প্রতিশ্রুতি না রেখে তালেবান কট্টরপন্থী ও সন্ত্রাসী তালিকায় থাকা নেতাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করায় উদ্বেগ জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। অপরদিকে তালেবান সরকারের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ জানিয়েছে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ।
এদিকে মঙ্গলবার আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে তালেবানবিরোধী বিক্ষোভে তিনজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন শহরে ধারাবাহিক বিক্ষোভের মুখে তালেবানের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ বিষয়ে আইন না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কর্মসূচি পালনে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তবে গতকালও কাবুলসহ দুটি শহরে নারীরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে তালেবান সদস্যরা লাঠিপেটা করেছেন বলে খবর এসেছে।
তালেবান গত মাসে রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দেশটিতে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। নতুন সরকারে ‘বিতর্কিত’ তালেবান নেতারা যাতে স্থান না পান, সেই আশাও তারা করেছিল।
কিন্তু দুটোর কোনোটাই মানা হয়নি। মঙ্গলবার ঘোষিত তালেবানের সরকারপ্রধান মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ জাতিসংঘের কালোতালিকায় রয়েছেন। এ ছাড়া সন্ত্রাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা সিরাজউদ্দিন হাক্কানিসহ হাক্কানি নেটওয়ার্কের চারজন নেতাকে মন্ত্রী করা হয়েছে। রাখা হয়নি অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও নারীকে। সরকার গঠনের পরই এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানকে শরিয়াহ আইনে পরিচালনার কথা বলেছেন তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে এটা নিশ্চিত করতে চাই যে ইসলামিক আইন ও শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নে এ সরকার কঠোর পরিশ্রম করে যাবে।’
গতকাল বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের নতুন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ‘অতীতে খারাপ রেকর্ড থাকা’ কিছু ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং নারীদের না রাখায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বিদেশি নাগরিক ও বৈধভাবে আফগানদের দেশত্যাগ করার সুযোগ দেওয়াসহ তালেবান যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নের জন্য ওয়াশিংটন চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে।
গতকাল তালেবানের সরকার নিয়ে ২০টি পশ্চিমা দেশের নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেছেন, তালেবান সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি এবং সেখানে এমন লোকজনকে নেওয়া হয়েছে, যাঁদের অতীত ইতিহাস ভালো নয়। তালেবান আন্তর্জাতিক বৈধতা ও সহায়তা চায়। তবে তা তাদের কাজের মাধ্যমেই অর্জন করতে হবে।
তালেবান সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নও। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল ইইউর মুখপাত্র পিটার স্টানো বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের বলেছেন, যেভাবে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন হবে। তিনি বলেন, ‘তালেবান নতুন সরকারে যাঁদের নাম ঘোষণা করেছে, তাঁরা কোনোভাবেই সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন না। গত কয়েক সপ্তাহে তালেবান যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল, তা তারা রাখেনি।’
এদিকে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো দেশের সঙ্গে দেনদরবার করবে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটির মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, আলোচনা ও সরকারে সব পক্ষের অন্তর্ভুক্তিই আফগানিস্তানে শান্তি আনতে পারে।
এদিকে তালেবানের নবগঠিত সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। গতকাল বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন সাংবাদিকদের বলেন, কাবুলে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে আফগানিস্তানে তিন সপ্তাহ ধরে চলমান নৈরাজ্যের অবসান হওয়ায় তাঁরা খুশি। আফগানিস্তানে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন।
এদিকে রাশিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার ভ্যালেন্তিনা মাতভিয়েঙ্কো গতকাল বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, তালেবান সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রতিনিধি থাকবেন। আর গতকাল মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন নেতার সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে আফগানিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৯, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,