কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত যার আবির্ভাব খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০-২৮৩ অব্দে। তিনি ইতিহাসে পরিচিত চাণক্য নামে। তিনি একজন প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক ও রাজ-উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁর অর্থশাস্ত্র নামক গ্রন্থে সমাজ, রাজনীতি, জীবন ও চর্যা বিষয়ক যে সব বাণী বা উক্তিগুলো রয়েছে সেগুলির প্রাসঙ্গিকতা আজও সমধিক। শুধু তাই নয় চাণক্যের তত্ত্বগুলি চিরায়ত অর্থনীতির বিকাশ লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলেই সেগুলি চাণক্য সূত্র নামেই পরিচিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চাণক্যের পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁকে ভারতের মেকিয়াভেলি বলা হয়। প্রাচীন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির অধ্যাপক চাণক্য পরবর্তীকালে মৌর্য্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের উত্থানে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। চাণক্যের এই শ্লোকগুলো আজকের জীবনে খুব গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর হতে পারে — এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই । চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য ও তার পুত্র বিন্দুসারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাহলে এসো বন্ধুরা , কথা না বাড়িয়ে দেখে নিই কৌটিল্য চাণক্যের বিখ্যাত উক্তি ও নীতি বাণীগুলি :-
চাণক্য বাণী ( Chanakya Bani Bengali ) :-
১.”গুণহীন মানুষ যদি উচ্চ বংশেও জন্মায় তাতে কিছু আসে যায় না। নীচকুলে জন্মেও যদি কেউ শাস্ত্রজ্ঞ হয়,
তবে দেবতারাও তাঁকে সম্মান করেন।“-চাণক্য
২.”নানাভাবে শিক্ষা পেলেও দুর্জন সাধু হয় না,
নিমগাছ যেমন আমূল জলসিক্ত করে কিংবা দুধে ভিজিয়ে রাখলেও কখনও মধুর হয় না।“-চাণক্য
৩.”বিদ্বান সকল গুণের আধার,অজ্ঞ সকল দোষের আকর।
তাই হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক কাম্য।“-চাণক্য
৪.“যেইসব শিক্ষার্থীরা দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে নষ্ট করে আর প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ঘুমানো পছন্দ করে, সেইসব শিক্ষার্থীরা জীবনে সফল হতে পারেনা এবং তারা বেশিরভাগ কাজ ঠিক মতো করতে অক্ষম হয়।” – চাণক্য
৫.“একজন পন্ডিত ব্যক্তিও ঘোর দুঃখ-কষ্টের স্বীকার হতে পারেন যদি সে, একজন মূর্খ ব্যক্তিকে উপদেশ দেন অথবা কোনো দুষ্ট স্ত্রীর ভরন পোষণে লিপ্ত হন কিংবা কোনো দুঃখী ব্যক্তির সাথে দৈনন্দিন সম্পর্ক স্থাপন করেন।“
৬.“ অলস শিক্ষার্থীরা ঠিক ততটাই জ্ঞান অর্জন করতে পারে, যতটা তাদের পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজন।“-চাণক্য
৭.”গুরু শিষ্যকে যদি একটি অক্ষরও শিক্ষা দেন,তবে পৃথিবীতে এমন কোনও জিনিস নেই,
যা দিয়ে সেই শিষ্য গুরুর ঋণ শোধ করতে পারে।“
৮.”যারা পরিশ্রমী,তাদের জন্যে কোনকিছুই জয় করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্যে কোন দেশই বিদেশ নয়।” – চাণক্য
৯.“সদগুণ সম্পন্ন একজন পুত্র,অযোগ্য শত শত পুত্রের চেয়ে অনেক শ্রেয়। কারণ রাতের আকাশে একটিমাত্র চাঁদই কিন্তু আকাশের সমস্ত অন্ধকারকে দূর করতে পারে।“
