আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর হামলায় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। গত রোববার ড্রোনের মাধ্যমে ওই হামলা চালানো হয়। ২০১১ সালে জঙ্গি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর জাওয়াহিরির মৃত্যুর ঘটনা জঙ্গি সংগঠনটির জন্য একটি বড় ধাক্কা। খবর আল–জাজিরার।
আয়মান আল জাওয়াহিরি মিসরীয় বংশোদ্ভূত একজন শল্যচিকিৎসক ছিলেন। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আড়াই কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলায় তিনি সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ আছে। ওই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। রোববার সিআইএর অভিযানে জাওয়াহিরি নিহতের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
গতকাল সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে জাওয়াহিরিকে হত্যার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘জাওয়াহিরি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা চালিয়েছিলেন। এই সন্ত্রাসী নেতার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলায় তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এ ঘটনায় স্বস্তি পাবে বলে আমার মনে হয়।’
কানাডা
জাওয়াহিরি নিহতের ঘটনায় টুইট করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় বিশ্ব আরও নিরাপদ স্থানে পরিণত হলো। জাস্টিন ট্রুডো আরও বলেছেন, সন্ত্রাসীদের হুমকি মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগীদের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে কানাডা। শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিজ দেশ ও বিশ্বের নিরাপত্তা বহাল রাখা হবে।
অস্ট্রেলিয়া
এ হত্যার ঘটনার পর পার্লামেন্টে ভাষণ দেন অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা তুলে ধরে এ জন্য জাওয়াহিরিকে দায়ী করেন তিনি। এরপর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করেন তিনি।
আফগানিস্তানে নিয়োজিত অস্ট্রেলিয়ান সেনাদের স্মৃতিচারণা করেন অ্যালবানিজ। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, অনেক রক্ত ঝরেছে। বিশেষ করে সেখানে যেসব অস্ট্রেলিয়ান সেনারা কাজ করেছেন, তাঁদের অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন।
সৌদি আরব
জাওয়াহিরি নিহত হওয়ার পর সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সউদকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে অনেক ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করেছিল সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। জাওয়াহিরি এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা ছিলেন।
তালেবান
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের প্রায় এক বছর পার হতে যাচ্ছে। দেশটিতে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার বর্ষপূর্তি হচ্ছে এ মাসেই। কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তালেবান সরকার। তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এই অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন। এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় আল–কায়েদার শীর্ষ নেতা নিহত
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র হামলায় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। গত রোববার ড্রোনের মাধ্যমে ওই হামলা চালানো হয়। খবর বিবিসির
গতকাল সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে জাওয়াহিরির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, জাওয়াহিরি মার্কিন নাগরিকদের ওপর হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা চালিয়েছিলেন। এই সন্ত্রাসী নেতার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলার সময় আল–কায়েদার এই নেতা কাবুলে একটি বাড়ির ব্যালকনিতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ড্রোন থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে জাওয়াহিরির মৃত্যু হয়। ওই বাড়িতে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও ছিলেন। তবে হামলায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলাকে আন্তর্জাতিক নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবানের এক মুখপাত্র। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তার মতে, ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবান যে চুক্তি করেছিল, কাবুলে জাওয়াহিরির উপস্থিতিতে তা লঙ্ঘন হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, অনেক বছর ধরে জাওয়াহিরি লুকিয়ে ছিলেন। তাঁকে খুঁজে বের করে হত্যার অভিযানটি ছিল সন্ত্রাস দমন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘সতর্ক সাধনা ও নিরবচ্ছিন্ন’ কাজের ফল।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার আগপর্যন্ত জাওয়াহিরি পাকিস্তানের উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকায় কিংবা আফগানিস্তানে আছেন বলে বিভিন্ন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা অভিযানের বিস্তারিত এসব তথ্য দিয়েছেন—
বেশ কয়েক বছর ধরে মার্কিন সরকার একটি চক্র (নেটওয়ার্ক) সম্পর্কে সতর্ক ছিল। তাদের ধারণা ছিল, চক্রটি জাওয়াহিরিকে সমর্থন করে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া পর এক বছর ধরে কর্মকর্তারা দেশটিতে আল-কায়েদার উপস্থিতির ইঙ্গিত পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
চলতি বছর কর্মকর্তারা স্ত্রী-কন্যাসহ জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের শনাক্ত করেন। তাঁদের কাবুলে ‘একটি সেফ হাউসে’ স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে একই জায়গায় জাওয়াহিরিকেও শনাক্ত করা হয়।
কাবুলের ওই ‘সেফ হাউসে’ তাঁরা সঠিকভাবেই জাওয়াহিরিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন—কয়েক মাস ধরে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এমন আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ে। তাঁরা এপ্রিলের শুরুর দিকে প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এবং পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ব্রিফ করতে শুরু করেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযানের বিষয়টি জানাতে আমরা একাধিক স্বাধীন উৎসের মাধ্যমে অভিযানের সময় তাদের আচরণ ও চলাফেরা সম্পর্কে জানতে সক্ষম হই।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যখনই একবার জাওয়াহিরি কাবুলের ‘সেফ হাউসে’ আসেন, সেখান থেকে তাঁর চলে যাওয়ার বিষয়টি আর জানতে পারেননি কর্মকর্তারা। পরে তাঁকে কয়েকবার তাঁরা বেলকনিতে দেখতে পান। শেষ পর্যন্ত সেখানেই তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সেফ হাউসটির’ নির্মাণকাঠামো ও এর ধরন খতিয়ে দেখেন কর্মকর্তারা। এর বাসিন্দাদের তথ্যও যাচাই-বাছাই করে দেখেন। এসবের উদ্দেশ্য ছিল ভবনের কাঠামোগত ক্ষতি এড়িয়ে বেসামরিক নাগরিক ও জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি কমিয়ে রেখে যাতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অভিযানটি চালানো যায়, তা নিশ্চিত করা।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ০২, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,