিন্তু। এর ভেষজগুণে বলি রেখা দূর করার উপাদান আছে বলেই স্বীকার করেন বিউটিশিয়ানেরা। মসলা হিসেবে তেজপাতার ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা থাকলেও প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সৌন্দর্য চর্চায় এর গুরুত্বের কথাও স্বীকার করা হয়েছে। ফলে শত শত বছর ধরে হাতের কাছের যেসব জিনিস দিয়ে সৌন্দর্য চর্চা করে আসা হচ্ছে তেজপাতা সেগুলোর অন্যতম।
এখানে জানিয়ে রাখি, প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রই যে সৌন্দর্য চর্চায় তেজপাতার কথা বলেছে তাই নয়। আধুনিক বিজ্ঞানও সেটা স্বীকার করে। তেজপাতা থেকে পাওয়া তেল বিভিন্ন দামি পারফিউম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এর বাকল থেকে পাওয়া তেল দিয়ে সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ তো গেল তেজপাতাকে মেশিনে দিয়ে তার তেজকে ভেঙেচুড়ে অন্য একটি জিনিস বানিয়ে তার ব্যবহারের কথা। কিন্তু হাতের কাছে থাকা আস্ত তেজপাতা কীভাবে ব্যবহার করবেন সৌন্দর্য চর্চায় সে বিষয়ে কিছু টিপস দিয়ে রাখি।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে
অধ্যাপক ডা. আশরাফ চৌধুরী জানাচ্ছেন, তেজপাতার উদ্ভিজ্জ উপাদান ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্রি র্যাডিক্যাল নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর জন্য তিনি মুখে তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ দিতে বলেছেন। তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ অ্যান্টি এইজিং সলিউশন হিসেবে কাজ করে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বক উজ্জ্বল করতে
বিউটি ক্রিমের দৌরাত্ম্য শেষ হয়নি আমাদের জীবনে। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমরা সৌন্দর্য চর্চায় ভেষজে উপাদানের সহায়তা নিচ্ছি ত্বক উজ্জ্বল করতে। অধ্যাপক ডা. আশরাফ চৌধুরী জানাচ্ছেন, তেজপাতা আপনার ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করতে পারে। কীভাবে? বেশি পানিতে তেজপাতা সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ পানি ঠান্ডা করুন। তারপর সে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তেজপাতা সেদ্ধ ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত মুখ ধোয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ার পাশাপাশি ব্রণের জন্যও এটি উপকার করবে।
শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে
কত কিছুই তো আমরা ব্যবহার করি শরীর থেকে দুর্গন্ধ তাড়াতে। এবার শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে প্রায় বিনা পয়সার একটি টিপস দেওয়া যাক আপনাদের। রান্নার জন্য কেনা শুকনো তেজপাতা গুঁড়ো করে নিন। পরিষ্কার এক টুকরো কাপড়ে গুঁড়ো তেজপাতা দিয়ে পুঁটলি বাঁধুন। গুঁড়ো তেজপাতার সেই পুঁটলি কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন কুসুম গরম পানিতে। তারপর সে পানি দিয়ে স্নান সেরে নিন। শীতে গরম পানিতে স্নান করার অভ্যাস আমাদের আছে। এ সময় এই টিপসটি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। একদিন তেজপাতা গুঁড়ো দিয়ে স্নান করলেই হবে না। এটা চালিয়ে যেতে হবে এক নাগাড়ে কিছুদিন।
খুশকি দূর করতে
আপনার প্রিয় ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু মাঝে মাঝে শ্যাম্পুর জায়গায় তেজপাতা সেদ্ধ করা ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল পড়াও কমে যাবে। চুল পড়ে যাওয়া জায়গাগুলোতে তেজপাতার এসেনশিয়াল ওয়েল ব্যবহার করুন। তাতে চুল আর উঠবে না।
দাঁত উজ্জ্বল করতে
ব্রাশ তো প্রতিদিন করেনই। সেটা অব্যাহত রাখুন। ডা. আশরাফ চৌধুরী জানাচ্ছেন, নিয়ম করে মাঝে মাঝে দাঁতে কাচা তেজপাতা ঘষে নিন। কাচা তেজপাতা মাউথ ওয়াশ হিসেবেও কাজ করবে আপনার মুখে।
সূত্র: কোন খাবারে কি ভিটামিন ঘরে বসে জেনে নিন, অধ্যাপক ডা. আশরাফ চৌধুরী। (প্রথম আলো)
তারিখ: জানুয়ারী ০৫,২০২১
রেটিং করুনঃ ,