ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একদিকে ঋণখেলাপি, ডাকাত ও মাফিয়াদের রক্ষা করে, অন্যদিকে জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ ও কণ্ঠরোধ করে বলে অভিযোগ করেছে বামপন্থী তিনটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। তারা বলেছে, এই আইন দিয়ে বর্তমান সরকার তার গদি রক্ষা করতে পারবে না।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক আল কাদেরী এসব কথা বলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও এই আইনে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তি, বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর সাত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হওয়া ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার এবং লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের ওপর হওয়া নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী বলেন, একটি রাষ্ট্র যত অগণতান্ত্রিক হতে থাকে, তার আইনগুলো তত কালো হতে থাকে। রাষ্ট্র যতই নিপীড়ক ও অত্যাচারী হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে কথা বলতে আমরা ভয় পাই না। ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা তাদের গদি রক্ষা করার জন্য ভারত রক্ষা আইন করেছিল, কিন্তু রক্ষা পায়নি। ষাটের দশকে পাকিস্তানিরাও পাকিস্তান সেইফটি অ্যাক্ট করেছিল, কিন্তু আইয়ুব খানের গদি রক্ষা হয়নি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যত আইনই করুক না কেন, তাদেরও গদি রক্ষা হবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটা টালমাটাল আইনে পরিণত হবে। এই আইন একদিকে ঋণখেলাপি, ডাকাত ও মাফিয়াদের রক্ষা করে, অন্যদিকে জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ করে কণ্ঠরোধ করে।
আল কাদেরী অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের কথা বললেও এখন দেশের জনগণের পেটে ভাত নেই, মুখে বাক নেই। লেখক মুশতাক আহমেদকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হয়েছে। জেলফেরত কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে৷ এই ধরনের আইন দিয়ে বর্তমান সরকার পার পাবে না। অবিলম্বে সাত ছাত্রনেতার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজা দেওয়া বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলকেও মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে অংশ নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজউল্লাহ বলেন, রাতের আঁধারে ভোটচুরির মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকার কখনোই মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই বর্তমান সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য এই আইন বাতিল করতে হবে। পর্যালোচনা নয়, বাকস্বাধীনতা হরণ করা এই আইন অবশ্যই বাতিল করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শোভন রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে মানুষ মানুষের মতো বাঁচতে চায়। কথা বলতে চায়। অথচ সরকার কাউকে কথা বলতে দিতে চায় না—বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘নাগরিক ঐক্যে যোগ দিন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা মানুষ। মানুষের মতো সম্মান ও অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। কথা বলতে চাই। এটা মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার সেটিও বলতে দেবে না।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, চালের দাম যদি ৭০ টাকা হয়ে যায়, গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা হয়, বাজারে আগুন লেগে যায়, তবু সরকারের বিরুদ্ধে এখন কোনো কথা বলা যাবে না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘স্বাধীনভাবে জন্মেছি। স্বাধীনভাবে বাঁচব। প্রয়োজনে স্বাধীনভাবে মরব। কেউ জোর করে কণ্ঠ রোধ করতে পারবে না। কথা বলার কারণে যদি লেখক মুশতাকের মতো মৃত্যু হয়, তবু আমি বলা ছাড়ব না।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মিছিল করার ঘোষণা দিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অনেক রক্ত, জীবন ও মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। স্বাধীনতা নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলতে পারে কিন্তু এই স্বাধীনতাকে আমরা সম্মান জানাতে চাই। এ জন্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা রাজপথে মিছিল করব।’
নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় এ আয়োজনে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মমিনুল ইসলাম ও মোফাখখারুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মার্চ ১৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,