লেখক:ইয়াজিম পলাশ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। সেই আদেশেই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। এতে বলা হয়, ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এই আদেশের ফলে অনেক দেশের ‘মাথায় হঠাৎ করে বাজ পড়েছে’। অনেক দেশেই দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিতে ধসের।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০ দেশে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে।’
তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপটি এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতির পর মানবিক সাহায্য বৃদ্ধি পেয়েছে ও সুদানের মতো বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের ঘটনা চলছে।
সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো র্যাচেল বনিফিল্ড আল-জাজিরাকে বলেছেন, মার্কিন সহায়তা বন্ধের বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে, সব প্রোগ্রাম ভালো কাজ করে না এবং বন্ধ করা যেতে পারে।
তবে অনেকে বলছেন, উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ হলে বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশ বিপাকে পড়বে। তবে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে কোন দেশ, তা বিশ্লেষণ করা যাক-
২০২৩ সালে বিদেশি সহায়তাপ্রাপ্ত শীর্ষ দেশগুলো
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০ দেশে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা এবং ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপ্রাপ্ত শীর্ষ দেশগুলো হলো- ইউক্রেন, ইসরায়েল, ইথিওপিয়া, জর্ডান, মিশর, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, সিরিয়া, কেনিয়া, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, কলম্বিয়া, মোজাম্বিক, তাঞ্জানিয়া, লেবানন, ইরাক এবং বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কোন দেশ কতটুকু পায়
২০২৩ সালে মার্কিন সহায়তার একটি বড় অংশ অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছিল, যা প্রায় ৫৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) থেকে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা পেয়েছে জর্ডান। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) থেকে দেশটি অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে ৭৭০ মিলিয়ন ডলার। এরপর পর্যায়ক্রমে ইয়েমেন এবং আফগানিস্তান ৩৫৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন এবং ৩৩২ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফেডারেল বিভাগ যেমন পেন্টাগন এবং ইউএসএআইডি-এর মতো সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। যেখানে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। এরপর স্টেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলার এবং ট্রেজারি থেকে ২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের তহবিল রয়েছে।
এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে তার মিত্রদের সামরিক সহায়তায় ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি ইসরায়েল এবং মিশর পেয়েছে।
বাংলাদেশ কতটা সহায়তা পেত
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক সহায়তা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশকে প্রতিবছর দেয়া সহায়তার পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। এর আগের বছরগুলোতে আড়াইশো থেকে তিনশো মিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
ইউনাইটেড স্টেটস্ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএইড এর তথ্য বলছে, এই অর্থ যেসব খাতে ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থা, পরিবেশ ও জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার জন্যও বরাদ্দ ছিল এতে।
অন্যান্য বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি কার্যক্রমের অর্থায়ন বজায় থাকবে, ইউএসইডের বরাতে এমনটি জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
কর্মসূচির ব্যাপ্তি ও বিপুল কর্মীসংখ্যার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি ও অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে পরিচিত ব্র্যাক। বাংলাদেশ ভিত্তিক সংস্থাটির কাজ রয়েছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর বাংলাদেশসহ মোট চারটি দেশে নয়টি কর্মসূচি স্থগিত করেছে সংস্থাটি।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘বাংলাদেশে মার্কিন অর্থায়নের ছয়টি প্রকল্প স্থগিত করেছেন তারা। এর মধ্যে তিনটি প্রোজেক্ট সরাসরি আমরা বাস্তবায়ন করি, তিনটি অন্য এনজিও দিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছিল।’
যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল আরেকটি উন্নয়ন সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘তাদের দুইটি প্রকল্প আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কয়েকজনকে হোম অফিস করতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সবার মধ্যে।’
সূত্র: আল-জাজিরা এবং বিবিসি।
সূত্র: সমকাল।
তারিখ: ফেব্রুয়ারী ০১, ২০২৫
রেটিং করুনঃ ,