Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

জ্বালানিতে অশনিসংকেত (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: হাসনাইন ইমতিয়াজ।

সাত বছর আগেই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। তেল-গ্যাসসহ সাগরের খনিজসম্পদ সম্পর্কে ধারণা পেতে জরিপ চালাতে আন্তর্জাতিক দরপত্র কয়েকবার বাতিল হয় প্রভাবশালীদের চাপে। এখনও বঙ্গোপসাগরে জরিপ কাজ শুরু হয়নি। যদিও ভারত ও মিয়ানমার তাদের সীমানায় গ্যাস আবিস্কার করেছে। দেশে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম হু-হু করে বাড়ছে। এই খাতের বিভিন্ন প্রকল্প বছরের পর বছর আটকে থাকছে। জ্বালানি সংকট আগামীতে আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্নেষকরা। তারা মনে করছেন, জ্বালানি খাতে অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে।

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের একাধিক উদ্যোগ বারবার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আটকে গেছে। কয়েকটি প্রকল্প ঝুলে আছে দশক ধরে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জ্বালানি খাতে। ঘাটতি মেটাতে ব্যয়বহুল এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করেও সংকট মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। যদিও জ্বালানি বিভাগ দাবি করছে, সাগরের সম্পদ আহরণে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর জ্বালানি খাত উন্নয়নে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহল। পছন্দের কোম্পানি কাজ না পাওয়ায় বারবার দরপত্র বাতিল হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশ এগিয়ে গেলেও তেল-গ্যাস আবিস্কারে পিছিয়ে পড়েছে জ্বালানি খাত।

এক যুগ আগে দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ঘাটতি ভয়ানক পর্যায়ে ছিল। বিদ্যুতের লোডশেডিং আর গ্যাসের স্বল্পতায় বাসাবাড়ি থেকে শিল্পকারখানা- সবকিছু জেরবার অবস্থায় পৌঁছেছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নতির জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাফল্য আসে। কিন্তু সার্বিক জ্বালানি খাতের বলার মতো অগ্রগতি দেখা যায়নি বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করেন।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। স্থলভাগে নতুন গ্যাসক্ষেত্র মিলছে না। কয়লা উত্তোলনেও কোনো উদ্যোগ নেই। সমুদ্রই এখন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার বড় ভরসা। কিন্তু সেখানে অনুসন্ধান কার্যক্রম এখনও শুরুই হয়নি। সরকার মূলত তাকিয়ে আছে আমদানির দিকে। এখন বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম বাড়ছে হু-হু করে। তাই আমদানিনির্ভরতা অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর পুরো নির্ভরশীল হওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে আমদানিনির্ভরতা কমাতে দেশে তেল-গ্যাস সম্পদের অনুসন্ধান বাড়াতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি খাতে লুটেরাদের দাপট অনেক বেশি। এখানে ব্যক্তি বিশেষের প্রভাবে প্রকল্প বাতিল হয়, কোনোটা স্থবির হয়ে থাকে। সরকার শক্তভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গতি আসবে না বলে তিনি মনে করেন।

জানতে চাইলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সমকালকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্বালানি খাত এগোতে পারেনি, এটা সত্য। আগের টিম (জ্বালানি খাতের শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা) যথাযথভাবে জ্বালানি খাতকে এগিয়ে নিতে পারেননি। এখন ভালো টিম হয়েছে। অনেক কাজ হচ্ছে। আগের ঘাটতি পুষিয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে সুফল মিলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জ্বালানি খাতের বর্তমান পরিস্থিতি: বাংলাদেশের জ্বালানি খাত মূলত গ্যাসনির্ভর। এর বাইরে প্রচলিত জ্বালানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি তেল, এলপিজি, কয়লা ইত্যাদি। জ্বালানি তেল পুরোটাই আমদানিনির্ভর। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এতদিন দেশীয় খনির কয়লাই ছিল একমাত্র উৎস। গত বছর আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এলপিজির কাঁচামালের ৯৮ শতাংশই আমদানি করা হয়।

পেট্রোবাংলার মতে, দেশে গ্যাসের মজুদ রয়েছে ৩৫.৮০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য বলে ধরা হয় ২৮.৪৭ টিসিএফ। ১৫ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। অবশিষ্ট গ্যাস আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে।

পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে গ্যাস ব্যবহার হয় গড়ে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশ, শিল্প কারখানায় ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বাসাবাড়িতে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, শিল্পকারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সিএনজি স্টেশনে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ব্যবহার হয়।

ঘাটতি মেটাতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ৮০-৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে বছরে ১০-১২ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এ খাতে তিন হাজার থেকে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। চাহিদা যত বাড়বে, ভর্তুকি তত বাড়বে।

