জসিমউদ্দিন
(১ জানুয়ারি ১৯০৩ – ১৪ মার্চ ১৯৭৬)
– স্বপন ভট্টাচার্য
ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে আনসারউদ্দিন মোল্লা এবং আমিনা খাতুনের পুত্র মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন মোল্লার জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯০৩ সালে। পরবর্তী কালে তিনিই পল্লীকবি জসীমউদ্দীন নামে পরিচিত হলেন। বাবা আনসারউদ্দিন মোল্লা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তাঁর পিতার বাড়ি ছিল ফরিদপুর জেলার গোবিন্দপুরে।
ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুলে জসিমউদ্দিনের শিক্ষার শুরু। পরে সেখান থেকে চলে যান ফরিদপুর জেলা স্কুলে এবং সেখান থেকেই ১৯২১ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। পরবর্তী শিক্ষা কলকাতায়। ১৯২৯ সালে পাস করলেন বিএ এবং ১৯৩১ সালে এমএ পরীক্ষায় পাস করলেন। এরই মধ্যে ঘটল এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯২৮ সালে যখন তিনি স্নাতক শ্রেণির ছাত্র তখন তাঁর লেখা ‘কবর’ কবিতাটি প্রবেশিকা পরীক্ষার পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হল।
১৯৩১ সাল থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত তিনি ছিলেন দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকারী। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে পূর্ববঙ্গ গীতিকা সংগ্রহ করতেন তিনি। এরই মধ্যে ১৯৩৩ সালে কাজ শুরু করলেন দীনেশ চন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণার সহকারী হিসেবে। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার লেকচারার পদে যোগ দিলেন। আবার ১৯৪৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে দিয়ে যোগ দিলেন তৎকালীন বাংলা সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে। ১৯৬২ সালে সেখান থেকে অবসর নিলেন। সেই সময় তিনি ছিলেন ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে।
বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার ধারা তাঁর হাতেই পুষ্টি লাভ করেছিল। তাঁর ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ এবং ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তিনি যে শুধু কবিই ছিলেন তাই নয়, তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার এবং ঔপন্যাসিক। গান রচনাতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আব্বাসউদ্দিনের সহযোগিতায় তিনি বহু লোকসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি কিছু ইসলামী সঙ্গীত এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশাত্মবোধক গানও রচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক মানুষ। এবং তিনি ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সমর্থক। তিনি তাঁর ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’-এর ভূমিকায় লিখেছেন, ‘”আমাদের ফরিদপুর অঞ্চলে বহু চাষী মুসলমান ও নমঃশূদ্রের বাস। তাহাদের মাঝে সামান্য ঘটনা লইয়া প্রায়ই বিবাদের সূত্রপাত হয়। এইসব বিবাদে ধনী হিন্দু-মুসলমানেরা উৎসাহ দিয়া তাহাদিগকে সর্বনাশের পথে আগাইয়া দেয়। মহাজন ও জমিদারদের মধ্যে কোন জাতিভেদ নাই। শোষণকারীরা সকলেই এক জাতের।”
১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁকে ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুরে তাঁর দাদির কবরের পাশে কবর দেওয়া হয়।
গোবিন্দপুরে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষে জসিম মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
তথ্য: উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে।
সূত্র: সংগৃহিত
তারিখ: জানুয়ারী ০১, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,