‘চীনা ঠিকাদার সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়’
চীনের ঋণ নিঃসন্দেহে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অথবা জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার ঋণের চেয়ে বেশি খরচের। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার ঋণের সঙ্গে অনুদানমূলক বিষয় থাকে। চীন যেসব ঋণ দিচ্ছে, সেখানে তা থাকে না।
চীনা ঋণে নতুন একটি উড়ালসড়ক নিয়ে মতামত জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন। সরকার প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক নির্মাণ করছে, যার নির্মাণকাজ চলতি মাসে শুরু হয়।
উড়ালসড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে চীনের সঙ্গে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকার) পদ্ধতিতে। ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে চীন সরকার দেবে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। মূল ঋণের সুদ, সার্ভিস ও কমিটমেন্ট চার্জ (অঙ্গীকারের বিপরীতে মাশুল) মিলিয়ে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।
ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়কের ব্যয় কি শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা থাকবে, এ প্রশ্ন তুলে আহসান মনসুর বলেন, চীনা ঠিকাদারেরা সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়। অর্থাৎ কোনো চুক্তি করার সময়, কাজ নেওয়ার সময় ব্যয় কম করে দেখায়। পরে সেটা বেড়ে যায়। এটা তারা করে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোর (ওইসিডি) ঠিকাদারেরা বাংলাদেশে ঠিকাদারি কাজ পায় না। কারণ, তারা ঘুষ দিতে পারে না। ঘুষ দিলে জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়।
ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক প্রকল্পে প্রথম পাঁচ বছর মূল সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হবে না। তবে কমিটমেন্ট চার্জ দিতে হবে। ২০২৭ সালের মে মাস থেকে পরবর্তী ১৫ বছরে সুদাসলে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও এডিবির ঋণে সাধারণত গ্রেস পিরিয়ড থাকে ১০ বছর।
ঋণের গ্রেস পিরিয়ডের বিষয়ে আহসান মনসুর বলেন, চীনা এই ঋণে গ্রেস পিরিয়ড ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কম। যেখানে বিশ্বব্যাংক বা অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রে দেখা যায় ৩০ থেকে ৪০ বছরও সময় পাওয়া যায়। সুতরাং চীনের ঋণ থেকে অন্য ঋণে খরচ কম পড়ে।
বাংলাদেশে চীনা ঋণে যেসব প্রকল্প হচ্ছে সেগুলোতে মিশ্র একটা অভিজ্ঞতা দেখা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আহসান মনসুর। তিনি বলেন, বিআরটি প্রকল্পে ব্যস্ত একটি সড়ক বছরের পর বছর ধরে প্রায় অচল করে রাখা হয়েছে। মানুষকে অত্যাচার করা হচ্ছে। কোনো বিধিবিধান নেই। উন্নত দেশেও তো বড় প্রকল্প নেওয়া হয়, কিন্তু জনগণের জন্য বিকল্প চিন্তাটা করে নেওয়া হয়। শুধু ঠিকাদার নয়, প্রকল্পগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, ব্যর্থতার দায়ভার তাঁদেরও আছে।
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নিতে হলে চিন্তাভাবনা করে নেওয়া উচিত উল্লেখ করে আহসান মনসুর আরও বলেন, ‘আমি রূপপুর, পদ্ম সেতুর রেল সংযোগ বা কক্সবাজার রেল প্রকল্পের মতো বিষয়গুলোর পক্ষে না। তবে ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়কটি নির্মাণ করা দরকার।’
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:নভেম্বর ২৭, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,