করোনা মহামারিতে দেশ থেকে দেশ আর মানুষ থেকে মানুষে বিচ্ছিন্নতা যখন বাস্তবতা, তখন গোটা পৃথিবীকে এক ছাদের নিচে একত্রিত করে, হাসি-আনন্দ, গৌরবগাথার হাজারো মুহূর্ত উপহার দিয়ে অবশেষে বিদায় নিল টোকিও অলিম্পিক ২০২০। আর টোকিওর শেষবেলায় ঘোষিত হলো নতুন ভোরের প্রতিধ্বনি, তিন বছর পর ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ অনুষ্ঠিত হবে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে।
সাধারণত প্রতিটি বৈশ্বিক আসর শেষ হয় ‘এ যাবৎকালের সেরা’ তকমা নিয়ে। তবে টোকিও গেমসকে ‘মোস্ট চ্যালেঞ্জিং’ বলে অভিহিত করেছেন ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি-আইওসির প্রধান থমাস বাখ। এক বছর আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রথমে স্থগিত ও পরে এ বছর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আইওসি। কিন্তু করোনার প্রকোপ রয়ে যাওয়ায় গেমস আয়োজন নিয়ে প্রবল বিরোধিতা দেখা দেয় আয়োজক দেশ জাপানে। যার পরিপ্রেক্ষিতে টোকিও আসর বাতিলের শঙ্কা তৈরি হয় বেশ কয়েকবার। তবে আইওসি ও টোকিও আয়োজকরা ঝুঁকি নিয়ে গেমস আয়োজনে অনড় থাকেন। জাপানে স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা মাথায় নিয়ে এক এক করে ১৭ দিন পূর্ণ হয় রোববার।
সবক’টি পদকের লড়াই শেষ হওয়ার পর টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয় সমাপনী অনুষ্ঠানের। ৬৮ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটিতে উদ্বোধনীর মতো সমাপনীতেও কোনো দর্শক ছিলেন না। উপরন্তু অন্যান্য বার সমাপ্তিতে সব দেশের প্রায় সব অ্যাথলেট উপস্থিত থাকলেও করোনার কারণে এবার যার খেলা যখন শেষ হয়েছে তখনই চলে যাওয়ায় উপস্থিতিও ছিল স্বল্প।
যারা হাজির ছিলেন, তাদের সামনে রেখে আইওসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যে কঠিন সময়ে আমরা বাস করছি, সে সময়ে আপনারা গোটা বিশ্বকে সবচেয়ে দামি উপহার আশা জুগিয়েছেন। আমি এখন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অলিম্পিক আসরের সমাপ্তি ঘোষণা করছি।
করোনাকালের অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছিলেন ২০০টির বেশি দেশের ১০ হাজারের বেশি অ্যাথলেট। ৩৯টি স্বর্ণ, ৪১টি রৌপ্য ও ৩৩টি ব্রোঞ্জসহ সর্বোচ্চ ১১৩টি পদক জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩৮টি স্বর্ণসহ ৮৮টি পদক নিয়ে দ্বিতীয় চীন, আর ২৭টি স্বর্ণসহ ৫৮টি পদক নিয়ে তৃতীয় স্থানে স্বাগতিক জাপান। প্রতিবারের মতো এবারের অলিম্পিকেও তৈরি হয়েছে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা আর আবেগে ঘেরা নানান রঙের মুহূর্ত। থম্পসন, ড্রেসেল, ম্যাকিওন, লিসা, সিফানদের রেকর্ডের পাশাপাশি চমক দেখিয়েছেন জ্যাকবস, হাফনাউইরা। একটি পদক দু’জনে ভাগাভাগি করে নেওয়া, স্বর্ণজয়ীকে ব্রোঞ্জজয়ী কর্তৃক কোলে তুলে নেওয়ার মতো ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দৃশ্যেরও দেখা মিলেছে এই আসরে। মানসিক অবসাদে সিমোন বাইলসের সরে যাওয়া কিংবা অলিম্পিক ভিলেজে থেকে করোনা পজিটিভ হওয়ায় স্বপ্নভঙ্গের মতো দুঃখজনক দৃশ্যেরও অবতারণা হয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে জয় হয়েছে গেমসেরই। যে গেমসের প্রতিটি মুহূর্তই লড়েছে করোনাভাইরাসের সঙ্গে।
টোকিওর সমাপ্তিতে শুরু হয়েছে প্যারিস ২০২৪’র যাত্রা। আইওসি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অলিম্পিকের পতাকা বুঝে নিয়েছেন প্যারিসের মেয়র অ্যান হিডালগো, যে মুহূর্তটি লাইভ ভিডিওতে দেখে উচ্ছ্বাসে বরণ করে নিয়েছে প্যারিসের মানুষ। গুডবাই টোকিও, ওয়েলকাম প্যারিস।
সূত্র: সমকাল
তারিখ: আগষ্ট ০৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,