Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

তিস্তার মহা পরিকল্পনার আড়ালে (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: নাহিদ হাসান।

সম্প্রতি তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। পরিকল্পনা হাজির করেছে একটা চীনা কোম্পানি। আর তা বাস্তবায়নের দাবি করছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। ত্রিমাত্রিক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শহরের ড্রেনের মতো পাকা করা ক্যানেলের মতো তিস্তা। তার দুপাশে বিশাল বিশাল ভবন, গোছানো ছিমছাম আবাদি জমি। তেভাগা আন্দোলনের কেন্দ্র ডিমলা থেকে গাড়িয়াল ভাইয়ের চিলমারী পর্যন্ত হুবহু ইউরোপের যেকোনো রাজধানী শহর। এর প্রস্তাবিত ব্যয় আট হাজার কোটি টাকা।

ভিডিওতে বলা হচ্ছে, তিস্তার পানি আসবে তিস্তা খনন করেই। ভূগর্ভের পানি এসে ভরাট করবে উত্তরের জীবনরেখাকে। বিজ্ঞানী কপিল ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘পৃথিবীর বার্ষিকগতি অনুযায়ী সূর্যের উত্তাপের প্রবলতায় গ্রীষ্মপ্রধান মাসগুলোয় পর্বতশৃঙ্গের তুষার আবরণ গলে যায় আর তা জলে পরিণত হয়ে ঝরনার আকারে নামে। হিমবাহ আকারে তুষার পর্বতের গা বেয়ে নেমে এসে উত্তপ্ত অংশে প্রবেশ করে জলে পরিণত হয়েও ঝরনার আকারে নামে। এই জলের কতকাংশ বিশেষত পৃথিবীর উচ্চ পার্বত্য ও বন্য অঞ্চলে আবার শিলার ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু অংশ আবার বাষ্পে পরিণত হয়। এভাবে একটা নৈসর্গিক চক্র ঘুরছে।’

ইউরোপীয় চিন্তাকাঠামোয় নদী বলতে ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারাকে বোঝায়। কিন্তু ভারতীয় ভাবনায় নদী পাতাল দিয়েও প্রবাহিত। যেমন ভোগবতী। তিস্তার উত্তরে, মানে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম থেকে আসা তিস্তার উপনদনদীগুলো আজ হয়তো চিহ্নহীন, কিন্তু পাতাল দিয়ে সেগুলো ঠিকই প্রবাহিত আছে। ঠিকই তিস্তায় তারা এসে পড়ছে। তাই ভারতের বাঁধ ভূপৃষ্ঠের পানি আটকে দিলেও রংপুর বিভাগ মরুভূমিতে পরিনত হয়নি। কিন্তু মহাপরিকল্পনা অনুসারে খনন করে পাতালের পানি ভূপৃষ্ঠে যখন আনা হবে, তখন?

পাতালের যে পানিটুকু এত দিন রংপুর বিভাগকে সজীব রেখেছিল, তা বাষ্পায়নের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা জানেন, যে পানি ধরে রাখা হয়, তার বাষ্পায়নের হার শতকরা ৩০ ভাগ। মানে তিন ভাগের এক ভাগ পানি আকাশে উড়ে যাবে। সেই উড়ন্ত পানিকে ফেরাবে যে বনভূমি, তাও শেষ হয়ে যাবে যদি গাছের গোড়ায় পানি না থাকে। আর বাকি পানিটুকু অনবরত ব্রহ্মপুত্রে মিশে যাবে অশ্রুর মতো। এক ভারতে বাঁধের কারণে ভূপৃষ্ঠের পানি আটকে গেছে, এখন চীনা কোম্পানির পরিকল্পিত প্রকল্পে পাতালও পানিহীন হোক, আমরা কি এই-ই চাই? উত্তরের জীবনরেখা এবার মরণরেখায় পরিণত হবে। তবু এ আত্মঘাতী দাবি কেন?