১০.“দুর্জন ব্যক্তি বিদ্যান হলেও যেকোনো মূল্যে তাকে এড়িয়ে চলা উচিত,কারন মণিভূষিত বিষাক্ত সাপও অধিক ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে।“
চাণক্য নীতি ( Chanakya Niti Bengali Quotes ) :-
১১.”বিষের পাত্র থেকে অমৃত,অপবিত্র স্থান থেকে স্বর্ণ,সবচেয়ে নীচ ব্যক্তির কাছ থেকেও জ্ঞান এবং নীচ বংশের পরিবার থেকেও গুণবতী স্ত্রী গ্রহণ করা উচিত।”
১২.”সাপ নিষ্ঠুর খলও নিষ্ঠুর,
কিন্তু সাপের চেয়ে খল বেশি নিষ্ঠুর।
সাপকে মন্ত্র বা ওষধি দিয়ে বশ করা যায়,
কিন্তু খলকে কে বশ করতে পারে?” – চাণক্য
১৩.”পুত্রকে যারা পড়ান না,সেই পিতামাতা তার শত্রু।
হাঁসদের মধ্যে বক যেমন শোভা পায় না,
সভার মধ্যে সেই মূর্খও তেমনি শোভা পায় না।“
১৪.”পাঁচ বছর বয়স অবধি পুত্রদের লালন করবে,
দশ বছর অবধি তাদের চালনা করবে,
ষোল বছরে পড়লে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মত আচরণ করবে।“
১৫.”তিনটি বিষয়ে সন্তোষ বিধেয়:নিজের পত্নীতে,ভোজনে এবং ধনে। কিন্তু অধ্যয়ন,জপ, আর দান এই তিন বিষয়ে যেন কোনও সন্তোষ না থাকে।“
১৬.”উৎসবে,বিপদে,দুর্ভিক্ষে,শত্রুর সঙ্গে সংগ্রামকালে,
রাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকে,সে-ই প্রকৃত বন্ধু।“-চাণক্য
১৭.”বিদ্যার চেয়ে বন্ধু নাই,ব্যাধির চেয়ে শত্রু নাই। সন্তানের চেয়ে স্নেহপাত্র নাই,দৈবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বল নাই।“
১৮.”শাস্ত্র অনন্ত,বিদ্যাও প্রচুর।
সময় অল্প অথচ বিঘ্ন অনেক।
তাই যা সারভূত তারই চর্চা করা উচিত।
হাঁস যেমন জল-মিশ্রিত দুধ থেকে
শুধু দুধটুকুই তুলে নেয়,তেমনি।“
১৯.“চঞ্চল মন যেকোনো বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার পিছনে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।“
২০.“দুর্জনের সঙ্গ ত্যাগ করো, সাধু সঙ্গে ভজন করো। দিনরাত সর্বদা পুণ্য কর্মে লিপ্ত থাকো এবং সর্বদা এই জগতের অনিত্যতাকে স্মরণে রেখো।“
চানক্যর বাণী ( Chanakya Quotes ) :-
২১.”দুষ্টা স্ত্রী,প্রবঞ্চক বন্ধু,
দুর্মুখ ভৃত্য এবং সর্প-গৃহে বাস মৃত্যুর দ্বার,
এ-বিষয়ে সংশয় নেই।“-চাণক্য
২২.”একটিমাত্র বৃক্ষে লাগা আগুনের দ্বারা যেমন সম্পূর্ণ বন ভস্মে পরিণত হতে পারে তেমনি একজন কুপুত্রের দ্বারাও সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংস হতে পারে।“
২৩.”অন্তঃসার শূন্যদের উপদেশ দিয়ে কিছু ফল হয় না, মলয়-পর্বতের সংসর্গে বাঁশ চন্দনে পরিণত হয় না।“
২৪.”একটিমাত্র পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন সুবাসিত হয়,তেমনি একটি সুপুত্রের দ্বারা সমস্ত কুল ধন্য হয়।“
২৫.”পরস্ত্রীকে যে মায়ের মত দেখে, অন্যের জিনিসকে যে মূল্যহীন মনে করে এবং সকল জীবকে যে নিজের মত মনে করে, সেই যথার্থ জ্ঞানী।“-চাণক্য
২৬.”আড়ালে কাজের বিঘ্ন ঘটায়, কিন্তু সামনে
ভাল কথা বলে, যার উপরে মধু কিন্তু অন্তরে বিষ, তাকে পরিত্যাগ করা উচিত।“
২৭.”রাতের ভূষণ চাঁদ,
নারীর ভূষণ পতি,
পৃথিবীর ভূষণ রাজা,
কিন্তু বিদ্যা সবার ভূষণ।“-চাণক্য
২৮.”দারিদ্র্য, রোগ, দুঃখ, বন্ধন এবং বিপদ- সব কিছুই মানুষ নিজেরই অপরাধরূপ বৃক্ষের ফল।“
২৯.”যারা রূপযৌবনসম্পন্ন এবং উচ্চকুলজাত
হয়েও বিদ্যাহীন,তাঁরা সুবাসহীন পলাশ ফুলের মত বেমানান।“
৩০.”সত্যবাক্য দুর্লভ,
হিতকারী-পুত্র দুর্লভ,
সমমনস্কা-পত্নী দুর্লভ,
প্রিয়স্বজনও তেমনি দুর্লভ।“-চাণক্য
৩১.”বইয়ে থাকা বিদ্যা,
পরের হাতে থাকা ধন একইরকম।
