আফগানিস্তানের নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবানের প্রধান অংশীদার হবে চীন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনে সহায়তাও করবে বেইজিং। তালেবানের মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু করেছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটির মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক গত বৃহস্পতিবার বলেন, রোববার থেকে এ পর্যন্ত তিনটি উড়োজাহাজ সহায়তাসামগ্রী নিয়ে সে দেশে অবতরণ করেছে। এএফপি, আল-জাজিরা ও দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবর।
ইতালির সংবাদপত্র লা রিপাবলিকায় গত বুধবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমাদের প্রধান অংশীদার হবে চীন। দেশটি আমাদের স্বার্থ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে। আমাদের দেশে বিনিয়োগ করা ও দেশের পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে তারা।’
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে মূল্য দেয় তালেবান। কেননা, এ প্রকল্প প্রাচীন সিল্ক রোডকে পুনরুজ্জীবিত করবে। তিনি বলেন, চীন আফগানিস্তানের সমৃদ্ধ খনিজ তামার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে ও বিশ্ববাজারে দেশটিকে প্রবেশে সহায়তা করবে।
রাশিয়াও এ অঞ্চলে আফগানিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে বলে সাক্ষাৎকারে মতামত প্রকাশ করেন তালেবান মুখপাত্র। তিনি বলেন, তাঁর সংগঠন মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।
কাবুল বিমানবন্দরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মুজাহিদ বলেন, এটি তাঁদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে বিমানবন্দরটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পত্রিকাটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে কাতার ও তুরস্ক। তিনি বলেন, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে এটি পরিষ্কার করা হবে এবং অল্প সময়ে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। আশা করি, চলতি মাসেই বিমানবন্দরটি চালু হবে।’
ইতালির সঙ্গে সম্পর্ক প্রশ্নে মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, তালেবানের আশা, ইতালি তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেবে ও কাবুলে আবার দূতাবাস খুলবে।
গত ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে কাবুলের পতন ঘটে। এরপর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও তাঁর সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। তালেবান একটি নতুন সরকার গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আজ শনিবার এ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
কাশ্মীরিদের পক্ষে কথা বলার অধিকার রাখে তালেবান
তালেবানের একজন মুখপাত্র ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ভারতের অবৈধভাবে দখলে থাকা জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলিমদের পক্ষে কথা বলার অধিকার রয়েছে তালেবানের। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুহাইল শাহীন এ কথা বলেন।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের সম্পাদিত দোহা চুক্তির কথা উল্লেখ করে সাক্ষাৎকারে সুহাইল শাহীন বলেন, চুক্তির শর্তে বলা আছে, কোনো দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার নীতি তাঁদের নেই। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে ভারতের কাশ্মীর ও অন্য যেকোনো দেশের মুসলিমদের পক্ষে কথা বলার অধিকার তালেবান সদস্যদের রয়েছে।
সুহাইল বলেন, ‘মুসলিমদের পক্ষে আমাদের কণ্ঠ সোচ্চার থাকবে। (ভারতকে) আমরা বলতে চাই, মুসলিমরা আপনাদেরই জনগণ, আপনাদেরই নাগরিক। আপনাদের আইন অনুযায়ী, সমান অধিকার ভোগ করা তাঁদের প্রাপ্য।’
সমালোচকেরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের অধীন ২০১৪ সাল থেকে ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক অপরাধ বাড়ছে। তবে তাঁর দল বিজেপি ও এর মিত্ররা এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু
তালেবান আফগানিস্তানের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রোববার দেশটিতে আবার মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত তিনটি উড়োজাহাজে করে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই-শরিফ ও দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার শহরে এসব সহায়তা পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সংস্থার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ডব্লিউএফপি আফগানিস্তানে যত শিগগির সম্ভব তার কার্যক্রম জোরদার করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০০২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউএন হিউম্যানিটারিয়ান এয়ার সার্ভিস আফগানিস্তানে ২০টির বেশি গন্তব্যে সহায়তাসামগ্রী পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হলে ও তহবিলের অনুমতি মিললে ওই সব গন্তব্যে আবার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু
আফগানিস্তানে শুক্রবার থেকে আবার চালু হয়েছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট।আফগানিস্তানের এয়ারলাইনস কোম্পানি অ্যারিয়ানা আফগানের পক্ষ থেকে এমনটিই বলা হয়েছে। এয়ারলাইনসটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক তামিম আহমাদি বলেন, ‘তালেবানের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছি। তাই আজ (শুক্রবার) থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে।’
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,