তুশনিম। বাংলা শব্দ। এখন একজন উদয়মান ব্যবসায়ীর প্রিয় স্ত্রী। বাংলাদেশের মেয়েদের তুলনায় অনেক উন্নত ধরণের গায়ের রঙ। ঠিক ধব ধবে সাদা বলা চলে না। কাঁচা হলুদের রঙের মত। আলোতে মনে হয় হাত, আংগুল আর মুখো মন্ডল থেকে একটা অতি মূল্যবান পাথরের মত আলোক বিচ্যুরিত হচ্ছে। ছিপ ছিপ লম্বা। তবে লম্বা বলা চলে না। পরীর বর্ণনায়, পরীর গাঁথুনিতে সুন্দরী।
তুসনিম
“অতি বড় সুন্দরী পায় না বর।” এতদিনের এই প্রচলিত কথাটিকে ধাক্কা মেরে তুশনিম পেয়েছে একজন সুদর্শন, আদর্শবান বর। অর্থশালীও বটে।
অতি বড় সুন্দরী মেয়েরা কিশোরী থেকেই একজন সুদর্শন, আদর্শবান বর আশা করে। বর যেন অর্থশালীও হয়। সব সময় নিজেকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখার একটা সখ। অলংকার, দামি পোশাকের শখ আঠাঁর মত লেগে থাকে। আর সবই যেন পূরণ হয় প্রিয় বরে হাত ধরে।
তুশনিম। অতি বড় সুন্দরী হয়েও সুন্দরী মেয়েদের মত সুদর্শন, আদর্শবান। অর্থশালীও বর মনে লালন করে নি। বাবা- মা। ছোট একটা বোন। এই নিয়ে তুশনিমের পরিবার। বাবা এমন একটি চাকুরী করত যে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে তুশনিমকে বাসা পর্যন্ত রিক্সায় বা কখনো পায়ে হেটে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ যেতে হত। বাসায় আসতে হত।
সমাজের বা পাড়ার কতকগুলি শকুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুদর্শন, লম্বা আদর্শবান, সুসাস্থ্যের এক পুরুষকে বেছে নিয়েছিল। নিজে একটা নিরাপত্তার বলেয়ে থাকার জন্য। হাতে হাত রেখে। মনে মন রেখে অনেক কথা বলা হয়েছিল। অনেক পণ। শপথ।
একদিন সব ছেড়ে, বাবা- মা, ছোট একটা বোন। বড় বড় দাঁত ওয়ালা কাঠ কাটার একটা করাত দিয়ে যেন কলিজাটা কেটে গেল। কুষ্টিয়ার বাড়িটির প্রতি ইটের গাঁথনিতে যে সৃত্মী গাঁথা মহকাব্য। সব ছেড়ে আসতে হল। ধানমন্ডির লেকে ধারে একটি ফ্লাটের পাঁচ তলার প্রিয় বরের বাসায়। যেখানে হয়তো থাকতে হবে। বহুকাল। সাথে ছেড়ে আসতে হল হাতে হাত রেখে। মনে মন রেখে যার সাথে শপথ করা হয়েছি। তাঁকেও।
এই পাঁচ বছরে তুশনিমের দিন ভালোই কেটেছে। কখনো উড়োজাহাজে এ দেশ থেকে সে দেশে ঘুরেছে। ঢাকাতে আর রিক্সায় উঠা হয়না। বড় বড় শপিং মলে। এর মধ্যে গয়না বদল হয়েছে, গাড়ি বদল হয়েছে অনেক বার।
ছেলে এখন তিন বছরে। আর বারো মাস বা আরও কিছু সময় কম বা বেশি হলে ছেলে স্কুলে যাবে।
পশ্চিম পাশে বেড রুমের কাছে যে বেলকুনিটা। এই বেলকুনিটা একটা বড় রহস্যের ধারায় কে যেন একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে গত পাঁচ বছর ধরে।
তুশনিম ঘরে থাকলে মনে হয় সে একটি ত্রিকোণের মধ্যে বন্দী। প্রিয় সন্তান, প্রিয় স্বামী আর নিজে।
রহস্যের ধারায় একটি চাদর দিয়ে ঢাকা বেলকুনিটাতে একা এক আসলে মনে হয় সে একটি চতুর্ভূজের মধ্যে বন্দী। প্রিয় সন্তান, প্রিয় স্বামী, নিজে আর যার সাথে হাতে হাত রেখে। মনে মন রেখে যার সাথে শপথ করা হয়েছিল।
তুশনিম বুঝেছে এ সবই জ্যামিতির সূত্র। একটি ত্রিভূজ, একটি চতুর্ভূজ। কিন্তু তুশনিম কখনই জ্যামিতির সূত্রগুলিকে ভাংগতে চায় নি। আবার দৃঢ় ভাবে জ্যামিতির সূত্রকে ভেংগে চুরমার করতে চেয়েছে।
আমাদের জীবনকে কখনও কখনও জ্যামিতির সূত্র বাঁধা না গেলেও জ্যামিতির সূত্রের মধ্যে কিছু কাল আটকিয়ে থাকতে হয।
বরের কাছে আসার পর তুশনিমের আর কখনো রিক্সায় উঠা হয় নি্। ফুটপাতে বসে প্রিয় ফুচকা খাওয়া হয় নি্। রান্না ঘর বাবুর্চির দখলে বলে আর কখনই ডাল ভর্তা খাওয়া হয় নি। দামি, বেশ দামি জীপে করে বরের সাথে, সন্তানের সাথে কুষ্টিয়ার বাড়িটিতে যাওয়া হলেও অনেকের সাথে দেখা হলেও কথা হলেও হাতে হাত রেখে, মনে মন রেখে যার সাথে শপথ সেই মানুষটাকে দূর। যেন বহু দূর থেকে দেখা গেলেও কোন দিন আর কথা বলা হয় নি্।
রেটিং করুনঃ ,