Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ডেঙ্গুর দায়ও জনগণের! (২০২১)

Share on Facebook


লেখক: মনোজ দে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক।

করোনাকালে হানা দিয়েছে ডেঙ্গু। আগস্টে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরেও স্বস্তির খবর নেই। থেমে থেমে বৃষ্টি, আর্দ্রতা আর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ ধরনের আবহাওয়া এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ। রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ঘরে ঘরে এখন ডেঙ্গু রোগী। এবার ডেঙ্গুতে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর এই আক্রমণ আগে দেখেননি তাঁরা। খুব দ্রুত অবস্থা গুরুতর হয়ে যাচ্ছে। সরকারি হিসাবেই এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বড় একটা অংশ শিশু। জীবন শুরুর আগেই থেমে যাচ্ছে ওদের জীবন। কার দোষে হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার হাসিখুশি শিশুরা?

দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ‘ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকেরা বলছেন, এবার মশাবাহিত এই ভাইরাস সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থতার হারও বেড়েছে। আগে যেখানে শকে যাওয়া শিশুদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশের মস্তিষ্ক ও হৃদ্‌যন্ত্রে জটিলতা হতো, এবার সেই হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে।’ বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর)

সাম্প্রতিক এক গবেষণাতেও উঠে এসেছে, এবারের ডেঙ্গু অন্যবারের চেয়ে ভয়ানক। খুব তাড়াতাড়ি রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। সেখানকার বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর চারটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর ধরনের একটি ডেনভি-৩-এ অধিকাংশ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১৯ সালেও ডেঙ্গুর এই ধরনের দাপট দেখা গিয়েছিল। সে বছরই বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। আক্রান্তও হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। আর এবার এরই মধ্যে যে সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছে, তাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চের রেকর্ড পেরিয়ে গেছে।

দুই মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের টাইমলাইন ভরে উঠছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রক্ত ও প্লাটিলেটের আর্তিতে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সন্তান কিংবা স্বজনকে ঘিরে মা-বাবা কিংবা বন্ধু-স্বজনদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটাছুটির শেষ নেই। পরিস্থিতি বিবেচনায় ছয়টি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর চারটিই চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। রোগী গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে জনগণের চিকিৎসাসেবা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ডেডিকেশন’ কতটা আর কতটা লোকদেখানো ঘোষণা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সন্তান কিংবা স্বজন আক্রান্ত হলে মানুষ তো আর ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্য বসে থাকবে না। বেসরকারি হাসপাতালের দিকেই তাঁরা ছুটছেন। করোনাকালে আর্থিক সংকটে পড়া মানুষদের জন্য ডেঙ্গু চিকিৎসার খরচ জোগানো রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে।
বিজ্ঞাপন

২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় দেশে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছর আফগানিস্তান থেকে শুরু করে পুরো দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল ডেঙ্গু। ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল জানাচ্ছে, এ বছরে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ তুলনামূলক বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৮১৬। যদিও বাস্তব চিত্র এর কয়েক গুণ। এসব রোগীর সিংহভাগই আবার ঢাকার।

ডেঙ্গু যে এবার ভোগাবে, তা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বছরের শুরুতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, গত বছরের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় মশার ঘনত্ব চার গুণ। বর্ষা মৌসুমের আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপে উঠে এসেছিল, ঢাকার চারটি এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব অনেক বেশি। অন্যদিকে আগস্ট মাসের শুরুর দিকে পরিচালিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার কয়েকটি এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব গত মহামারির চেয়ে বেশি।

ডেঙ্গুর একমাত্র বাহক এডিস মশা। ফলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ওপরই নির্ভর করবে কোন বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে। কীটতত্ত্ববিদেরা মনে করেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ খুব কঠিন কিছু নয়। অন্যান্য মশার চেয়ে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ সহজ। কারণ, এডিস মশা পাত্রে জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। এডিস মশা কীটনাশক সহনশীল। ফলে কীটনাশক দিয়ে এর নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।

ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটির ভূমিকা আসলে কী? ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর সনাতন পদ্ধতিতে কীটনাশক ছিটিয়ে মশা মারা আর দলবলসহ ভবনে ঢুকে জরিমানা করা—এ দুটি কাজই করছে দুই সিটি করপোরেশন। তাতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনা যে সম্ভব নয়, সেটি আগস্ট মাসের জরিপ থেকেই বোঝা যাচ্ছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও ঢাকার দুই মেয়র এবং সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হরহামেশাই দায়টা নাগরিকদের কাঁধে চাপাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, জনগণ ‘অসচেতন’, তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ বোধ হয় বিশ্বের বিরল দেশগুলোর একটি, যেখানে জনগণের দুর্ভোগ, দুর্দশার সময়ে অবলীলায় তাদের ঘাড়ে দায়টা চাপিয়ে দেওয়া যায়। দেশের কর্তৃপক্ষগুলো এটাকে একটা সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে। যে জনগণকে মেয়র ও সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অসচেতন বলছেন, তাঁরাই কিন্তু কন্যাশিশুর শিক্ষা, মাতৃমৃত্যু রোধ, টিকাদানসহ নানা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের নজির রেখে চলেছেন। ফলে দায় চাপিয়ে দায় এড়ানোর সহজ পথটা যৌক্তিক নয়। নাগরিকেরা যখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, শিশুরা যখন ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে, তখন তাঁদের কাছ থেকে সংবেদনশীল আচরণ প্রত্যাশিত।

২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারির সময়ে মশা নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মপরিকল্পনার কথা আমরা শুনেছিলাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কীটতত্ত্ববিদদের উড়িয়ে এনে তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছিল কলকাতা মডেল। দেশের কীটতত্ত্ববিদেরাও দিয়েছিলেন নানা পরামর্শ। এ প্রেক্ষাপটে মেয়রদের কাছ থেকে নানা অঙ্গীকার আর আশার বাণী আমরা শুনেছিলাম। সেবার বারবার যে শব্দটা উচ্চারিত হয়েছিল সেটা হলো, সমন্বিত কার্যক্রম। কিন্তু এক বছর পরই দেখা গেল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি আগে যেমন অপ্রস্তুত ছিল, এবারও ঠিক অপ্রস্তুত অবস্থাতেই রয়েছে। পুনর্মূষিকোভবের ধ্রুপদি এক দৃষ্টান্ত। মাঝখানে মশা মারার বাজেটটাই বোধ হয় একটু বেড়েছে।

ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে জরুরি সতর্কবার্তা হচ্ছে, কোনো জনপদে ডেঙ্গু ঢুকে পড়ার পথ আছে। কিন্তু সেটা বেরিয়ে যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এর একমাত্র বাহক এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতার দাবি করেছেন ঢাকার একজন মেয়র। গত ফেব্রুয়ারিতে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দাবি করেন, ডিসেম্বর (২০২০) পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের বছরগুলোর তুলনায় একেবারেই কম। এডিস মশার বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রমটা সফল হয়েছে।
বিজ্ঞাপন

ঢাকার একাংশের মেয়র যখন এডিস মশার বিরুদ্ধে সফলতার দাবি করছেন, ঠিক তখনই বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে গতবারের তুলনায় ঢাকায় মশার ঘনত্ব কয়েক গুণ বেশি। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আত্মতুষ্টি কি এ বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে ভূমিকা রাখেনি?

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে গাইডলাইন দিয়েছে, সেখানে সুস্পষ্ট করে বলা আছে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনসম্পৃক্ততার কথা। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সুনির্দিষ্ট কোন কাজটা করেছে সিটি করপোরেশন? তাহলে দায়টা কেন চাপাবে জনগণের ঘাড়ে?

মনোজ দে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৯, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