ডলার–সংকটের কারণে অনেক পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কমানোর ফলও মিলছে। চলতি বছরের জুন মাস থেকে জুলাই মাসে আমদানি ঋণপত্র খোলার হার কমেছে ৩১ শতাংশ।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জুলাই মাসে দেশে মোট আমদানি হয়েছে ৫৪৭ কোটি ডলারের পণ্য, যা জুন মাসের তুলনায় ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। জুন মাসে আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলারের। তবে জুন মাসে অবশ্য মে মাসের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র ৭ শতাংশ বেশি খোলা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, এপ্রিল মাস থেকে আমদানি কমতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে মার্চের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। মে মাসেও এপ্রিলের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। মে মাসে ঋণপত্র খোলা হয় ৭৪৪ কোটি ডলারের।
এদিকে দেশে চার মাস ধরে ডলারের সংকট চলছে। কারণ, আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমেছে। সংকট সামলাতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সীমিত করেছে সরকার। আর আমদানি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৭টি পণ্য আমদানিতে ব্যাংকঋণ বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি ডলারের ওপর চাপ কমাতে ব্যাংকগুলোর গাড়ি কেনা বন্ধ করা হয়েছে।
ভ্রমণ, শিক্ষা, চিকিৎসায় ডলার খরচ বেড়েছে ৩৩%
লেখক: সানাউল্লাহ সাকিব
ডলার–সংকটের এই সময়েও আমদানির বাইরে বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বেড়ে গেছে। করোনার ধাক্কা কাটার পর বিদেশে ঘোরাঘুরিও বেড়েছে, এতে বেড়েছে ভ্রমণ খরচ। আবার বিদেশে চিকিৎসা ও শিক্ষার পেছনেও খরচ বেড়েছে। ফলে এসব খাতে ডলার খরচ বেড়ে গেছে। আবার প্রযুক্তি ও তথ্যসেবা কিনতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে এখন। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব খাতে বাংলাদেশের যে ডলার খরচ হয়েছিল, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তার চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি ডলার খরচ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে এই হিসাব শুধু কার্ড ও বৈধভাবে যাঁরা পাসপোর্ট এনডোর্স করে বিদেশে ডলার নিয়ে খরচ করছেন, সেই তথ্য অনুযায়ী। এর বাইরে বিদেশে যাওয়ার সময় পকেটে করে যে ডলার নিয়ে যাওয়া হয়, তার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সেবার জন্য বিদেশে ৯২৪ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে এই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৩৪ কোটি ডলারে। ফলে বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে বিদেশে ডলারে খরচ আগের বছরের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক দেশের ভিসা বন্ধ ছিল। এ কারণে শিক্ষার্থীরাও আটকে পড়েছিলেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়াও সীমিত হয়ে পড়েছিল। ২০২১ সালের মধ্যভাগ থেকে বিশ্বের অনেক দেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়। ফলে মানুষের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের আগ্রহ বেড়ে যায়। আবার অনেকের আটকে থাকা প্রয়োজনীয় ভ্রমণও শুরু হয়। সব মিলিয়ে তাই বিদায়ী অর্থবছরে ডলারের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এ কারণে ডলারের ওপর চাপও বেড়েছে।’
বাংলাদেশের নাগরিকেরা ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশে ভ্রমণের পেছনে খরচ করেন ৩৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। বিদায়ী অর্থবছরের একই সময়ে যা বেড়ে হয় ৮৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশের নাগরিকেরা এখন মালদ্বীপ, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে নিয়মিত ঘুরতে যাচ্ছেন। অনেকের পরিবার দীর্ঘ সময় এসব ভ্রমণে থাকছেন। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের পাশাপাশি খোলাবাজারেও ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত কয়েক মাসে ডলারের দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা হয়েছে। আর খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১০ টাকায় উঠেছে।
কারওয়ান বাজারের ক্যামিয়ার ট্রাভেলসের পরিচালক ইশতিয়াক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর অনেক দেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার পর বিমানের টিকিট বিক্রি বেড়েছে। অনেকেই এখন ঘুরতে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে যাওয়া-আসার টিকিট বিক্রি বেড়েছে।
মেডিএইডারের সহপ্রতিষ্ঠাতা সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই ভারতে যাচ্ছেন। থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন ১৫ শতাংশ এবং অন্য দেশে যাচ্ছেন ৫ শতাংশ মানুষ।’
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ৩১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,