রাশিয়া, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু করেছে ভারত। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও রুপিতে বাণিজ্যের পরামর্শ দিয়েছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাড়ছে ডলারের বিনিময় হার। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এই বাস্তবতায় অনেক দেশ কারেন্সি সোয়াপ বা মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। চলতি বছর অনেক দেশ এই চেষ্টা করেছে।
ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি রাশিয়া, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু করেছে ভারত। আরও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য বাণিজ্য সংগঠন ও ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি দেশটির বাণিজ্য সংগঠন ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, আরও বেশিসংখ্যক দেশকে এই বাণিজ্যপ্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। ভারতের কয়েকটি ব্যাংক ওই সব দেশের ব্যাংকে বিশেষ ভস্ত্রো হিসাব খুলেছে। সেই হিসাবের মাধ্যমেই চলছে আর্থিক লেনদেন।
রাশিয়ার বৃহত্তম দুই ব্যাংক ভস্ত্রো হিসাব খুলে লেনদেনের অনুমোদন পেয়েছে। ওই তিন দেশের ব্যাংকেও ভস্ত্রো হিসাব খুলেছে ভারতের কয়েকটি ব্যাংক। এই পদ্ধতিতে ভারতীয় আমদানি সংস্থাগুলো রুপিতে বিল মেটাবে, যা জমা পড়বে সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যাংকের ভস্ত্রো অ্যাকাউন্টে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর শত শত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারে লেনদেন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে রাশিয়া। তবে এই পরিস্থিতিকেও অনেক দেশ সুবিধাজনকভাবে কাজে লাগিয়েছে। একদিকে তারা রাশিয়ার কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে তেল কিনেছে, অন্যদিকে রুপিতে লেনদেন করেছে রাশিয়ার সঙ্গে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, শীর্ষ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মহলের অনুমান, ডলারের নিরিখে রুপির উত্থান-পতনের অস্থিরতা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।
কোনো দেশের মুদ্রাকে তখনই ‘আন্তর্জাতিক’ বলা হয়, যখন তার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লেনদেন করে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে মার্কিন ডলার। এরপরই আছে ইউরোপের মুদ্রা ইউরো। তবে ভারতীয় মুদ্রা অতীতে আন্তর্জাতিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ওমান ভারতীয় টাকা গ্রহণ করত। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে কীভাবে ভারতীয় মুদ্রায় আন্তর্জাতিক লেনদেন হবে, তার কিছু নিয়ম জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থায়ীভাবে ভারতীয় রুপির গুরুত্ব আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি করতে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। ভারতকে বেশি করে উৎপাদনশীল হয়ে উঠতে হবে। শুরুতে ভারতীয় রুপি সবার কাছে মান্যতা না পেলেও ধীরে ধীরে ভারতের উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো রুপিকে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা রাশিয়ার নজির দেন। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস নিতে হলে ইউরোপের দেশগুলোকে ইউরো বা ডলার দিলে হবে না; দিতে হবে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল। ফলে রুবলের মান বৃদ্ধি পায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিন এ দাবি জানাতে পেরেছেন কারণ, ইউরোপের দেশগুলোতে ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস যায় রাশিয়া থেকে। একইভাবে ভারতকে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে যেসব দেশ ভারতের পণ্যের ওপর নির্ভরশীল, তারা রুপি ব্যবহারে আগ্রহী বা বাধ্য হয়।
এর আগে জানা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে যেন রুপিতে বাণিজ্য করা যায়, সে লক্ষ্যে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। ভারতে আমদানি বা ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এ দেশের ব্যবসায়ীরা যাতে রুপিতেই মূল্য পরিশোধ করতে পারেন বা নিতে পারেন, সে জন্য যাবতীয় আইনি বাধাও দূর করেছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,