ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য বাস্তবতার নিরিখে এ দেশের তরুণদের প্রস্তুত করতে হবে। চাকরির বাজারের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে তরুণদের দক্ষ করতে হবে। তরুণদের দক্ষ করার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ, করোনার কারণে প্রতিনিয়তই সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে, কাজের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর চাকরির সুযোগ বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্য দক্ষতার প্রয়োজন’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় বক্তারা বলেন, তরুণেরাই দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে। বাংলাদেশ এখন জনসংখ্যা বোনাসের যুগে আছে। তাই তরুণদের দক্ষ করে তুলতে পারলে দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করবে। তরুণেরাই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশজুড়ে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। তাদের পাঠ্যক্রম আধুনিক করেও তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান। তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই কাজের ধরন বদলে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ দক্ষ কর্মীকে আবার নতুন করে সাজাতে হবে। আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রত্যেকেরই মৌলিক তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান থাকা উচিত। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে।
ইয়াসির আজমান আরও বলেন, কোভিডের আগে কয়েক বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি ছিল। মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন জনসংখ্যা বোনাসের যুগে আছে। দেশের ৩৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। প্রতিবছর গড়ে ২২ লাখ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। করোনার কারণে ৪ কোটি ২০ লাখ শিশু স্কুল থেকে দূরে আছে। কীভাবে এই পরিস্থিতির উত্তরণ করা হবে? প্রবাস থেকে দেড় লাখ শ্রমিক ফিরে এসেছে। তাদের কর্মসংস্থান দরকার। এ ছাড়া গ্রামের গরিব তরুণদের চিন্তাও করতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দক্ষ করে তোলায় যায়, তা নিয়ে কয়েকটি প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, সবার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে ২৩ মন্ত্রণালয় কাজ করে। তাদের মধ্যে সমন্বয় কতটা আছে? এ ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি এনজিও এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা দরকার। রাশেদা কে চৌধুরী আরও বলেন, ‘তরুণদের কথা শুনতে হবে। তারা কী চায়, তা শুনতে হবে।
শ্রমবাজারের চাহিদা কী, আর বর্তমানে সরবরাহ কী, তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার।’
বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরির পক্ষে মত দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ তৈরি করতে তথ্যপ্রযুক্তি ও ভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা ও সংক্ষিপ্ত কোর্স চালুর পক্ষে মত দেন মসিউর রহমান। তিনি মনে করেন, একটি দর্শন ভিত্তির ওপর একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হওয়া উচিত।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা মনে করেন, দক্ষ জনবল তৈরি করতে মানসম্পন্ন শিক্ষক প্রয়োজন। করোনায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ফ্রিল্যান্সারদের কাজের সুযোগ বেড়েছে। তরুণেরা ঘরে বসেই এসব কাজ করতে পারেন।
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, করোনার এ সময়ে বড় কোম্পানিগুলোও জানে না, কাল কী হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি। তাই খেটে খাওয়া গরিব মানুষকে সামাজিক সুরক্ষায় আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি (কারখানায় অগ্নিকাণ্ড) কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীর কোনো দেশেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এটুআইয়ের নীতি পরামর্শক আনির চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে বহু লোক বিপাকে পড়েছে। অনেকের আয় নেই, তাদের ঘরে খাবারও নেই। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্যপ্রযুক্তি আসছে। ব্যবসার ধরনও বদলে গেছে। তাই চাকরির বাজারের বাস্তবতার নিরিখে আমাদের তরুণদের প্রস্তুত বা দক্ষ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির উপ–আবাসিক প্রতিনিধি নুয়েন থি নক ভ্যান।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ১৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,