এখন তরুণ প্রজন্মের হাতে অনেক শিক্ষনীয় সরঞ্জাম যেমন উন্নত প্রযুক্তি সম্পূর্ণ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে নানান ভাবে নতুন নতুন তথ্যাদি সংগ্রহের মধ্য দিয়ে অনেক জ্ঞানার্জন যে করছে তাতে কোন বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই তার সাথে অবশ্য জ্ঞানার্জনের নামে অপজ্ঞানও অর্জন করছেন যা নিজের ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
সময় বা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া জ্ঞানার্জনও সম্ভব নয়, উন্নত প্রযুক্তির কল্যানে যে জ্ঞানার্জন তা হাতের নাগালে আসার কারণে ধরা যাক লন্ডন শহরের আর ঢাকা শহরের জ্ঞানার্জনের ব্যবধানটি অনেক কমে এসেছে তার কারণ হচ্ছে দুই শহরের শিক্ষার্থীরা প্রায় একই ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। তার প্রমানও মিলছে বেশ অনেক উন্নত আবিষ্কারে, সৃষ্টিতে বাংলাদেশী তরুণদের নাম।
ইদানিং কালের উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর যে জ্ঞানার্জন তা অনেকটাই রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গানের কথায় – চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে। উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর যে জ্ঞানার্জন হচ্ছে তা চোখের আলো দিয়ে দেখা চোখের বাহিরের জগৎ এর জ্ঞানার্জন। এই শিক্ষা বা জ্ঞানার্জন দিয়ে মানুষের হৃদয়, মন, অন্তরকে পড়া যাচ্ছে বা হৃদয়, মন, অন্তরে প্রবেশ করা কি যাচ্ছে বা যায় !! উত্তরটি হৃদয়, মন, অন্তরে প্রবেশ করা যায় না, অন্তরকে দেখা যায় না, বুঝা যায় না। আবারও সেই রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গানের কথায় – অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহি রে॥ আসলেই উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর যে জ্ঞানার্জন হচ্ছে তা দিয়ে অন্তর দেখার কোন শিক্ষা, ক্ষমতা বা জ্ঞান নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত গানে বলেই দিয়েছেন অন্তর দেখতে হলে আলোক প্রয়োজন যা হচ্ছে মানবিক আলো। আজ তরুণ প্রজন্ম অনেক জ্ঞানার্জন করছেন এমন কি তাদের পূর্ব পুরুষদের শিক্ষা-দিক্ষায় অতিক্রম করে যাচ্ছে বলে দাবিও রাখছেন কিন্তু তাদের অন্তরের আলো অনেক ক্ষীণ পর্যায়ে নেমে এসেছে বলে তারা প্রকৃত শিক্ষার্জন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দিনে দিনে।
উন্নত প্রযুক্তি ও অতি প্রতিযোগীতার কারণে তারা একটি বিশাল মাঠে সমাবেত হয়েছে আজ, যে মাঠের পানির স্তর ক্রমশঃ নিচে নেমে যাচ্ছে এবং ফলাফল ধীরে ধীরে আমাদের সামনে বেশ ষ্পষ্ট হয়ে উঠছে।বিশাল মাঠটির একাংশের বা বেশী ভাগ অংশের মধ্যে বড় বড় ফাঁটল বা ধস দেখা দেওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আমার ধারণা উন্নত প্রযুক্তি ও অতি প্রতিযোগীতা তরুণ প্রজন্মকে যে চলার পথটি আকৃষ্ট করছে সহজ ভাবে বললে বলা যায় তা হচ্ছে ‘ সর্ট কাট’ খুব দ্রুত সময়ে একটি লক্ষ্যে পৌঁছিয়ে যাওয়া, ফলে তারা হারিয়ে ফেলছে প্রকৃত বা সঠিক পথে পথ চলার পথটি। সাধনার যে পথ, ধৈর্যের পথ ধরে যে দীর্ঘ কালের পথে হাঁটতে হয়, ফলাফল বা সাফল্য যদিও বা থাকে তা যে নাগালের বাইরে অথবা প্রত্যাশা ছাড়াই লক্ষ্য স্থির করে দুঃসাহসিক পথের যাত্রীর হওয়ার মানসিকতা এখন আর অনেকের মধ্যে নেই।
উন্নত প্রযুক্তির উপর ভর করে এখন যে জ্ঞানার্জন, শিক্ষা বা জ্ঞানার্জন এই দীক্ষা বা শিক্ষা দিয়ে মানুষের হৃদয়, মন, অন্তরকে পড়া যায় না; সেই সাথে হৃদয়, মন, অন্তরে প্রবেশও করা যায় না, উন্নত শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক শিক্ষা আজ বড় প্রয়োজন।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার যে কাঠামো তাতে করে হঠাৎ করে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ধস নেমে যেতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
চোখের আলো দিয়ে সেই সাথে অন্তর দেখার যে আলো এই দুই আলো অর্জনের পথে যারা যাত্রা শুরু করেছে, ধৈর্যের পথ ধরে যে দীর্ঘ কালের পথে হাঁটতে শুরু করেছে তাদেরই জ্ঞানের স্তর দিনে দিনে উন্নত হওয়ারই কথা।
নোট: ছবি নেট থেকে সংগ্রিত।
তারিখ: সেপ্টম্ববর ২৩, ২০১৭
রেটিং করুনঃ ,
আপনার সাথে একমত না হওয়ার কোন কারণ দেখতে পারছি না।
বিজ্ঞান আমাদের দিচ্ছে বেগ, কেড়ে নিচ্ছে আবেগ।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মানবিক বিষয় তুলে ধরা আজ বড়ই প্রয়োজন।
শুভ কামনা।
বর্তমান শিক্ষা গ্রহনের পথ যদি সর্টকাট ভিত্তিক হয় তবে সে শিক্ষা দিয়ে ভঙ্গুর কিছু ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায় না।
সু-চিন্তিত মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সমসাময়িক পেক্ষাপটে লিখা, কিন্তু মন্তব্য নেই তবে লেখাটিতে সঠিক চিত্র তুলে ধরেছেন।