বাংলাদেশে আবিস্কৃৃত পাঁচটি কয়লাক্ষেত্রে প্রায় ৭৯৬ কোটি টন কয়লা মজুদ আছে। এর মধ্যে শুধু বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে।

দেশের জ্বালানির আরেকটি বড় উৎস তেল। প্রতি বছর এ চাহিদা বৃদ্ধির হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ। দেশে বছরে ৫৫ থেকে ৬০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়।

কমছে দেশি গ্যাসের উৎপাদন: কয়েক বছর আগে দেশের দৈনিক গ্যাস উৎপাদন বেড়ে ২৭০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছেছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা, বিশেষ করে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অচলাবস্থার কারণে বর্তমানে তা কমে ২৪০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। দেশি কোম্পানিগুলোর অধীনে থাকা ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কমে গেছে। দেশের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাসে দু’বছর আগেও প্রতিদিন ৫৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। এখন মিলছে ৩৯ কোটি ঘনফুট। কমেছে শেভরনের মালিকানাধীন জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদনও।

জ্বালানি বিভাগের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২৩০ কোটি ঘনফুটে নেমে আসতে পারে। বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত না হলে ২০২২-২৩ সালে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে দিনে উৎপাদন ১৮.৪ কোটি ঘনফুট কমতে পারে। ২৩-২৪ সালে দৈনিক উৎপাদন ৪৩.৫ কোটি ঘনফুট কমে যেতে পারে। এ সময় শেভরনের অধিকাংশ গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও সাত বছরেও বসেনি কম্প্রেসর: তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ধরে রাখতে ২০১৪ সালে সাতটি ওয়েলহেড কম্প্রেসর বসানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (বিজিএফসিএল)। এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু একাধিকবার দরপত্র ডেকেও এখনও কেনাকাটা শুরু করতে পারেনি বিজিএফসিএল। অভিযোগ রয়েছে, পছন্দ মতো কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতেই কালক্ষেপণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় সাতটি কম্প্র্রেসর বসানোর দরপত্র ডাকা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯১০ কোটি টাকা। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল দৈনিক ছয় কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি করা। দরপত্রে সাতটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হয় যুক্তরাষ্ট্রের টেকনো স্ট্রিম এনার্জি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের ঠিকানা ভুয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র জামানতও জালিয়াতি করেছে। সেই দরপত্র বাতিল করে আবার গত বছরের নভেম্বরে অয়েলহেড আবার দরপত্র আহ্বান করে। কম্প্রেসর না বসানোয় দিন দিন উৎপাদন কমছে তিতাসের।

ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট ঝুলে আছে ১১ বছর: দেশের জ্বালানি তেল পুরোটাই আমদানিনির্ভর। চাহিদার বড় অংশ পরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয়। অপরিশোধিত তেল আনা হয় কম। কারণ, দেশের একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির শোধন সক্ষমতা বার্ষিক ১৫ লাখ টন। পরিশোধিত তেল বেশি আনায় ব্যয় বেশি হয়। তাই সরকার ১৯৬৮ সালে স্থাপিত ইআরএলের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। ৩০ লাখ টন তেল পরিশোধন ক্ষমতার ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট নামের একটি প্রকল্প ২০১০ সালে গ্রহণ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রথম ইউনিট স্থাপন করেছে ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপ। দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে তাদের।

গত ১১ বছরও এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়নি। উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে সংশোধন করা হয়েছে ১০ বার। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সংশোধিত ডিপিপিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, দেশের একাধিক বেসরকারি কোম্পানি বড় আকারের তেল শোধনাগার বসাতে চায়। তাদের সুযোগ দিতেই এই প্রকল্প নানা অজুহাতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল বারবার প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্নিষ্টদের তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার জন্য কারও চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। তবে কোনো চাপ আছে বলে শোনেননি। তিনি জানান, তারা দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু করবেন।

মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে: বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ভালো সাড়া না মেলায় সরকার পুরো সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ বা মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সার্ভের কাজ করার জন্য ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। দরপত্র জমা পড়ে পাঁচটি। দরপত্র মূল্যায়নে নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্কামবার্জার কনসোর্টিয়াম যোগ্য বলে নির্বাচিত হয়। এরপর পেট্রোবাংলা প্রস্তাব চূড়ান্ত করে চুক্তিপত্র অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে জ্বালানি বিভাগে ফাইল পাঠায়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া হঠাৎ বাতিল করে আবার দরপত্র আহ্বানের জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয় জ্বালানি বিভাগ থেকে। অভিযোগ রয়েছে, পছন্দের কোম্পানি কাজ না পাওয়ায় প্রভাবশালী মহলের চাপে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। পরে আবারও পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হলে এবারও পাঁচটি প্রস্তাব জমা পড়ে। এবারও দর প্রক্রিয়ায় টিজিএস-স্কামবার্জার কনসোর্টিয়াম প্রথম হয়। এরপর চুক্তির প্রস্তাবনা জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সেবারও দরপত্র প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি বলে আপত্তি তোলা হয়। পরে দরপত্র মূল্যায়নের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় ৯ মাস পর আইন মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে পাঠায়। এর পরও দীর্ঘদিন এই প্রস্তাবটি আটকে রাখা হয়। অবশেষে ২০১৯ সালের এপ্রিলে এটি মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পায়। ২০২০ সালের মার্চে টিজিএস ও স্কামবার্জার কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। তবে এখনও জরিপ কাজ শুরু হয়নি।

জরিপ জাহাজ (সার্ভে ভেসেল) ক্রয়: মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে নিয়ে এ জটিলতার মধ্যে নিজেরাই জরিপ পরিচালনার পরিকল্পনা করে জ্বালানি বিভাগ। এ জন্য এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর আওতায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক জাহাজ কেনার সিদ্ধান্তত হয়। এরপর সার্ভে জাহাজ ভাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কোনোটাই আলোর মুখ দেখেনি।

ব্লু ইকোনমি সেল: সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বিশাল সমুদ্র সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান, গবেষণা ও উত্তোলনে তদারকির জন্য ২০১৭ সালে ৫ জানুয়ারি ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করা হয়। এ সেলের জনবল নিয়োগ এখনও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় কর্মকর্তাসহ বর্তমানে মোট জনবল ১০ জন। কয়েকটি বৈঠক ছাড়া এ শাখার তেমন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি।

স্থলভাগের এলএনজি টার্মিনাল: গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে সাগরে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে গ্যাস আনা হচ্ছে। সামনে এলএনজির চাহিদা আরও বাড়বে। আর আবহাওয়া খারাপ হলে সাগরে ভাসমান টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। তাই স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিন বছর আগে দরপত্র ডেকেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থেমে আছে। কারণ দেশের জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতের একটি কোম্পানি ওই দরপত্র প্রক্রিয়ার প্রাথমিক তালিকায় পেছনের দিকে পড়ে। এরপর থেকেই দরপত্র প্রক্রিয়া থমকে যায়।

আটকে আছে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণও: দেশের এলপিজি (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস) চাহিদা মেটাতে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে এক লাখ টন ধারণ ক্ষমতার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ প্রকল্প এখনও প্রাথমিক ধাপ পেরোতে পারেনি। জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেসরকারি ব্যবসায়ীরা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছেন।

গ্যাস পাবে না জেনেও বিনিয়োগ, শতকোটি টাকা গচ্চা: অগভীর সাগরের ১৬ নম্বর ব্লকে কাজ করত অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি সান্তোস। তারা মগনামায় একটি কূপ খন করে গ্যাস পায়নি। এই কূপ থেকে দুই হাজার ২০০ মিটার উত্তর-পশ্চিমে আরেকটি কূপ খনন করতে চায়। এই কূপ খননে ২০১৬ সালে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সকে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয় সান্তোস। বাপেক্সের ব্যয় ধরা হয় ২৩০ কোটি টাকা। বলা হয়, এই কূপে এক হাজার ৬০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস রয়েছে। উত্তোলনযোগ্য গ্যাস রয়েছে ৭৩৬ বিসিএফ। তাদের প্রস্তাব মূল্যায়নে সাত সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে বাপেক্স। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, সান্তোস মগনামা-২ গ্যাসের মজুতের ভুল হিসাব দিয়েছে। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস নেই। মগনামা কূপে গ্যাস পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে মাত্র ২২শ মিটার দূরে আরেকটি কূপে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখানে কূপ খনন করতে গেলে সব মিলিয়ে বাপেক্সকে সুদসহ ২৬২ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। কারিগরি কমিটির রিপোর্টের পরও ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ বোর্ড সভায় বাপেক্সের পরিচালনা পর্ষদ সান্তোসের সঙ্গে যৌথভাবে মগনামা-২ কূপ খননের প্রস্তাব অনুমোদন করে। কূপ খননের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় সান্তোস জানায়, এখানে গ্যাস নেই। গ্যাস না পেলেও উচ্চ মহলের চাপে সান্তোসকে ১২৯ কোটি টাকা দিয়েছে বাপেক্স। আরও ১০১ কোটি টাকা পেতে দীর্ঘদিন ধরে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ অক্টোবর ১০, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