বাংলাদেশের বিক্ষোভের সময় জাতিসংঘের লোগোসংবলিত যেসব যান ব্যবহৃত হয়েছে, তাতে বিশ্ব সংস্থাটির লোগো ভুলে মোছা হয়নি। পরে সেই লোগোগুলো মুছে দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান। তিনি বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ধ্বংসের শিকার কয়েকটি স্থান বিদেশি কূটনীতিকদের ঘুরিয়ে দেখান। এরপর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত সোমবার নিউইয়র্কে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, জাতিসংঘের লোগো শুধু শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত থাকার সময় ব্যবহারের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলাকালে জাতিসংঘের লোগোসংবলিত যানের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশে বিক্ষোভের সময় জাতিসংঘের যান ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতিসংঘের কোনো যান ব্যবহৃত হচ্ছে না। আমি এখানে বিষয়টি পরিষ্কার করি। এগুলো (যান) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। লোগোটা মোছা হয়নি, ভুলে। সেই লোগোগুলো এখন মুছে দেওয়া হয়েছে।’
প্রসংগত, ২১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় মন্ত্রীকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে বিক্ষোভ চলার মধ্যে সংস্থাটির লোগোসংবলিত হেলিকপ্টার ও ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে, যা প্রচারিত হয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদে। এই সংবাদ প্রচারের পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ দপ্তর থেকে ঢাকায় বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি কূটনীতিকদের মেট্রোরেল, সেতু ভবন ও বিটিভি ভবনের ধ্বংসযজ্ঞ দেখানো হয়েছে। তাঁরা এসব ধ্বংসযজ্ঞ দেখে স্তম্ভিত, আমি নিজেও স্তম্ভিত। তাঁরা বলেছেন, দিস ইজ শেম। তাঁরা আমাদের পাশে থাকবেন। এই পরিদর্শনে ৪৯ দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২৩ জন ছিলেন রাষ্ট্রদূত।’
বিদেশি কূটনীতিকদের পরিদর্শনের সময় জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন কি না, জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী দেশে নেই। এটা আমাকে চেক করে বলতে হবে।’
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত পরিদর্শনে অংশ নিতে জাতিসংঘ দুজনকে মনোনীত করেছিল। তাঁদের মধ্যে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে কূটনীতিকদের বহর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেন তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এদিকে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভে পাকিস্তানের লোকজন সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভে সেখানকার পাকিস্তানি কমিউনিটির সহায়তা নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে।’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পাকিস্তানের লোকজনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হবে কি না, জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটা হচ্ছে লোকাল ইস্যু। লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রবাসী পাকিস্তানি। তারা পাকিস্তানের ভেতরে থাকে না। আজ পাকিস্তান হাইকমিশনার আমাদের সঙ্গে ছিলেন।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা আর সংঘাতে গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। শান্তি স্থাপিত হয়েছে। যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। আমি বিটিভিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি, কীভাবে তারা ঢুকল। তখন তারা বলেছে সেদিন পুলিশের গুলি করার কোনো আদেশ ছিল না। পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু পুলিশ গুলি ছোড়েনি। কারণ, পুলিশের ওপর অনুমতি ছিল না বলে তারা গুলি ছুড়তে পারেনি। সেদিন হয়তো গুলি ছোড়ার অনুমতি থাকলে বিটিভি জ্বলত না। অনেকগুলো ফ্যাক্টর এখানে যুক্ত।’
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ২৪,২০২৪
রেটিং করুনঃ ,