তালিবানের বড় ‘ভরসা’ চিন। তাতে খুশি বেজিংও। আজ আফগানিস্তান-প্রসঙ্গে চিন জানিয়েছে, ‘‘ওদের (তালিবানকে) সম্মান করুন। এখনই চাপ দেবেন না।’’ এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চিনা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালিবানের মুখপাত্র সুহেল শাহিন বলেন, ‘‘আফগানিস্তানকে নতুন করে গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা নেবে বেজিং।’’ পাকিস্তানও আজ জানিয়েছে, তাদের বিশ্বাস তালিবান পরিপূর্ণ সরকার গঠন করবে।
চিনা বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আজ আরও বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে তালিবান শাসন আমরা দেখেছি, তার থেকে ওরা এখন অনেক বেশি ‘স্পষ্ট এবং বাস্তবিক ভাবে’ ভাবছে। পাকিস্তানের আফগান রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমেদ খান জানান, তাঁরা তালিবানের সঙ্গে কথা বলছেন। আগেও কাতারে তালিবান নেতা মোল্লা আব্দুল গনি বরাদরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, সংবাদপত্রের ভাষায় যাকে ‘সরকার’ বলে, আশা করা হচ্ছে সেই সরকার গঠন হবে আফগানিস্তানে।
গত এক সপ্তাহে গোটা কাবুল-সহ আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে তালিবান। প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ফের তালিবানের অত্যাচার শুরু হতে পারে ভেবে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। গত দু’দিনে দেখাও যাচ্ছে তেমনটাই। প্রাক্তন মহিলা গভর্নর সেলিমা মাজ়ারিকে তুলে নিয়ে গিয়েছে তালিবান, বোরখা না-পরার অপরাধে ‘খুন’ করা হয়েছে এক তরুণীকে, কাবুলের রাস্তায় মুখে কালি লেপে, হাত-পা ট্রাকের সঙ্গে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক যুবককে। চিন অবশ্য মনে করছে, তালিবান বদলে গিয়েছে। তারা এখন আগের থেকে অনেক ‘নরমপন্থী’ এবং পরিপূর্ণ সরকার গঠন করতে প্রস্তুত।
চিনা বিদেশ মন্ত্রকের তালিবান-সমর্থনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শাহিনের সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হয় চিনের সরকারি টিভি চ্যানেলে। শাহিনের দাবি, বিদেশি মিডিয়ায় তালিবানের সন্ত্রাস সম্পর্কে যে সব খবর দেখানো হচ্ছে, সেগুলি মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, ‘‘মেয়েদের উপর কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। যাঁরা সাংবাদিক, তাঁরা তো তাঁদের কাজ করছেনও! যাঁরা শিক্ষিকা, তাঁরা স্কুলে যাবেন।’’ তালিবান-মুখপাত্রের বক্তব্য, কঠোর শরিয়তি আইন সম্পর্কে আফগানিস্তানের মানুষের কোনও অসন্তোষ নেই।
চিনের ভূমিকা সম্পর্কে শাহিন বলেন, ‘‘চিন একটি বড় দেশ। ওদের বিশাল অর্থনীতি এবং ক্ষমতা। আমি বিশ্বাস করি, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে চিন।’’ ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী ডমিনিক রাবের সঙ্গে আজ ফোনে কথা হয় চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র। ওয়াং বলেন, ‘‘এত চাপ দেওয়ার বদলে গোটা বিশ্বের উচিত আফগানিস্তানের পাশে থাকা। তাদের পথ দেখানো। ওরা এখন একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।’’ তিনি আরও মন্তব্য করেন, আমেরিকা জোর করে আগ্রাসন ঘটিয়েছিল আফগানিস্তানে। ২০ বছর পরে ফের তালিবান ক্ষমতায় এসেছে। রাবকে তিনি বলেন, আফগানিস্তানকে ভূ-রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর। উল্লেখ্য, তালিবানের আফগানিস্তান দখলের ঠিক এক মাস আগে তাদের রাজনৈতিক প্রধান মোল্লা আব্দুল গলি বরাদরকে তিয়ানজিনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চিন। বলেছিল, তাদের আশা আফগানিস্তান নতুন করে তৈরি করতে ও সে দেশে শান্তি আনতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেবে তালিবান।
রাব সম্প্রতি চিন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি হয়, মতানৈক্যে নয়।’’ তাতে সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত হয়েছিল। আজ রাবের সঙ্গে কথা বলার পরে ওয়াং জানান, দু’পক্ষের ‘সদর্থক’ কথাবার্তা হয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
তারিখ: আগষ্ট ২১ , ২০২১
রেটিং করুনঃ ,