২.
তবু এ আত্মঘাতী দাবি এই কারণে যে ‘লাভে লোহা উবায় (বহন করে)’। পৃথিবীর মূল সম্পদগুলো হলো ভূমি, পানি আর জীববৈচিত্র্য। দারিদ্র্যের মূলধনও তাই। রংপুর বিভাগের ভূগর্ভ যখন পানিহীন হবে, তখন কী ঘটবে? পানির দর সোনার দরকেও হার মানাবে।

পানির আরেক নাম জীবন। পানির ব্যবসা এখন বাস্তব। নব্বইয়ের দশকেই বলিভিয়ায় পানির দাম বেড়েছে ৩ গুণ, ব্রিটেনে ৬৭ শতাংশ। দুনিয়াময় মানুষের পানি-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা বেড়েছে ১৭৭ শতাংশ। নিউজিল্যান্ডে রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে। আজ ২০২১ সালে বোতলের পানি ছাড়া সভা সমিতি কল্পনাই করা যায় না। নদী আলোচনায় বক্তার সামনে থাকে পানির বোতল।

ইতিমধ্যে কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তাপাড়ের গ্রাম থেতরাইতে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা ভূগর্ভের পানি ব্যবসা শুরু করেছেন। কোম্পানির নাম ‘সান’। একটি বহুজাতিক কোম্পানি স্বত্ব পেয়ে কেরালার একটি গ্রামের ভূগর্ভস্থ পানি বোতলজাত করে বিক্রি করছে বাজারে। সে গ্রামে লোকজন এখন পানিশূন্য। সেই প্রতিষ্ঠান গ্রামটির সমস্ত পানি নিঃশেষ করে ফেলেছে। তিস্তার থেতরাই গ্রামের জন্য কি কেরালার সেই গ্রামের ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?

ভবিষ্যতে এ রকম পানি কোম্পানির সংখ্যা নিশ্চয়ই বাড়বে তিস্তাপাড়ে। যেমন, ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ভবানী নদীকে মার্কিন বেকটেল ও লার্সেন অ্যান্ড টুর্বোর মতো করপোরেট কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৮ সালে ছত্তিশগড়ের শেওনাথ নদীর ২৩ কিলোমিটার বিক্রি করা হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী কৈলাস সোনির কাছে।

৩.
একটা গল্প বলি। ১৯৯০ সালে আগের ঘটনা। মস্কোতে সারা দুনিয়ার কমিউনিস্টদের প্রতিনিধিদের সম্মেলন। হোটেল থেকে সম্মেলনস্থলে যাওয়ার পথে এক জায়গায় সড়কটি দুই ভাগ হয়ে আবার এক জায়গায় গিয়ে মিলেছে। উপবৃত্তকার জায়গাটিতে গাড়ি দুই রাস্তা দিয়েই যেতে পারে।

যাওয়ার পথে ওই জায়গায় প্রথম চলে এসেছে আমেরিকান কমরেডের গাড়ি। ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘স্যার, ডান না বাঁ দিকে যাব?’ আমেরিকার কমরেড নির্বিকারভাবে বললেন, ‘পুঁজিবাদী দেশের লোক আমি, কোন দিক দিয়ে যাব জানো না?’ ড্রাইভার ডান দিক হয়ে চলে গেলেন। এবার একই জায়গায় রাশান। ড্রাইভারের একই প্রশ্ন। জবাবে রাশান কমরেড বললেন, ‘জিজ্ঞাসার কী আছে? জানো না কমরেড, আমরা কমিউনিস্ট, আলবৎ বাঁ দিক হয়ে যাবে।’

রাশান কমরেডের গাড়িও চলে গেল। এবার বাংলাদেশি কমরেডের গাড়ি। যথারীতি ড্রাইভারের একই প্রশ্ন, ‘ভাই, কোন দিয়ে?’ বাংলাদেশি কমরেড তো বিপদে। ভাবছেন, এ কেমন পরীক্ষায় পড়লেন! কমিউনিস্ট হিসেবে দেশে তো কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। এখান থেকে যে নির্দেশ গেছে, তিনি তা-ই পালন করে গেছেন। এখন উপায়? এদিকে ড্রাইভারও বলছে, ভাই তাড়াতাড়ি, জ্যাম তো লাগে বোধ হয়। তখন বাংলাদেশি কমরেড মুচকি হেসে বলেন, ‘কমিউনিস্ট হিসেবে তো বাঁ দিক দিয়ে যাওয়া উচিত। এক কাজ করো, বাঁ দিকে সিগন্যাল মেরে ডান দিক দিয়ে যাও।’

তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্ভবত এমনই, ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করার ঝামেলাটাও চিরতরে থামানো গেল আর পানি ব্যবসার রাস্তাটাও খুলে গেল।

নাহিদ হাসান রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি।

সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: আগষ্ট ১০, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