প্রয়োজন কালে তা বিদ্যাই নয়,ধনই নয়।“-চাণক্য
৩২.”শাস্ত্র অনন্ত,বিদ্যাও প্রচুর।
সময় অল্প অথচ বিঘ্ন অনেক।
তাই যা সারভূত তারই চর্চা করা উচিত।
হাঁস যেমন জল-মিশ্রিত দুধ থেকে শুধু দুধটুকুই তুলে নেয়,তেমনি।“
৩৩.”স্বভাবত কেউই আমাদের বন্ধু কিংবা শত্রু হয়না, একমাত্র কাজের দ্বারাই মানুষ আমাদের বন্ধু কিংবা শত্রু হয়।“-চাণক্য
৩৪.”বিষের পাত্র থেকে অমৃত,অপবিত্র স্থান থেকে স্বর্ণ,সবচেয়ে নীচ ব্যক্তির কাছ থেকেও জ্ঞান এবং নীচ বংশের পরিবার থেকেও গুণবতী স্ত্রী গ্রহণ করা।“
৩৫.”দুই ধরনের হিংসুক প্রাণী আছে, যথা সাপ ও সাপের মতোই ক্রূর স্বভাব বিশিষ্ট মানুষ। এরমধ্যে সাপের মতো ক্রূর স্বভাব বিশিষ্ট মানুষ অধিক ভয়ানক।“
৩৬.”নখযুক্ত প্রাণী,শিংওয়ালা জন্তু,অস্ত্রধারী ব্যক্তি এবং রাজনীতিবীদকে কখনই বিশ্বাস করতে নেই।“
৩৭.“সাধুগণ সকল জীবকেই তাঁর কৃপা প্রদান করে, এমনকি যাদের সদগুণ নেই তাদেরও। ঠিক যেমন সমাজচ্যুত ব্যক্তির ঘরে আলো বিতরণ করতে চাঁদও বিরত থাকেনা।“
৩৮.“অতিরিক্ত স্নেহ করার ফলে,সন্তানের অনেক দোষ জন্মায়, কিন্তু কঠোরতার দ্বারা তার সুন্দর চরিত্র গড়ে ওঠে। তাই সন্তান ও শিষ্যের প্রতি কমল নয় কঠোর হও।“
৩৯.”বুদ্ধিমান ব্যক্তির এই ৫টি জায়গায় যাওয়া উচিত নয়-ক.যেখানে রোজগারের কোনো সুযোগ নেই।
খ.যেখানকার মানুষদের মধ্যে কোনো ভয়ডর নেই।
গ.যেখানকার মানুষদের মধ্যে কোনো লজ্জাবোধ নেই।
ঘ.যেখানে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি বসবাস করেনা।
ঙ.যেখানে মানুষ দান-ধর্মের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে।” -চাণক্য
৪০.”অবহেলায় কর্মনাশ হয়,
যথেচ্ছ ভোজনে কুলনাশ হয়,
যাঞ্চায় সম্মান-নাশ হয়,
দারিদ্র্যে বুদ্ধিনাশ হয়।“
৪১.”মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়।
এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।“-চাণক্য
৪২.”আপদের নিশ্চিত পথ হল ইন্দ্রিয়গুলির অসংযম, তাদের জয় করা হল সম্পদের পথ, যার যেটি ঈপ্সিত সে সেই পথেই যায়।“-চাণক্য
চাণক্য সূত্র ( Chanakya Sutra ) :-
৪৩.” রাজ্যের উন্নতি ইন্দ্রিগুলোর ওপরে বিজয় প্রাপ্ত করার মধ্যে আছে।“
৪৪.” ৪৭.”ধৈর্যহীন ব্যক্তির বর্তমান আর ভবিষ্যত বলে কিছু থাকে না।“
৪৫.”বিপত্তির সময় স্নেহ প্রদর্শনকারী ব্যক্তিই মিত্র হয়।“
৪৬.”বৃদ্ধি আর বিনাশ নিজের হাতে থাকে!“
৪৮.”চঞ্চল চিত্তের ব্যক্তিদের কার্যসিদ্ধি হয় না!“
৪৯.”কঠিন সময়ে বুদ্ধিই পথ দেখায়!“
৫০.”নিজের দূর্বলতা কাউকে জানাবেন না!“
৫১.”শলা পরামর্শের সময় কোনো জেদ করা উচিত নয়!“
৫২.”শত্রু দেশের গুপ্তচরেদের ওপরে সর্বদা দৃষ্টি রাখা উচিত!“
৫৩.”যার ওপরে বিশ্বাস থাকে না…তাকে কখনো বিশ্বাস করা উচিত নয়!“
৫৪.”আত্মরক্ষা হলে তবেই সকলের রক্ষা হয়।“
৫৫.”অহংকারী হলে গোপন রহস্য শত্রু জেনে ফেলে।“
৫৬.”সর্বদা শত্রুর প্রচেষ্টার ওপরে দৃষ্টি রাখুন।“
৫৭.”যে কোনো সম্পর্ক উদ্দেশ্যের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে।“
৫৮.”অল্প ভোজন করাই স্বাস্থ্য লাভ হয়!“
৫৯.”বার্ধক্যে বেড়ে ওঠা ছোট রোগকেও উপেক্ষা করবেন না!“
৬০.”প্রতিবেশী দেশের সাথে সন্ধি হলেও তার গতিবিধিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।“অলস ব্যক্তির কিছুই প্রাপ্ত হয় না।“
সূত্র: নেট থেকে সংগৃহিত – https://preronajibon.com/
তারিখ: আগষ্ট ১৯,২০২১
রেটিং করুনঃ ,