” তাহার পর অনেকদিন হইয়া গিয়াছে; শাঁখারীপুকুরে নাল ফুলের বংশের পর বংশ কত আসিয়াছে, চলিয়া গিয়াছে। চক্রবর্তীদের ফাঁকা মাঠে সীতানাথ মুখুয্যে নতুন কলমের বাগান বসাইল এবং সে সব গাছ আবার বুড়া হইতেও চলিল। কত ভিটায় নতুন গৃহস্থ বসিল। কত জনশূন্য হইয়া গেল, কত গোলোক চক্রবর্তী, ব্রজ চক্রবর্তী মরিয়া হাজিয়া গেল, ইছামতীর চলোর্মি-চঞ্চল স্বচ্ছ জলধারা অনন্ত কালপ্রবাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়া কুটার মত, ঢেউয়ের ফেনার মত, গ্রামের নীলকুঠির কত জন্সন টম্সন সাহেব, কত মজুরদারকে কোথায় ভাসাইয়া লইয়া গেল! ” – ” পথের পাঁচালী” উপন্যাস থেকে – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ ( নভেম্বর ০১) বাংলা উপন্যাসে জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দুতে উন্নত কারীদের অন্যতম ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্য দিনে আমাদের অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
উল্লেখ্য যে, বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্রের পর বিশ শতকের তিনের দশক শুরুর প্রাকলগ্নে বাংলা উপন্যাসের প্রবহমান ধারায় তিনি যুক্ত হন। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯২৯ সালে পথের পাঁচালী নিয়ে উপন্যাসের ভুবনে তার প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। এরপর তাকে আর ফিরে ডাকাতে হয়নি। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও কয়েকটি ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন।
বিভূতিভূষণ ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-সুরারিপুর গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাকপুর গ্রামে। তার পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা মৃণালিনী দেবী। পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত।
প্রকৃতির সাথে যিনি মিশে গিয়ে আমাদেরকেও যিনি প্রকৃতির প্রেমে ডুবে থাকতে বলেছিলেন সেই ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫০ সালের আজকের দিনে তিনি বিহারে (বর্তমানে ঝাড়খন্ড) মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
তারিখ: নভেম্বর ০১, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,